এক সিপিএম কর্মীকে খুনের মামলায় ছয় তৃণমূল নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করল রাজ্য সরকার।
বুধবার কৃষ্ণনগর আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে (দ্বিতীয়) বিচারক বিষ্ণুবরণ মণ্ডলের এজলাসে এই আবেদনের শুনানি শুরু হয়। জেলার মুখ্য সরকারি আইনজীবী নাসিরুদ্দিন আহমেদ বলেন, “রাজ্যের লিগ্যাল রিমেমব্রান্সের নির্দেশে ওই ছ’জনের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। দেখা যাক, বিচারক কী নির্দেশ দেন।”
২০১৩-য় চাপড়ার বেতবেড়িয়া হাইস্কুলে পরিচালন সমিতি নির্বাচনে গণ্ডগোলের জেরে বাড়িতে ঢুকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল স্থানীয় সিপিএম কর্মী আসাদুল শেখকে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি বাড়ি। গ্রামছাড়া করা হয় আসাদুল-সহ বেশ কয়েক জন সিপিএম কর্মীর পরিবারকে, যাঁদের অনেকেই এখনও গ্রামে ঢুকতে পারেননি।
এই খুনের ঘটনায় চাপড়া ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি শুকদেব ব্রহ্ম, বেতবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা তথা হৃদয়পুর পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী আশরফ আলি-সহ ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তাঁরা সকলেই হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছিলেন। সম্প্রতি শুকদেব, আশরফ, জুলসুর রহমান, সাহাবুদ্দিন হালসানা, খোরশেদ শেখ এবং ইজার পিয়াদা রাজ্যের আইন দফতরে লিগ্যাল রিমেমব্রান্সের কাছে দাবি করেন, রাজনৈতিক চক্রান্ত করে তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে। ফলে, মামলা থেকে অব্যাহতি চান তাঁরা।
মুখ্য সরকারি আইনজীবী তথা কালীগঞ্জের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক (এ বার পরাজিত) নাসিরুদ্দিন আহমেদ জানান, ছ’জনের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে আবেদন করার নির্দেশ দিয়ে লিগ্যাল রিমেমব্রান্সের চিঠি তাঁর হাতে এসে পৌঁছয় গত ২৭ এপ্রিল। সেই মতো, গত ২ মে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩২১ ধারায় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের (দ্বিতীয়) বিচারকের কাছে মামলা তোলার আবেদন জানান তিনি। এ দিন তার শুনানি শুরু হয়।
ক্ষমতাবদলের পরে রাজনৈতিক বন্দিদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়া নতুন কিছু নয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বিভিন্ন জেলে বন্দি বিপ্লবীরা মুক্তি পেয়েছেন। ১৯৭৭ সালে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসেও বহু নকশাল বন্দির বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিয়েছিল। তৃণমূলও প্রথম ক্ষমতায় এসে শান্তিপুরের একটি জোড়া খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরদ্ধে মামলা তুলে নেয়। ২০০৭ সালে বাম আমলে সেই মামলা হয়েছিল। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে সরকার পক্ষের আর্জিতে সাড়া দিয়ে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা (প্রথম) বিচারক অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস করেন।
এ দিন আদালতে মামলা তুলে নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে ১৯৮৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের কথা উল্লেখ করেন মুখ্য সরকারি আইনজীবী। ২০১১ সালে শান্তিপুরে জোড়া খুনের মামলা তুলে নেওয়ারও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রত্যাশিত ভাবেই, সিপিএম এর মধ্যে সংকীর্ণ রাজনীতি দেখেছে। দলের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র কটাক্ষ, ‘‘খুনি-দুষ্কৃতীদের সরকার তো খুনিদের বাঁচাবেই। আগে শান্তিপুরের ক্ষেত্রেও ওরা এই কাণ্ড করেছিল। এতে মানুষের নিরাপত্তা আরও বেশি বিঘ্নিত হবে।’’ কারামন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাসের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘গোটাটাই হচ্ছে আইন দফতর মারফত। কিন্তু খুনিরা তো সবাইকেই খুনি দেখে! ওই ছ’জন যে সমাজসেবী, এলাকার লোক জানে।’’
যা শুনে চমকে উঠেছেন আসাদুল শেখের বৌদি তথা অভিযোগকারী মরিচা বিবি। তিনি বলেন, “দেওরকে খুন আর আমাদের ঘরছাড়া করার পিছনে ওরাই তো প্রধান কারিগর। ওরাই যদি ছাড়া পেয়ে যায় তা হলে আর সুবিচার পাব কী করে! জানি না সরকারের একি ভূমিকা।” বিষয়টি কেঁচে যেতে পারে এই ভয়ে শুকদেব ব্রহ্মরা অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি। পরের শুনানি হবে ৩০ মে।