Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সারে ভর্তুকি চাষির অ্যাকাউন্টে

কৃষি দফতর সূত্রের খবর, আর সার উৎপাদক সংস্থাকে ভর্তুকি দেবে না সরকার। তার বদলে কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই সরাসরি ভর্তুকির টাকা পাঠিয়ে দেবে। অনেকের মতেই, এর আসল উদ্দেশ্য হল চাষিদের ব্যাঙ্কমুখো করা। যে সব প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও ব্যাঙ্ক নেই, সেখানে চাষিরা সমস্যায় পড়বেন।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৭ ০২:০২
Share: Save:

এ বার থেকে সার কিনতে গেলেও চাই আধার কার্ড। লাগবে আঙুলের ছাপও। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, আর সার উৎপাদক সংস্থাকে ভর্তুকি দেবে না সরকার। তার বদলে কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই সরাসরি ভর্তুকির টাকা পাঠিয়ে দেবে। অনেকের মতেই, এর আসল উদ্দেশ্য হল চাষিদের ব্যাঙ্কমুখো করা। যে সব প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও ব্যাঙ্ক নেই, সেখানে চাষিরা সমস্যায় পড়বেন।

তবে নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “সার উৎপাদনকারী সংস্থাকে মোট উৎপাদনের উপরে ভর্তুকি দিত কেন্দ্র। এ বার থেকে চাষি যে পরিমাণ সার কিনবেন, শুধু তার উপরে ভর্তুকি দেওয়া হবে।” অর্থাৎ, সার সংস্থাগুলিকে অতিরিক্ত ভর্তুকির টাকা দিতে হবে না সরকারকে।

এই নতুন ব্যবস্থার জন্য দেশের সমস্ত খুচরো সার ব্যবসায়ীকে একটি করে ‘পস’ বা ‘পয়েন্ট অব সেল’ যন্ত্র দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। সার কিনতে গেলে সেই যন্ত্রে সংশ্লিষ্ট চাষির আধার কার্ডের নম্বর ও আঙুলের ছাপ দিতে হবে। তবেই তিনি সার পাবেন। তিনি কতটা সার কিনলেন তা-ও নথিভুক্ত হবে। সেই মতো ভর্তুকির টাকা জমা পড়বে অ্যাকাউন্টে।

কৃষিকর্তাদের মতে, এই ব্যবস্থায় সারের কালোবাজারিও কমবে। এত দিন সার বিক্রির উপরে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ব্যবসায়ীরা কতটা সার কিনছেন আর কতটা চাষিদের কাছে কত দামে বিক্রি করছেন, তার হিসেব থাকত না। তাই কালোবাজারি করা যেত সুবিধে বুঝে। নদিয়া জেলা কৃষি দফতরের আধিকারিক রঞ্জন রায়চৌধুরী বলেন, “ব্যবসায়ী কতটা সার কিনছেন, কতটা তাঁর কাছে আগেই মজুত ছিল আর কাকে কতটা সার কত দামে বিক্রি করছেন, সবই ওই যন্ত্রের সরকারের কাছে নথিবদ্ধ হবে। একটু এ দিক ও দিক হলেই ধরা পড়ে যাবে।” নদিয়া জেলায় সারের খুচরো বিক্রেতার সংখ্যা প্রায় পঁচিশশো। এর মধ্যে ১৫২৫ জনের হাতে যন্ত্রটি তুলে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকেই ওই যন্ত্রের মাধ্যমে বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন। পয়লা জানুয়ারির মধ্যে চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ভর্তুকির টাকা ঢুকে যাবে।

একটি সার উৎপাদনকারী সংস্থার রিজিওন্যাল ম্যানেজার দেবীকান্ত পরিডা জানান, “আধার কার্ডের সঙ্গে জমির পরিমাণও ‘লিঙ্ক’ হয়ে থাকছে। তাই কোন চাষির কতটা সার দরকার, সেটাও ঠিক হয়ে যাবে। আগামী দিনে ওই নির্দিষ্ট পরিমাণ সারের জন্যই ভর্তুকি পাবেন ওই চাষি।”

স্বভাবতই খুশি নন সারের খুচরো ব্যবসায়ীরা সকলে। নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট এগ্রিল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সম্পাদক নরেশ দাসের মতে, “এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হবে। সারে লাভ কম। সেই সঙ্গে পরিবহণ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিক্রয় মূল্যের উপরে পরিবহণ খরচ ধরে বিক্রি করা হত। এখন সেটা সম্ভব হবে না।” শক্তিপদ ভট্টাচার্য, সাধন ঘোষদের মতো কিছু ব্যবসায়ী আবার বলেছেন, “কিছু লোক কালোবাজারি করত। আর দোষ হত সকলের। এই নতুন ব্যবস্থায় আমরা খুশি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subsidy Fertilizer Farmers Bank Account
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE