প্রতীকী ছবি।
কবে থেকে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হবে, এখনও জানা নেই। কিন্তু জেলায় করোনার গণটিকাকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে জোরকদমে। শুধু তাই নয়, প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, পরিকাঠামো তৈরির কাজ প্রায় শেষের মুখে। এখন শুধু টিকা হাতে পাওয়ার অপেক্ষা।
অন্য জেলার তুলনায় নদিয়া জেলায় করোনা সংক্রমণের সংখ্যা অনেকটাই কম। সেই অর্থে মৃত্যুর হারও কম এই জেলায়। স্বাস্থ্য কর্তাদের দাবি, করোনা মোকাবিলায় তাঁরা রাজ্য থেকে আসা নির্দেশিকা হুবহু মানার পাশপাশি সর্বস্তরে কর্মী-আধিকারিকেরা করোনা প্রতিরোধে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেই কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। তাঁদের দাবি, এখনও এই জেলার করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। তাই করোনার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁরা কোনও রকম গাফিলতি রাখতে চাইছেন না। বরং এ ক্ষেত্রেও তাঁরা সকলে মিলে দ্রুত প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করে রাখতে চাইছেন, যাতে গণটিকাকরণের জন্য ভ্যাক্সিন এলেই তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সহজ হয়।
জানা গিয়েছে, নদিয়ায় জেলাশাসককে শীর্ষে রেখে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের নিয়ে ৩২ জনের একটি ‘টাস্ক ফোর্স’ তৈরি করা হয়েছে। এই কমিটির তত্ত্বাবধানেই চলছে পরিকাঠামো তৈরির কাজ। কমিটির অন্যতম সদস্য কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের চিকিৎসক অয়ন ঘোষ বলছেন, “আমরা সব রকম ভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রতিটা নির্দেশিকা অত্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। পরিকাঠামোগত ভাবে যাতে কোনও ফাঁক না থাকে সে দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়া জেলায় মোট ৫৭টি ‘কোল্ড চেন পয়েন্ট’ আছে। যেখানে সমস্ত ধরনের ভ্যাক্সিন সংরক্ষণ করা হয়। শুধু তাই নয়, সেখানে করোনা ভ্যাক্সিনও সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে বলে কর্মকর্তাদের দাবি। সেই মতো কমিটির সদস্যরা প্রতিটি পয়েন্টে ‘ভিজিট’ করেছেন। প্রয়োজনীয় কিছু পরিকাঠামো গত পদক্ষেপও করতে হয়েছে। প্রতিটি কোন্ড চেন পয়েন্টে থাকছে একাধিক ‘আইস লাইন রেফ্রিজারেটর’ ও ‘ডিপ ফ্রিজার’। জেলার সদর কৃষ্ণনগরে তৈরি করা হয়েছে একটি বিশেষ ‘ওয়াক ইন কুলার’, যা অনেকটাই ‘স্টোর রুম’ হিসাবে কাজ করবে। এখানে জেলার সমস্ত ভ্যাক্সিন সংরক্ষণ করে রাখা হবে। পরে এখান থেকেই প্রয়োজন মতো করোনার টিকা পৌঁছে দেওয়া হবে ‘কোল্ড চেন পয়েন্ট’গুলিতে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু মাত্র জেলা সদর ছাড়া প্রতিটি কোল্ড চেন পয়েন্ট থেকেই টিকা দেওয়া হবে। সেই মতো প্রতিটি পয়েন্টের জন্য ছ’জন করে কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওায়া হয়েছে। এই ছ’জনের মধ্যে এক জন থাকছেন পুলিশকর্মী। এক জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। টিকা দেওয়ার জন্য একজন করে এএনএম বা নার্স থাকবেন। টিকা নেওয়ার পর পর্যবেক্ষণের জন্য আধ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হবে। সেই সময় পর্যবেক্ষণের জন্য থাকবেন এক জন স্বাস্থ্যকর্মী।। থাকবেন একজন হেল্পার বা সহকারী আর একজন করে সুপারভাইজার, যিনি সমস্ত কিছু পরিচালনা করবেন ও নজরদারি চালাবেন।
করোনার টিকা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ভাবে একটি বিশেষ‘মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে যাঁদেরকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হবে, তাঁদের নাম ও ঠিক কতটা পরিমাণ ভ্যাক্সিন আছে, তা লেখা থাকবে। সেখানেই সব আপলোড করতে হবে। এর মধ্যে টিকা নেওয়ার পর যদি কারও শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তা হলে সেটাও আপলোড অর্থাৎ নথিভুক্ত করতে হবে ওই অ্যাপে। ‘কো-উইন’ নামের ওই অ্যাপের মাধ্যমেই সরকারি ভাবে গণটিকাকরণ পরিচালনা করা হবে। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা এই অ্যাপের মাধ্যমে ভ্যাক্সিন প্রক্রিয়ার সমস্তটাই দেখতে পারবেন ও সেই মতো পদক্ষেপও করতে পারবেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের, বিশেষ করে যাঁরা করোনা মোকাবিলায় সামনের সারিতে থেকে লড়াই করছেন, তাঁদেরকে টিকা দেওয়া হবে। নদিয়া জেলায় সেই সংখ্যাটা প্রায় ৩৫ হাজার বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে কোথায় প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে টিকা দেওয়া শুরু হবে বা ‘ড্রাই রান’ করা হবে, তা এখনও নির্দিষ্ট হয়নি। তবে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতাল ও শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হতে পারে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলার এক কর্তার কথায়, “এটা ঠিক করবে রাজ্য। সেই কারণে আমরা ড্রাই রানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।”
অন্য দিকে জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলছেন, “আমরা সব রকম ভাবে প্রস্তুত। শুধু টিকা আসার অপেক্ষায় আছি। এলেই টিকা দেওয়ার কাজ শুরু করে দিতে পারব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy