Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হোটেলে নেতার দেহ, ধৃত দু’জন

 হোটেলের তালাবন্ধ ঘরে দু’দিন ধরে পড়ে দেহ। পুলিশ তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে নিখোঁজ তৃণমূল নেতাকে। তবে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। যাদের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন কায়েম শেখ (৪৫) নামের ওই নেতা, তাদের গ্রেফতার করতে লালবাগের হোটেল থেকে মেলে তাঁর দেহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
লালবাগ শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:১৩
Share: Save:

হোটেলের তালাবন্ধ ঘরে দু’দিন ধরে পড়ে দেহ। পুলিশ তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে নিখোঁজ তৃণমূল নেতাকে। তবে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। যাদের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন কায়েম শেখ (৪৫) নামের ওই নেতা, তাদের গ্রেফতার করতে লালবাগের হোটেল থেকে মেলে তাঁর দেহ।

এই ঘটনায় পুলিশ রাজু শেখ এবং তার সৎ মেয়ে আদুরি খাতুনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, আক্রোশের বশেই রাজু কায়েমকে খুন করেছে। তবে কায়েমের দেহ দু’দিন ধরে বন্ধ ঘরে পড়ে থাকলেও কেন হোটেলের কর্মীরা জানতে পারলেন না তার উত্তর খুঁজছে পুলিশ। খবর পেয়ে কায়েম শেখের পড়শি ও পরিবারের লোকজন উত্তেজিত হয়ে হোটেল ভাঙচুর করে। আগুনও ধরিয়ে দেয়।

কায়মের বাড়ি বহরমপুরের রাধারঘাট ১ পঞ্চায়েতের বাজারপাড়ায়। গত পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমের টিকিটে জয়ী হন কায়েম। পরে তৃণমূলে যোগ দেন। পুলিশ জানায়, পড়শি রাজু শেখ বাংলাদেশি। মুম্বইয়ে গাড়ি চালাত। সেখানেই কাজের সন্ধানে যাওয়া বাজারপাড়ার বাসিন্দা নাজা বিবির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় এবং বিয়ে করে দু’জনেই বাজারপাড়ায় এসে থাকতে শুরু করে। নাজা বিবির প্রথম পক্ষের তিন ছেলেমেয়ে রয়েছে।

গত রবিবার দুপুরে পড়শি রাজু শেখ ও তার সৎ মেয়ে আদুরির সঙ্গে তাদের এক আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার নাম করে কায়েম বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তার পর আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। বিভিন্ন জায়গায় তাঁর খোঁজ না পেয়ে পরিবারের লোকেরা সোমবার সকালে বহরমপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

মঙ্গলবার সকালে ইসলামপুর থানার গোপীনাথপুর গ্রাম থেকে রাজু ও তার মেয়েকে আটক করে পুলিশ। জেরায় রাজু জানায়, লালবাগের একটি হোটেলের ঘরে কায়েমের দেহ পড়ে রয়েছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ হোটেলের ঘর কায়েমের দেহ উদ্ধার করে। মুর্শিদাবাদের আইসি আশিস দেব জানান, গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে।

রাজু পুলিশকে জানায়, কায়েম শেখের সঙ্গে তার সৎ মেয়ে আদুরির সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যা মেনে নিতে পারেনি সে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে কায়েম তার কাছে টাকা-পয়সা দাবি করতেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে বাংলাদেশি পরিচয় পুলিশের সামনে ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিতেন।

রাজুর দাবি, সম্প্রতি ১০ হাজার টাকা দাবি করে তৃণমূলের ওই পঞ্চয়েত সদস্য। কিন্তু ওই টাকা তার পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না বলেই বহরমপুর থানার তারাকপুরে এক আত্মীয়ের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার নাম কায়েমকে ডেকে নিয়ে যায়। গাড়িতে করে লালবাগের ওই হোটেলে নিয়ে আসে কায়েমকে। হোটেলের ঘরে মেয়ের সামনে দু’জনে বসে মদ খায়। পরে মদ্যপ অবস্থায় ওই পঞ্চায়েত সদস্য সৎ মেয়েকে ধরে টানাটানি শুরু করলে তখন তাঁর গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে খুন করে খাটের উপরে উপুড় করে ফেলে রেখে বাইরে থেকে হোটেলের ঘরে তালা লাগিয়ে ‘ঘুরে আসছি’ বলে বাবা-মেয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, রাজুর দাবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, যে গাড়িতে চড়ে কায়েম শেখকে নিয়ে আসা হয়, সেটি লালবাগের হুলাসপুরে একটি ঝোপের মধ্যে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কায়েম শেখের ভাই আয়ুব শেখ জানান, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কায়েম সাড়ে তিন লক্ষ টাকা নিয়ে যায়। ওই টাকার হদিস পায়নি পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arrested murder TMC Leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE