Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বেগতিক বুঝে রেফার করেন রবি ডাক্তার

 রবি ঠাকুরের ডাক্তারখানা, দিগনগরের পাড়ার ছেলেপুলেরা তাঁকে নিয়ে মশকরা কম করে না। তবে, রাত-বিরেতে জ্বর-জ্বালা, কাশি-সর্দি, ফোঁড়া কাটা— রবি ডাক্তার ছাড়া গতি নেই। পসারও তাই কম নয় তাঁর। দিনে-রাতে নিয়ম করে চেম্বারও করেন তিনি। মোটরবাইক হাঁকিয়ে এ গ্রাম ও গ্রাম রোগী দেখে বেড়ানোয় একটা ভারিক্কি চাল-চলনও রয়েছে বইকি রবি ডাক্তারের।

সুস্মিত হালদার
বীরনগর  শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৮
Share: Save:

রবি ঠাকুরের ডাক্তারখানা, দিগনগরের পাড়ার ছেলেপুলেরা তাঁকে নিয়ে মশকরা কম করে না। তবে, রাত-বিরেতে জ্বর-জ্বালা, কাশি-সর্দি, ফোঁড়া কাটা— রবি ডাক্তার ছাড়া গতি নেই। পসারও তাই কম নয় তাঁর। দিনে-রাতে নিয়ম করে চেম্বারও করেন তিনি। মোটরবাইক হাঁকিয়ে এ গ্রাম ও গ্রাম রোগী দেখে বেড়ানোয় একটা ভারিক্কি চাল-চলনও রয়েছে বইকি রবি ডাক্তারের।

সেই রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের চেম্বারেই খুকখুকে কাশি আর লাগাতার জ্বর নিয়ে ধুলো মাখা পথ ভেঙে সেই ইটালা গ্রাম থেকে এসেছিলেন বাবলু বিশ্বাস।

বাবলুর ছেলে বিজয় বলছেন, ‘‘ছিল তো সামান্য জ্বর-কাশি আর গলা ব্যাথা। বাবাকে বসিয়ে ডাক্তারবাবু চারখানা বড়ি দিল। তাতেই বাঁধল বিপত্তি।’’

খানিক পরেই বেজায় শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল মধ্য চল্লিশের বাবুলর। গতিক ভাল ঠেকেনি, ডিগ্রিহীন হাতুড়ে রবি ডাক্তারের। নিজের মোটরবাইকের পিছনে বসিয়েই রোগী নিয়ে শক্তিনগর হাসপাতালে ছুটে ছিলেন তিনি। কিন্তু বাবলু ক্রমেই নেতিয়ে পড়ছে দেখে, রাস্তায় একটা গাড়ি ঠিক করে রোগীকে সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘রোগী হাতে রাখলাম না, তবে চিন্তা করিস না।’’

বাবলু অবশ্য আর হাসপাতালে পৌঁছতে পারেননি। মাঝ পথেই মারা যান। আর তার পরেই শুরু হয় দর কষাকষি। গ্রামের মাতব্বরেরা দর হেঁকে বসে বিশ লাখ। তাদেরই এক জন, স্থানীয় পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের সুদেব হালদার বলেন, “বাবলুর পরিবারের মাসিক খরচ কমপক্ষে বারো হাজার টাকা। সেই হিসাবেই আমরা এক কালীন বিশ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলাম।’’ দর কষাকষি করে তা পাঁচ লক্ষ নামে। গ্রামের লোকজনের দাবি ছিল, ব্যাঙ্কে ওই টাকা রেখে সুদের আয়ে সংসারটা চালাতে পারতেন বাবলুর পরিবার।

তবে, টাকার অঙ্ক শুনেই বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রাম ছাড়া হয়ে যান রবি ডাক্তার।

সে রাতেই, রবীন্দ্রনাথের বাড়ির লোহার গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করেন তারা। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় বটে তবে রবি ডাক্তারের খোঁজ মেলেনি।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা অবশ্য বলছেন, ‘‘এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে, এই গ্রামীণ হাতুড়েরা প্রান্তিক গ্রামের চিকিৎলার প্রথম পাঠটুকু দুয়ে মানুষজনকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পাঠও দেওয়া শুরু হয়েছে।’’ তবে, ওইটুকুই। তার পরেই হাসপাতালে রেফার করাই কর্তব্য তাঁদের। শক্তিনগর হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘সমস্যা হল, প্রাথমিক বাবে রোগের ধরন বুঝতে না পারলে হাসপাতলে পাঠিয়ে দেওয়াই উচিৎ গ্রামীণ চিকিৎসকদের। এ ক্ষেত্রে ওই চারখানা বড়ি যে কেন দিতে গেলেন!’’ তাঁদের অনুমান, কোনও কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়াতেই বিপত্তি বেধেছিল।

গ্রামের এক প্রবীণ বলছেন, ‘‘রবি ডাক্তার কিন্তু খারাপ নন, ওঁর ওপরে গোটা গ্রামই ভরসা করত। তবে ওই ওষুধটা...।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctor Refer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE