Advertisement
E-Paper

নেতা-দালাল চক্র চলছেই, কর্তারা নিশ্চুপ

সবচেয়ে ভয়ের কথা, জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লকেই এই পরিস্থিতি চলছে। এবং ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই চক্রে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীদের একাংশ যেমন রয়েছেন, শাসক দলের কিছু নেতা থেকে স্থানীয় বাহুবলীরাও আছেন। আছে এক শ্রেণির দালালও।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৪৬
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

জমির অবৈধ হাতবদলের পিছনে আছে লক্ষ-লক্ষ টাকার খেলা। গোটা বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করে এক ধরনের সিন্ডিকেট। ভুক্তভোগীরা বলছেন, জমির পরিমাণ ও দামের উপর নির্ভর করে কত টাকা লেনদেন হবে।

সবচেয়ে ভয়ের কথা, জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লকেই এই পরিস্থিতি চলছে। এবং ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই চক্রে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীদের একাংশ যেমন রয়েছেন, শাসক দলের কিছু নেতা থেকে স্থানীয় বাহুবলীরাও আছেন। আছে এক শ্রেণির দালালও। দফতরের কর্মীদের একাংশের দাবি, টাকার টোপের পাশাপাশি নানা ভাবে ভয় দেখানোর কারবারও চলে। নাম প্রকাশ মনা করার শর্তে বিএলএলআরও-দেরও কেউ কেউ বলছেন, বহু ক্ষেত্রেই অবৈধ ভাবে জমির নথি পরিবর্তনের পিছনে আছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপ। এমনকি হুমকিও। বাইরে থেকে চাকরি করতে আসা সরকারি কর্মীরা সেই চাপ সহ্য করতে না পেরেই নাকি এই ধরনের কাজ করতে বাধ্য হন।

জেলার এক বিএলএলআরও-র কথায়, “কোনও-কোনও কর্মী যে যুক্ত থাকেন না, তা বলব না। টাকা-পয়সা লেনদেন হয় না, তা-ও বলব না। কিন্তু একটা বড় কারণ হল প্রবল চাপ। সেই চাপের সামনে সব সময়ে মেরুদণ্ড সোজা রাখা যায় না।” তাঁর বক্তব্য, “কর্তারা সব জানেন। আমরা বাইরে থেকে চাকরি করতে আসি, আমাদের কে নিরাপত্তা দেবে?”

জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “দীর্ঘ দিন ধরেই এই দফতর ঘুঘুর বাসা হয়ে আছে। সেটা ভাঙতে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন। তাতে অনেক কিছু নড়ে যাবে।” দফতরের কর্মীদের একাংশ আবার মনে করছেন, “দিনের পর দিন ধরে দুর্নীতি হয়ে এলেও কেউ শাস্তির মুখে না পড়ায় সাহস ক্রমশ বেড়ে গিয়েছে। এই সব চক্রের মাথায় শাসক দলেরই এক শ্রেণির নেতার হাত আছে। ফলে তারা এখন আর কাউকে পরোয়া করে না।”

এই পরিস্থিতি কিন্তু শুধু আজকের নয়। দফতর সূত্রেই খবর, বাম আমল থেকেই এই চক্র সক্রিয় হয়েছিল। যত দিন গিয়েছে তারা তত শক্তিশালী হয়েছে। বিজেপি এখনও ক্ষমতার তখতে বসার সুযোগ পায়নি, ফলে তাদের চক্রে ঢোকার সুযোগও কম। দলের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের দাবি, “এই সব জমি দখলের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে আছে তৃণমূলের নেতারা। তারাই চালাচ্ছে সিন্ডিকেট-রাজ। প্রশাসনের কেউ বাধা দিতে গেলে তাদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-ও অভিযোগ করেন, “জেলার সর্বত্র সিন্ডিকেট রাজ চলছে। পুলিশ-প্রশাসন ও স্থানীয় পঞ্চায়েতকে কাজে লাগিয়ে সাধরাণ মানুষের জমি হাতিয়ে নিচ্ছে তৃণমূলের নেতারা।”

প্রত্যাশিত ভাবেই, এই অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। উল্টে তাদের দাবি, বাম আমলের এই সব বেনিয়ম তারা প্রায় পুরোই বন্ধ করে দিয়েছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের বক্তব্য, “বিজেপি আর দুর্নীতি সমার্থক শব্দ। ওদের কথার কী জবাব দেব! আর সিপিএম তো ৩৪ বছর ধরে দফতরটাকে ঘুঘুর বাসা করে রেখেছিল। আমরা সেই জঞ্জাল সাফাই করছি।’’

তা হলে হাতে-নাতে যে প্রমাণ মিলছে? গৌরী বলেন, ‘‘সামান্য যা ঘটছে, তাতে কারও যুক্ত থাকার প্রমাণ পেলেই শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” জেলা প্রশাসনের কর্তারা যদি সবই জানেন, তা হলে বছরের পর বছর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন? অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) নারায়ণচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘‘কোনও মন্তব্য করব না।’’

Syndicate Land Trading
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy