Advertisement
E-Paper

সার-সার পুলিশ, ধুমধাড়াক্কা বোমা

বিশাল পুলিশ বাহিনীর সামনেই মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ল গাছগাছালির আড়াল থেকে। খানিক তফাতে দুই দিকে দু’দলের দুষ্কৃতীরা গা-ঢাকা দিয়ে।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৭
বাগবেড়িয়া পঞ্চায়েতের সামনে পুলিশের টহল। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

বাগবেড়িয়া পঞ্চায়েতের সামনে পুলিশের টহল। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

বিশাল পুলিশ বাহিনীর সামনেই মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ল গাছগাছালির আড়াল থেকে। খানিক তফাতে দুই দিকে দু’দলের দুষ্কৃতীরা গা-ঢাকা দিয়ে। কিন্তু শেষ হাসি হাসল তৃণমূলই। বিজেপি যতই গর্জন করুক, নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অক্ষুণ্ণ রেখে শনিবার বাগবেড়িয়া পঞ্চায়েত দখল করে নিল তৃণমূল। পুলিশের উপরে হামলা-বোমাবাজির অভিযোগে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত বিজেপি সমর্থক বলে পুলিশের দাবি।

শুক্রবারই ওই এলাকার আমঝুপি গ্রামে বোমা বাঁধতে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছিলেন চার জন। তাঁদের মধ্যে তিন জন এলাকার বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত। এক জন বহিরাগত। তাঁর দু’টি হাতই মারাত্মক জখম হয়েছে। বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। যদিও বিজেপি তা অস্বীকার করেছিল।

ঘটনা যা-ই হোক, পঞ্চায়েতের বোর্ড দখল করার লড়াইয়ের জন্য ওই এলাকায় যে বিপুল পরিমাণ বোমা মজুত করা হয়েছে, পুলিশের কাছে সেই খবর ছিল। দিন কয়েক আগেই পুলিশ বিজেপি প্রভাবিত ময়দানপুর থেকে ১৩টি তাজা সকেট বোমা উদ্ধার করে। এ দিন প্রায় নজিরবিহীন ভাবে ১৪০০ পুলিশ মোতায়ন করা হয়। এলাকার ন’টি গ্রাম কার্যত নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় পুলিশ। বাইরে থেকে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

তার পরেও অবশ্য সকাল থেকে বোমা হাতে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় দুষ্কৃতীদের। পঞ্চায়েত অফিসের সামনের মাঠে বোমা পড়তে থাকে। এক সময়ে যুযুধান দুই পক্ষের মধ্যে পড়ে যান পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে দুষ্কৃতীদের হটিয়ে দিলেও বোর্ড গঠনের আগে পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত ভাবে বোমাবাজি চলতেই থাকে। এরই মধ্যে বিজেপির পাঁচ ও তৃণমূলের আট জন সদস্য পঞ্চায়েত অফিসের ভিতরে ঢুকে যান।

চাপড়া ব্লকের হলেও বাগবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত ভীমপুর থানার মধ্যে পড়ছে। ভোট গণনার দিন থেকেই এই এলাকায় তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে ঝামেলা চলছিল। ওই পঞ্চায়েতের মোট ১৩টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে আটটি, বিজেপি পাঁচটি। কিন্তু বিজেপির অভিযোগ, গণনাকেন্দ্র থেকে তাদের প্রার্থীদের বার করে দিয়ে জুয়াচুরি করে জিতেছে তৃণমূল। তার প্রতিবাদে ওই দিন বিকেল থেকে তৃণমূলের প্রার্থী ও নেতাদের বাড়িতে হামলাও হয়েছিল। পরিস্থিতি এমন আকার নেয় যে কিছু তৃণমূল সদস্যকে গ্রামছাড়া হয়ে থাকতেও হয়েছিল।

এরই মধ্যে ট্যাংরা গ্রামে খুন হন বিজেপি সমর্থক এক যুবক। তাতে উত্তেজনার পারদ আরও চড়ে। স্থানীয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা জেদ ধরেন, কোনও মতেই তৃণমূলকে বোর্ড গঠন করতে দেবেন না। তৃণমূলও পাল্টা চ্যালেঞ্জ নেয়, সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখে বোর্ড তারা গড়বেই। গত ২৫ অগস্ট বোর্ড গঠনের দিন ধার্য হলেও ব্যাপক বোমাবাজি হয়। বিজেপির আক্রমণে হটতে বাধ্য হয় তৃণমূল। বিজেপি দাবি করে, তারাই বোর্ড গঠন করেছে। কারণ তৃণমূলের তিন সদস্য তাদের সমর্থন করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বোর্ড গঠন স্থগিত হয়ে যায়।

এ দিন প্রধান নির্বাচনে দু’পক্ষই প্রাথী দিয়েছিল। আট সদস্যের ভোট অক্ষুণ্ণ থাকায় প্রধান হন তৃণমূলের মুন্নি মল্লিক। এর পরে আর উপপ্রধান পদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি বিজেপি। উপপ্রধান হন তৃণমূলের তনুশ্রী হালদার। প্রথমেই তৃণমূলের সদস্যদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেয় পুলিশ। পরে বিজেপি সদস্যদেরও গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেয় তারা।

বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের অভিযোগ, “যে সদস্যেরা আমাদের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাঁদের খুনের হুমকি দিয়ে তৃণমূল বোর্ড দখল করেছে। সকাল থেকে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করার জন্য এলাকায় বোমাবাজি করেছে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত পাল্টা বলেন, “বিজেপি জনসমর্থনের বদলে বোমা দিয়ে পঞ্চায়েত দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। মানুষের রায়ই প্রতিফলিত হয়েছে।”

জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “এলাকার কিছু লোক বোমাবাজি করে গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করেছিল। পুলিশ তাদের হটিয়ে দিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে বোর্ড গঠন করাতে পেরেছে।”

Bagberia Panchayat Police বাগবেড়িয়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy