উপনির্বাচনের বাজনা বেজে গিয়েছে বেশ কয়েক দিন আগেই। তৃণমূল, বিজেপি এবং বাম-সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী প্রচারে নেমে পড়েছেন। একে একে পাড়া চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। দেওয়াল লিখন, হাটে-বাজারে মিছিল, মাইকে প্রচার মিলিয়ে কালীগঞ্জে ভোট উত্তাপ চড়ছে।
তবে যে প্রশ্নটা রাজনৈতিক মহলে ঘুরছে তা হল, এই লড়াই কি আদৌ ত্রিমুখী? নাকি তৃণমূল বনাম বিজেপির দ্বৈরথেই তা সীমাবদ্ধ থাকবে?
২০১১ সালে পরিবর্তনের হাওয়ায় কালীগঞ্জের একদা লাল দুর্গে ঘাসফুল ফুটেছিল। তবে সাংগঠনিক দিক দিয়ে সিপিএম এখনও পুরোপুরি জমি ছাড়েনি। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের জোটপ্রার্থী ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন। যদিও বছর ঘুরতেই তিনি তৃণমূলে যোগদান করেন। কার্যত তার পর থেকেই ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ে বামেরা। সেই সুযোগে মাথা তুলতে থাকে বিজেপি।
নদিয়ার অধিকাংশ জায়গার মতো কালীগঞ্জেও বিজেপির উত্থান ঘটে মূলত ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের সময়। সংখ্যালঘু-প্রধান এই কেন্দ্রেও রাতারাতি ভাল ভোট টানে তারা।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য তৃণমূল বিপুল ভোটে জয়ী হয়, বিজেপি ৩১ শতাংশ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে টিঁকে থাকে। সে বার বাম-কংগ্রেসের ভাগ্যে জুটেছিল মাত্র ১২ শতাংশ ভোট।২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় সিপিএম, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
গত বছর লোকসভা নির্বাচনে জোট করে লড়ে এই কেন্দ্রে পাওয়া ভোটের নিরিখে বাম-কংগ্রেস চলে যায় তৃতীয় স্থানে। এখন প্রশ্ন হল, এই উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস কি আদৌ ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠতে পারে? নাকি কালীগঞ্জের মাটি দুই মেরুর লড়াইয়ের দিকেই এগোচ্ছে, যেখানে ভোট মূলত ধর্মীয় সমীকরণে বিভাজিত হয়ে যেতে পারে?
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বাম-কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক নেই তা নয়, তা অনেকটাই ছত্রভঙ্গ। বামেদের সংগঠন থাকলেও জনমত ধরে রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তৃণমূলের ঘাঁটি এখনও মজবুত। তবে বিজেপিও এখন এই ময়দানে শিকড় গেড়ে বসেছে।
তবে কারও-কারও মতে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তৃণমূল-বিজেপি মেরুকরণের বাইরে তৃতীয় বিকল্পের সন্ধান করছেন কিছু মানুষ। ওয়াকফ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং রাজ্যে বিপুল দুর্নীতির মামলাকে কেন্দ্র করে ‘তৃণমূল-বিজেপির সেটিং তত্ত্ব’ও বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন কেউ কেউ। ফলে বাম-কংগ্রেস ও অন্যান্য তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা আছে বলে তাঁরা মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে তা আসন্ন বিধা্নসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও নজির হয়ে দাঁড়াতে পারে।
মোটের উপর, কালীগঞ্জের উপনির্বাচন ঠিক কী চেহারা নিতে চলেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে কোনও দলই বাগাড়ম্বর করতে ছাড়ছে না। শুক্রবার বিজেপি প্রার্থী আশীষ ঘোষ দাবি করেন, “সাধারণ মানুষ তৃণমূলের দুর্নীতি বুঝে গেছে। সংখ্যালঘু ভাইদের একাংশও আমাদের সঙ্গে আছেন। সিপিএম যদি তাদের ভোট ধরে রাখতে পারে, আমাদের জয় নিশ্চিত।”
বাম-সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী কাবিলউদ্দিন শেখ বিজেপিকে নয়, তৃণমূলকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে ধরছেন। তাঁর দাবি, “সিপিএম আর কংগ্রেসের ভোট কেটেই বিজেপিতে গিয়েছে। কিন্তু মানুষ ভুল বুঝতে পেরেছে। আমাদের ভোট আমাদের কাছেই ফিরছে।”
বিজেপি প্রার্থী আশীষ ঘোষ দাবি করেন, “সাধারণ মানুষ তৃণমূলের দুর্নীতি বুঝে গেছে। সংখ্যালঘু ভাইদের একাংশও আমাদের সঙ্গে আছেন। সিপিএম যদি তাদের ভোট ধরে রাখতে পারে, আমাদের জয় নিশ্চিত।” আর, বিজেপির ভোটবৃদ্ধি কথা স্বীকার করেও তৃণমূলের উত্তর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান দাবি করেন, “কালীগঞ্জে কোনও ফ্যাক্টর কাজ করবে না। তৃণমূল বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)