Advertisement
E-Paper

ভুতুড়ে অ্যাকাউন্টে পড়ছে বৃত্তির টাকা

যে সব ছাত্রছাত্রী বৃত্তির প্রকৃত দাবিদার তারা তা পায়নি, অথচ তাদের বৃত্তির টাকা যারা ছাত্র নয় বা যাঁদের ছেলেমেয়েরা আদৌ স্কুলেই যায় না, তাঁদের অ্যাকাউন্টে গিয়েছে!

মনিরুল শেখ 

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:১৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

যে সব ছাত্রছাত্রী বৃত্তির প্রকৃত দাবিদার তারা তা পায়নি, অথচ তাদের বৃত্তির টাকা যারা ছাত্র নয় বা যাঁদের ছেলেমেয়েরা আদৌ স্কুলেই যায় না, তাঁদের অ্যাকাউন্টে গিয়েছে!

সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের বৃত্তির টাকা এই ভাবে নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকেই এমন ভুতুড়ে উপভোক্তার সন্ধান মিলছে যাঁরা দাবিদার না-হওয়া সত্ত্বেও বৃত্তির টাকা পেয়েছেন। প্রকৃত দাবিদারেরা তাই ক্ষুব্ধ।

পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম বেশ কয়েক বছর ধরেই স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বাৎসরিক বৃত্তি দেয়। সে সব ছাত্রের ফল খারাপ, তারাও এই বৃত্তির টাকা পায়। আর্থিক ও শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের বৃত্তি দিয়ে পড়াশোনার মধ্যে রেখে দেওয়া এর উদ্দেশ্য। অনেকের গোটা বছরের পড়াশোনা নির্ভর করে এই বৃত্তির টাকার উপরে। এখন ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের বৃত্তির টাকা দেওয়া হচ্ছে।

নিয়ম অনুযায়ী, স্কুলগুলি পড়ুয়াদের তালিকা তৈরি করে পাঠায় ব্লক অফিসে। ব্লক তা যাচাই করে পাঠায় ট্রেজারিতে। ট্রেজারি উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু নিয়মের ফাঁক গলে যাঁদের সঙ্গে শিক্ষার কোনও সম্পর্কই নেই, তাঁদেরও উপভোক্তা বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। দফতরের কর্তাদের অনুমান, এর পিছনে কোনও চক্র কাজ করছে। তারা স্কুলের কাগজপত্র জাল করে ভুয়ো উপভোক্তাদের নামের তালিকা পাঠিয়ে দিচ্ছে ব্লকে। এমন ভাবে পাঠানো হচ্ছে যে, দেখা মনে হবে স্কুলই উপভোক্তার নাম পাঠিয়েছে। এরপর ট্রেজারি থেকে টাকা চলে যাচ্ছে ভুয়ো উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে।

অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকলেও উপভোক্তাকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে ওই চক্রের পাণ্ডারা বাকি টাকা তাঁদের থেকে নিয়ে নিচ্ছে। অর্থাৎ ওই চক্রের সদস্যরা নিজেরা টাকা হাতানোর জন্য কিছু লোককে উপভোক্তা সাজিয়ে তাঁদের অ্যাকাউন্টগুলি এই জালিয়াতিতে ব্যবহার করছে।

ধুবুলিয়ার খাজুরির বাসিন্দা নেপাল শেখ ও তাঁর স্ত্রী সারজিনা বিবি শেখের অ্যাকাউন্টে কিছু দিন আগেই ২৫০০ করে টাকা করে ঢুকেছে। অথচ তাঁদের ছেলেমেয়েরা কেউ প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পার করেনি। দুই ছেলে স্কুলছুট হয়েছে অন্তত বছর পাঁচেক আগে। মেয়ের বিয়েও হয়ে গিয়েছে। সারজিনা জানাচ্ছেন, তাঁর এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় রাহিবুল শেখ ওই টাকা তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢুকিয়েছিল। পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে সে তাঁদের মাত্র এক হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকাটা নিয়ে নিয়েছে। রাহিবুল অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি এ সব করিনি। মিথ্যা অভিযোগ।’’

শুধু শেখ দম্পতিই নয়, আশপাশের গ্রামে একাধিক লোকের অ্যাকাউন্টে এমন টাকা ঢুকেছে বলে অভিযোগ। যে চক্র এর পিছনে রয়েছে তার কয়েক জন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিল আনন্দবাজার। এমনই এক সদস্য জানিয়েছে, কৃষ্ণনগর-২ ব্লকের দ্বীপচন্দ্রপুরের চক্রের মাথা থাকে। নাকাশিপাড়া ব্লকের শাসকদলের এক নেতা বলছেন, ‘‘আমার গ্রামেও এমন ঘটেছে। সরকার মহৎ উদ্দেশে টাকা দিচ্ছে। আর সেই টাকা নয়ছয় হচ্ছে।’’ নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত অবশ্য এমন কোনও চক্রের অস্তিত্ব মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আড়াই লাখ পড়ুয়াকে বৃত্তির টাকা দেওয়া হচ্ছে। ফলে দুই একটা গোলমাল হতে পারে। সেটা অনিচ্ছাকৃত।’’

Scholarship Money Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy