সুস্থ: অস্ত্রোপচারের পর পারভিনা।—নিজস্ব চিত্র।
আজ, ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষা দিবস।
করিমপুরের পারভিনা বিবি অবশ্য সে কথা জানেন না। কিন্তু এটা জানেন, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পাশে না দাঁড়়ালে তাঁকে বড় বিপদে পড়তে হত। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে বছর চল্লিশের পারভিনা বলছেন, ‘‘এই ডাক্তারদের জন্যই নতুন জন্ম পেলাম।’’
কলকাতার সরকারি হাসপাতাল তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। বেসরকারি হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছিল, অস্ত্রোপচারের জন্য ৮-১০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। কিন্তু অত টাকা কোথায়! নিরুপায় হয়ে বাড়ি ফেরেন হতাশ পারভিনা।
পরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে অর্থ-শল্য বিশেষজ্ঞ অমরেন্দ্রনাথ রায়কে দেখানোর পরে তিনি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। অমরেন্দ্রনাথবাবু জানান, বছর তিনেক আগে ওই মহিলার মেরুদণ্ডে যক্ষা ধরা পড়ে। তার ফলে তিনটে ভার্টিব্রা জোড়া লেগে পিঠ কুঁজো হয়ে যায়। স্বাভাবিক কাজকর্ম তো দূরের কথা, ঠিক মতো হাঁটাচলাও করতে পারতেন না।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ওই রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে। অমরেন্দ্রনাথবাবুর কথায়, ‘‘অস্ত্রোপচারের আগে অধ্যাপক জে এন পাল একটি টিম করে দেন এবং অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা করা হয়। পরে আমার সঙ্গে চিকিৎসক এ কে বেরা এবং তিন জন অ্যানাসথেটিস্ট ছিলেন।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওই অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি ছিল। সামান্য ভুল হলে ওই মহিলা সারা জীবনের মতো হাঁটাচলা করতে পারতেন না। দু’টি পা পঙ্গু হয়ে যেত। কিন্তু সফল অস্ত্রোপচারের পরে ওই মহিলা এখন উঠে দাঁড়াতে পারছেন। হাঁটাচলাও করতে পারছেন বলে দাবি চিকিৎসকদের।
পারভিনা বিবি জানান, অস্ত্রোপচারের আগে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার কথা চিকিৎসকেরা তাঁকে আমাকে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁরা অস্ত্রোপচার করতে রাজি হয়েছেন শুনে পারভিনা আর কিছু ভাবেননি। তাঁর কথায়, ‘‘মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারদের ঋণ আমি কোনওদিন ভুলব না।’’
পারভিনার স্বামী সাহারুল মালিথ্যা বলছেন, ‘‘সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের যা সব নমুনা দেখতে হল তাতে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতিই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছিলাম। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজ যে ভাবে আমাদের মতো গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াল তা সারাজীবন মনে রাখব। নিখরচায় যে এত বড় একটা অস্ত্রোপচার হতে পারে, ভাবতেই পারিনি।’’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই অস্ত্রোপচার করতে মহিলার শরীরে ২০টি স্ক্রু, ১২ ইঞ্চির কোবাল্ট ক্রোমিয়াম দুটি রড লেগেছে। ওই উপকরণের দাম প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল জানান, টেন্ডার ডেকে ওই দেড় লক্ষ টাকার উপকরণ কিনে নিয়ে আসার পরে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাঁর দাবি, এটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বড় সাফল্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy