উদ্বোধনের পরেই বন্ধ হাসপাতালের বিশ্রামাগারটিও।—নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতালেই রয়েছে এক্স-রে, আল্ট্রা সোনোগ্রাফি বিভাগ। রয়েছে অত্যাধুনিক চিকিৎসার জন্য নানা বিভাগ, দামি যন্ত্রও। আগামী কিছু দিনের মধ্যেই চালু হবে সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ)। রয়েছে আরও অনেক চিকিৎসার সুবিধা। কিন্তু স্রেফ পর্যাপ্ত কর্মী ও চিকিৎসকের অভাবে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে রোগীরা সেই পরিষেবা থেকে কখনও আংশিক কখনও পুরোপুরি বঞ্চিত হচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সীমান্তবর্তী তেহট্ট শহরে পাঁচের দশকে ৩০ শয্যা নিয়ে তৈরি হয়েছিল একটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ২০০৫ সালে সেই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৬৮ শয্যা বিশিষ্ট মহকুমা হাসপাতালে উন্নীত হয়। এখন শয্যা সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০০। তৈরি হয়েছে নতুন নতুন বিভাগও। গত কয়েক বছরে পরিকাঠামোও অনেক উন্নত হয়েছে। নতুন ভবনের পাশাপাশি হৃৎপিণ্ডের সমস্যা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য তৈরি হয়েছে ৬ শয্যা বিশিষ্ট একটি ইউনিট। চালু হয়েছে এসএনএসইউ (সিক নিউবর্ন স্টেবিলাইজেশন ইউনিট)। রয়েছে ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার (আইসিটিসি)। ব্লাড ব্যাঙ্ক না থাকলেও রয়েছে ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট।
বর্তমানে সপ্তাহে পাঁচ দিন ও মাসে গড়ে প্রায় ২৫ জন প্রসূতিকে অস্ত্রোপচার করে প্রসব করানো হয়। আর স্বাভাবিক প্রসবের সংখ্যা মাসে প্রায় ২০০। কিন্তু পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে কোনও বিভাগেই পুরো পরিষেবা মিলছে না বলে অভিযোগ। হাসপাতালে এক্স-রে, আল্ট্রা সোনোগ্রাফি বিভাগ রয়েছে। কিন্তু কোনও কর্মী না থাকায় রোগীকে বাইরে থেকে বেশি টাকা খরচ করে এক্স-রে করে আনতে হচ্ছে। একই অবস্থা আল্ট্রা সোনোগ্রাফি বিভাগেরও। বিশেষজ্ঞ না থাকায় বড় ধরনের কোনও অস্ত্রোপচারও হয় না হাসপাতালে। শুধু মাত্র ছোটখাটো কোনও অস্ত্রোপচার, মহিলাদের বন্ধ্যাত্বকরণ, পুরুষদের নির্বীজকরণ ও জ্বর-কাশির মতো ছোটখাটো অসুখের চিকিৎসার মধ্যে সীমাবদ্ধ হাসপাতালের পরিষেবা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মালিয়াপোতার আসমা বিবি, পুঁটিমারির সঞ্জিত ঘোষের কথায়, ‘‘সব ওষুধও হাসপাতালে পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। অস্ত্রোপচারের পরে সেলাই কাটতে বা ফোড়া কাটতে গেলেও ছুটতে হচ্ছে ৫০ কিমি দূরে কৃষ্ণনগরে।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘হাসপাতালে একের পর এক নতুন বিভাগ খুললেই হবে না। সাধারণ মানুষ যাতে পরিষেবাও পান সে দিকেও নজর দিতে হবে।”
অভিযোগ মেনে নিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক রামচাঁদ মুর্মু জানান, এই ধরনের হাসপাতালে অন্তত ৩০ জন চিকিৎসকের প্রয়োজন। সেখানে মাত্র ১৪ জন চিকিৎসক রয়েছেন। এক্স-রে বিভাগে দু’জন টেকনিশিয়ান থাকার কথা।কিন্তু সেখানে কেুই নেই। ফলে বন্ধ রয়েছে ওই বিভাগ। দু’জন প্যাথোলজিস্টের জায়গায় আছেন মাত্র একজন। শুধু মাত্র এক জন রেডিওলজিস্টের অভাবে এত টাকা ব্যয়ে তৈরি আলট্রা সোনোগ্রাফি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে মাত্র একজন চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেন। তিনিও বর্তমানে শক্তিনগর হাসপাতালে থাকায় অস্ত্রোপচার বন্ধ। প্রয়োজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরও। এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমরা সব সময় মানুষকে ভাল পরিষেবা দিতে চাই এবং যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি।’’
সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন তেহট্ট মহকুমার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শচীন্দ্রনাথ সরকারও। তিনি বলেন, ‘‘পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও কর্মীর অভাবেও সাধারণ মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। সীমান্তের ওই হাসপাতালের বহির্বিভাগে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ জন রোগী আসেন। দিনে গড়ে ৫০ জন রোগী ভর্তি হন। রোগীর এই বিপুল চাপ থাকলেও সেই অনুপাতে শয্যা ও চিকিৎসক নেই। ফলে অনেক সময় রোগীদের মেঝেতে থাকতে হয়।’’ তিনি জানান, হাসপাতালে মাত্র দু’জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ আছেন। তাঁরা তিন দিন জেলায় ও তিন দিন ওই হাসপাতালে রোগী দেখেন। এক বছরের মধ্যে হাসপাতালে রোগী সহায়তা কেন্দ্র, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা ও ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান চালু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘এসএনসিইউ চালু করার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র চিকিৎসক পেলেই ভবিষ্যতে সব সুবিধা মানুষ এখান থেকেই পাবেন।’’
শুধু হাসপাতাল নয়, রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে রোগীর পরিজনদের জন্য স্থানীয় তেহট্ট গ্রাম পঞ্চায়েত হাসপাতালে একটা বিশ্রামাগার তৈরি করেছে। গত জানুয়ারি মাসে ওই ভবন উদ্বোধন হয়। তারপর থেকে তালাবন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে সেটি। নিকাশি ব্যবস্থাও তথৈবচ। একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু পর্যন্ত জল জমে যায় হাসপাতাল চত্বরে। তেহট্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের চায়না মণ্ডল বলেন, “তড়িঘড়ি উদ্বোধন হলেও বৈদ্যুতিক সংযোগ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হয়নি। সে সব কাজ শেষ হলে সকলের ব্যবহারের জন্য বিশ্রামাগারটি খুলে দেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy