Advertisement
E-Paper

হাড়গিলে বাচ্চাটাই চোর শিরোমণি! জেনে পুলিশের চোখ কপালে

সেই রোগা-প্যাংলা চেহারা। সেই সর্ষের তেল। এবং ধরা পড়লে সুড়ুৎ করে পগার পাড়!

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪৩
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সেই রোগা-প্যাংলা চেহারা। সেই সর্ষের তেল। এবং ধরা পড়লে সুড়ুৎ করে পগার পাড়!

এক্কেবারে যেন প্যাঁচের ফোটোকপি! প্যাঁচ কে?

নবাবের জেলা প্যাঁচকে হয়তো চেনে না। কিন্তু জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার তাকে চেনেন হাড়ে হাড়ে। রোগা হাড় জিরজিরে বছর আঠাশের কার্তিক ডোম ওরফে প্যাঁচের বাড়ি বাঁকুড়ার এক বস্তিতে। বছর কয়েক আগে জীবনে এক বারই সে গুরুর নির্দেশ অমান্য করে তেল না মেখেই কাজে বেরিয়েছিল। এবং সে বারেই শ্রীঘরে! তখনও বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার ছিলেন মুকেশ কুমার।

বহরমপুরে বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনার কিনারা করতে নেমে পুলিশ সন্ধান পেয়েছে আর এক প্যাঁচের। তার বয়স অবশ্য মেরেকেটে বছর বারো। কিন্তু এরই মধ্যে সে এই কাজে রীতিমতো দড় হয়ে উঠেছিল। লিকলিকে চেহারা নিয়ে গৃহস্থের বাড়ির জানলা গলে ভিতরে ঢুকে খুলে দিত সদর দরজা। তার পরের কাজটা সারত ওস্তাদেরা।

অকুস্থলে পুলিশ গিয়ে হিসেব মেলাতে পারত না। কোনও জানলা-দরজা না ভেঙে কী করে এমন নিপুণ ভাবে চুরি করা সম্ভব? এর মধ্যেই চুরি হয় বহরমপুরে পুলিশ আবাসনে। ‘পদ্মা আবাসন’-এর এক মহিলা পুলিশ কনস্টেবলের ঘর থেকে চুরি যায় জিনিসপত্র। পুলিশের ঘরেই চুরি? নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। তার পর থেকে তক্কে তক্কে ছিল পুলিশ।

ইতিমধ্যেই সোর্স মারফত পুলিশ জানতে পারে বহরমপুরের বছর বারোর ওই বালকের কথা। তার সঙ্গে কথা বলেই পুলিশ শুক্রবার ও শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে সাফল্য পায়। ছ’জন ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। তাদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, রোগা চেহারার জন্যই তারা বেছে নিয়েছিল ওই বালককে। নির্দিষ্ট বাড়িতে পৌঁছে দরজা, শাটার কিংবা গ্রিলে রড ঢুকিয়ে একটু ফাঁকা করে দিতে হত। অবিশ্বাস্য দক্ষতায় তেল মাখা সেই লিকলিকে শরীর সামান্য সেই ফাঁক গলে ঢুকে যেত বাড়ির মধ্যে। তার পরে ভিতর থেকে দরজা খুলে দিত। কাজ শেষ হলে ফের দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে আসত একই কায়দায়।

ধৃতদের কাছ থেকে পুলিশ নগদ ১০ হাজার টাকা, ছ’ভরি সোনার গয়না, প্রায় এক কেজি রুপোর গয়না, সাতটি এলইডি টিভি উদ্ধার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, যাদের বাড়ির জিনিসপত্র চুরি গিয়েছে তাঁরাও বহরমপুর থানায় যোগাযোগ করেছিলেন। চুরি যাওয়া জিনিসপত্র উদ্ধারের বিষয় আদালতেও জানানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশ পেলে উদ্ধার হওয়া গয়না, টাকা মালিকদের ফেরত দেওয়া হবে।

পুলিশ জানাচ্ছে, এই চোরের দল দীর্ঘ দিন ধরেই এই কারবার চালাচ্ছিল। এলাকায় ঘুরে ঘুরে তারা কবে কোন বাড়ি ফাঁকা থাকে সেই খোঁজ নিত। সেই মতো রেকি করে নির্দিষ্ট দিনে তারা কাজে বেরোত। গত বছর শীতকালে চুরির হাত থেকে রক্ষা পেতে বহরমপুরের প্রান্তিকপাড়ার বাসিন্দাদের রাত পাহারা দিতে হয়েছিল। বহরমপুরের বানজেটিয়া, কেশবনগর, রাধিকানগর, তালবাগানপাড়ায় একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত ছ’মাসে বহরমপুর থানা এলাকায় নেই নেই করে ৩০টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। বহরমপুরের ওই ছ’জন ধরা পড়ার পরে জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলছেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করে আরও কারা জড়িত তা জানার চেষ্টা চলছে।’’

ভরা আশ্বিনেও কি সিঁধেলদের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে?

Trick Thief Murshidabad Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy