আয় তবে...। বড়দিনে ভিড় ভাঙল হাজারদুয়ারিতে। নিজস্ব চিত্র
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে হাতে আসা টিকিট। তাই সাতপাঁচ না ভেবে ট্রেনে উঠেছিলেন বারাসতের মাধব মণ্ডলরা। দলে রয়েছেন তাঁর কয়েক জন পরিচিত। হইহই করে তাঁরা পৌঁছে যান লালবাগে।
সে তো না হয় হল। কিন্তু তার পর? আসল গোল তো বেঁধেছে তার পরেই। শহরের বিভিন্ন হোটেলে ঘুরে তাঁরা টের পেয়েছেন, ট্রেনে আসন পাওয়া, আর হোটেলে ঘর মেলা এক নয়। ট্রেনে না হয় দাঁড়িয়ে আসা যায়। তাই বলে শীতের রাতে তো আর পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নীচে কাটানো যায় না। আশা যখন প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন মাধববাবু, সেই সময় মুশকিল আসান করেন মুর্শিদাবাদ পর্যটন সহায়তা কেন্দ্র। একটি হোটেলে দু’টি ঘরের ব্যবস্থা করে দেয় তারা। পর্যটন সহায়তা কেন্দ্রের কর্ণধার স্বপন ভট্টাচার্য জানান, গত কয়েক দিন ধরে হোটেলের ঘর পাওয়ার জন্য বিভিন্ন পর্যটক এসে আবেদন করছেন। কিন্তু সকলকে ঘর জোগাড় করে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দুটি পরিবার বেড়াতে আসেনি বলে তাদের জায়গায় হোটেল মালিককে অনুরোধ করে বারাসতের পর্যটকদের ঘর দেওয়া গিয়েছে।
এ যদি মুর্শিদাবাদের ছবি হয়, তা হলে নদিয়ার ভিড়ের ছবি আলাদা নয়। নবদ্বীপ মায়াপুর তো রয়েইছে, ভিড়ের চোটে কৃষ্ণনগরের হোটেলগুলিতেও ঠাঁই নেই রব। মায়াপুরে হোটেল, মঠ এবং আশ্রমে কোনও জায়গা নেই। সেখানে ঘর না পেয়ে কয়েক হাজার পর্যটক ইস্কন মন্দির চত্বরে টিনের শেড মাথা গোঁজার জন্য বেছে নেন।
রবিবার দুপুর থেকে মায়াপুর-নবদ্বীপের নানা হোটেল, অতিথিশালা ভরে যায়। বহু পর্যটক তাই বাধ্য হন কৃষ্ণনগরে ফিরে যেতে। মায়াপুর হোটেল ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক প্রবীর দেবনাথ বলেন, ‘‘আমি নিজের হোটেলেই শতাধিক পর্যটককে ঘর দিতে না পেরে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি।’’ ইস্কন মন্দিরের তরফে রমেশ দাস বলেন, ‘‘সোমবার সকাল থেকে মূল মন্দিরে ঢোকার লাইন এতটাই দীর্ঘ ছিল যে, পরের দিকে পর্যটকদের জন্য আরও তিনটি গেট খুলে দিতে হয়।’’
পর্যটকেরা ভাড়া নিয়ে নেওয়ায় বহরমপুরে নানা পরিবহণ সংস্থার গাড়ি অমিল। বহরমপুর থেকে লালবাগ ঘুরতে যাওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের ভাড়া দিয়েও গাড়ি মিলছে না। দুর্গাপুর থেকে বাসে বহরমপুর নেমে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে সপরিবার লালবাগ যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল গায়ত্রী মুখোপাধ্যায়ের। গাড়ি না পেয়ে তাঁরা সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে ভিড়ে ঠাসা অটোয় চড়ে লালবাগ যান। গায়ত্রী বলেন, ‘‘বেড়াতে এসে গাড়ি না পাওয়ার অভিজ্ঞতা নতুন। এত ভিড় জানলে এই সময় আসতাম না।’’
বড়দিনের ভিড় সামলাতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা হয় নবদ্বীপের পুলিশ প্রশাসন ও জলপথ পরিবহণ সমিতির কর্তাদের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ভুটভুটি, লঞ্চ চালিয়েও সেই ভিড় সামলাতে পারেননি তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy