প্রতীকী ছবি
শুরুটা ভালই ছিল। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। মাঝে একটু বিরতি। তার পর সন্ধ্যা থেকে জলসা। রবিবার চাকদহের কেবিএম এলাকায় রীতিমতো হইহই কাণ্ড। মঞ্চের সামনে বিস্তর লোকজন। গোটা চত্বর জুড়ে খুশির মেজাজ। মঞ্চ সঞ্চালনা করছিলেন চাকদহের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সদস্য, যুব তৃণমূলের কর্মী শান্তনু শীল (৪০)। জমিয়ে চলছে অনুষ্ঠান। মাঝে মধ্যেই হাততালির শব্দে কান পাতা দায়। দর্শকের আসনের সামনের সারিতে বসে শান্তনুর স্ত্রী-ছেলে।
আচমকাই জনা পাঁচেক ছেলে এসে দাঁড়াল। হুমকি দিল অনুষ্ঠান বন্ধ করতে। শান্তনু এগিয়ে এসে কিছু একটা বলার চেষ্টা করলেন। তার পরে একটা গুলির শব্দ। মঞ্চ থেকে লুটিয়ে পড়েন শান্তনু। কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে রবিবার রাতেই মারা যান শান্তনু।
চোখের সামনে বাবার এমন পরিণতি দেখে কথা হারিয়েছে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সৌম্যজিৎ। সোমবার সকালে বারান্দার এক কোনে বসেছিল সে। কারও সঙ্গে কথা বলেনি। কোনও খাবারও মুখে তোলেনি। একই অবস্থা তার মা সোমা শীলেরও। বহু কষ্টে ঘটনার ১২ ঘণ্টা পরে তাঁকে এক গ্লাস সরবত খাওয়াতে পেরেছেন এক পড়শি। পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় কয়েক জন মদ খেয়ে গণ্ডগোল করত। দিনকয়েক আগে তা নিয়েই প্রতিবাদ করেছিলেন শান্তনু। তারই বদলা নিতে এমন কাণ্ড। সোমবার সকালে শান্তনুর স্ত্রী চাকদহ থানায় অভিযোগ জানান। রাতেই পুলিশ মূল অভিযুক্ত অমন রায় ওরফে কালুকে গ্রেফতার করেছে।
সোমা বলেন, ‘‘কালু এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলে। তারপরেই সে গুলি চালায়। শান্তনুর বুকে গুলি লাগে। মঞ্চ থেকে মাটিতে পরে যায়। আর তাকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি।”
ঘটনার পরে শান্তনুকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন চাকদহ শহর যুব তৃণমুলের সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাস। তিনি বলেন, “অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ছেলেটাকে খুন হতে হল। আমরা পুলিশের কাছে খুনিদের শাস্তির দাবি করেছি।”
এ দিন সকালে শান্তনুর বাড়িতে গিয়েছিলেন চাকদহের বিধায়ক রত্না ঘোষ। বিধায়ককে সামনে পেয়ে তাদের নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেন এলাকার মানুষ। মহিলারা তাঁকে বলেন, ‘‘সন্ধ্যার পরে বিভিন্ন রাস্তার ধারে মদের আসর বসায় দুস্কৃতীরা। ছোট ছোট ছেলেদের হাতে মদের গ্লাস তুলে দেওয়া হয়। ওদের অনেকের কাছেই আগ্নেয়াস্ত্র থাকে। সেই ভয়েই কেউ কিছু বলতে চায় না। প্রতিবাদ করলেই তো শান্তনুর মতো দশা হবে।” বিধায়ক তাঁদের আশ্বাস দিলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভয় কাটছে না। ওই ঘটনায় জখম উত্তম সরকার বলেন, “আমার চোখের সামনে শান্তনুকে গুলি চালাল কালু। ওরা পালিয়ে যাওয়ার সময় দৌড়ে গিয়ে কালুকে আমি ধরে ফেলেছিলাম। তখন সে আমাকে মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। মাথা ফেটে যায়। কিন্তু, ওদের ভয়ে পুলিশকে অভিযোগ জানাতে পারিনি।”
শান্তনুর বাড়িতে বিধবা মা, স্ত্রী, এক ছেলে রয়েছে। চাকদহে শান্তনুর একটি মোবাইলের দোকান রয়েছে। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। সোমা বলেন, “একটা গুলির শব্দে সব শেষ হয়ে গেল। এরপরে কী করে কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।” শান্তনুর বন্ধু পার্থ রুদ্র বলেন, “শান্তনু ছেলেবেলা থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াত। সেটাই যে কাল হবে, কে জানত!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy