নারী পাচারকারী তকমা দিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন উতেরা বিবিকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় আরও দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এই নিয়ে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়াল ১২। তবে ঘটনায় জড়িত আরও অনেকে এখনও পুলিশের নাগালের বাইরে।
শুক্রবার রাতে শাহজামাল শেখ ও এজাবুল শেখ নামে দু’জনকে ধরে পুলিশ। আগে যে ১০ জন গ্রেফতার হয়েছিল, তার মধ্যে তিন জনকে জেরা করার জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছিল। শনিবার পাঁচ জনকেই জঙ্গিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। সকলকেই ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সকালে রঘুনাথগঞ্জ থানা এলাকার সেকেন্দ্রা গ্রামে পিটিয়ে মারা হয়েছিল চার সন্তানের মা, বছর চল্লিশের উতেরা বিবিকে। আগের রাতে তাছেই পানানগর গ্রামের বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি ওই গ্রামে একটি বাড়ির দাওয়ায় এক কিশোরীর পাশে শুয়েছিলেন। সেখান থেকে ধরে এনে একটি পরিত্যক্ত ট্রাক্টরের সঙ্গে বেঁধে তিন ঘণ্টা ধরে মারধর করা হয়। গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও তাঁকে উদ্ধার করা যায়নি।
জঙ্গিপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মুর্শেদ জাহাঙ্গিরের মতে, “দেশে আইনের শাসন রয়েছে। তা সত্ত্বেও আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কিছু মানুষ ক্রমশ যেন বিবেকহীন হয়ে পড়ছে। তাই খুন হতে হচ্ছে উতেরাদের। তবে কোনও নির্দোষ গ্রামবাসী যাতে গক্রেফতার না হন, পুলিশকে নজর রাখতে হবে।”
গত দু’দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা পানানগরে উতেরার বাপের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেছেন। উতেরার দাদা উকিল শেখ বলেন, “আমরা কারও কাছে কোনও আর্থিক সাহায্য চাই না। চাই মানবিক সমর্থন। পুলিশ যাতে প্রকৃত দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে, সেটা দেখুন।”
কংগ্রেস বিধায়ক আখরুজ্জামান গোড়া থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে মুখ খুলেছেন। এত দিন চুপ থাকলেও এ বার মাঠে নেমেছে বিজেপি। দলের সংখ্যালঘু শাখার রাজ্য সম্পাদক মোদাস্সর হোসেন বলেন, “প্রকাশ্যে এ ভাবে এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা খুন হলেন। সাক্ষী কয়েকশো মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়। ছড়িয়েছে অজস্র ছবি। অথচ রাজ্য সরকারের মুখে টুঁ শব্দটিও নেই।” তাঁর দাবি, শুক্রবার রাতে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গেও তাঁর আলোচনা হয়েছে।
রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘‘এই সব ঘটনা কড়া হাতে মোকাবিলা করতে হবে, এটাই রাজ্য সরকারের নির্দেশ। পুলিশ ধরপাকড় শুরু করেছে। দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আমরা সকলে ওই পরিবারের পাশে আছি।” তৃণমূলের জঙ্গিপুর মহকুমা সভাপতি বিকাশ নন্দ আবার বলেন, “গত ২১ জুন রাতে সেকেন্দ্রা গ্রাম থেকেই এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে উদ্ধারের ব্যাপারেও পুলিশের তৎপর হওয়া উচিত।”
রঘুনাথগঞ্জ থানার দাবি, গ্রামে পুলিশি অভিযান জারি রয়েছে। নানা ছবিতে দেখা যাচ্ছে এমন জনা তিরিশ লোকের খোঁজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy