Advertisement
E-Paper

মতুয়া নিয়ে মাঠে তৃণমূল, নেপথ্যে রানাঘাটের যুদ্ধ?

বিজেপি বড় সভা করলেই পাল্টা সভা করবে তৃণমূল— বিগত কিছু দিন ধরেই এই মডেল চলছে রাজ্যে। বিজেপি অনুগামী মতুয়া সমাবেশের পরেও তারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। 

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০৯
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিজেপি বড় সভা করলেই পাল্টা সভা করবে তৃণমূল— বিগত কিছু দিন ধরেই এই মডেল চলছে রাজ্যে। বিজেপি অনুগামী মতুয়া সমাবেশের পরেও তারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে।

কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে যেমন সংখ্যালঘু ভোট, তেমনই রানাঘাট কেন্দ্রে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কই নির্ণায়ক শক্তি হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। ফলে সেই ভোটব্যাঙ্ক নিজেদের দিকে টানতে মরিয়া তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষই।

মতুয়া ঠাকুরবাড়ির ভিতরকার বিভাজন সর্বজনবিদিত। এক দিকে তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর আর অন্য দিকে মঞ্জুলকৃষ্ণের পুত্র শান্তুনু ঠাকুরেরা। গত ২৭ অক্টোবর কৃষ্ণগঞ্জে স্বর্ণখালির মাঠে শান্তনু ঠাকুরের গোষ্ঠীর মহাসম্মেলন ও ধর্মসভায় বক্তৃতা করে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ ও অন্য বিজেপি নেতারা। কোথাও বিজেপির নাম ও পতাকা না থাকলেও বিজেপিই যে অনুগামী মতুয়াদের দিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করেছিল, তা কার্যত স্পষ্ট।

সেই দিনই মতুয়াদের পাল্টা সভার কথা ঘোষণা করেছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই মতই আগামী ৩ নভেম্বর কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া হাইস্কুল মাঠে মতুয়া মহাসঙ্ঘের পাল্টা মহা সম্মেলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। যার অন্যতম উদ্যোক্তা কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের নদিয়া জেলা কমিটির অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা সত্যজিৎ বিশ্বাস। তবে তাঁর দাবি, তিনি এখানে তৃণমূল নেতা নন, মতুয়া মহাসঙ্ঘের সদস্য হিসাবেই থাকছেন। ওই সম্মেলনেও তৃণমূলের পতাকা থাকবে না। তাঁর দাবি, “এই সম্মেলনের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা শুধু মাত্র মতুয়াদের সভা।” তবে সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। থাকবেন জেলার তৃণমূল বিধায়ক ও সাংসদেরাও।

মতুয়া সমাবেশের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ না-ই থাকবে, শাসক দলের এত নেতামন্ত্রীর ভিড় কেন? সত্যজিতের দাবি, “পার্থবাবু থাকছেন রাজ্যের মন্ত্রী হিসাবে। আর বাকিরা জনপ্রতিনিধি হিসাবে থাকছেন। এর সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই।”

তবে তৃণমূল নেতা যা-ই বলুন, মতুয়াদের কাছে টেনে কে কত শক্তি প্রদর্শন করতে পারে, তা-ই যে এক মাত্র উদ্দেশ্য তা নিয়ে সন্দেহ নেই দুই দলেরই নিচুতলার কর্মীদের। গিরিরাজ আগের সভায় ভিড়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গিয়েছিলেন। পাল্টা সভায় যাতে রেকর্ড সংখ্যক মতুয়া উপস্থিতি থাকে, তার জন্য তৃণমূলও সচেষ্ট বলে নেতাদেরই একটা অংশ স্বীকার করছেন।

জেলার গোয়েন্দাদের দাবি, গত ২৭ নভেম্বর বিজেপি-ঘেঁষা মতুয়াদের সম্মেলনে সাড়ে পাঁচ থেকে ছ’হাজার লোকের ভিড় হয়েছিল। পাল্টা সভায় কয়েক গুণ বেশি মতুয়াকে টানার তোড়জোড় চলছে। গোটা জেলা থেকে মতুয়াদের এই সভায় হাজির করা হবে বলেও তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।

কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ৪০ শতাংশ। ফলে এখানে ভোটের ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলতে পারেন সংখ্যালঘুরাই। রানাঘাট কেন্দ্রে মতুয়া ভোট প্রায় ১৭ শতাংশ। বামেদের পরে সেই ভোট প্রায় একতরফা ভাবে ধরে রেখেছিল তৃণমূল। গত লোকসভা ভোটের প্রচারে কৃষ্ণনগরে এসে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করে যান নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তাতেও সেই মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে তেমন ফাটল ধরানো যায়নি। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এখনও তাঁদের আশ্বাস দেওয়ার তাসই খেলছে বিজেপি-আরএসএস শিবির।

বিজেপির দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকারের দাবি, “তৃণমূলের সঙ্গে থেকে তাঁরা যে প্রতারিত হয়েছেন, সেটা বুঝে গিয়েছেন মতুয়ারা। এ বার তাই তাঁরা আমাদের সঙ্গে থাকছেন। সেটা বুঝেই ভয়ে পাল্টা সভার আয়োজন করছে তৃণমূল। মতুয়াদের ভয় দেখিয়েই ওরা সভায় নিয়ে যাবে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা তেহট্টের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্তের গলায় অবশ্য সেই বাঁধা সুর— “এই সভার সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা আমন্ত্রিত হিসাবে যাব।”

Matua Vote TMC BJP বিজেপি তৃণমূল মতুয়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy