Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
শিশুর ঠিকানা এখন হোম

সামিম না শুভজিত্? তিন বছরের শিশুকে নিয়ে টানাপড়েনে দুই ‘মা’

এক মা বলছেন, ‘‘সেই চোখ, সেই নাক, সেই মুখের গড়ন। আমি আমার ছেলেকে চিনব না?’’ আর এক মা বলছেন, ‘‘তা কী করে হয়? ও তো আমাদেরই সন্তান।’’

থানায়: বিজলির সঙ্গে সেই শিশু। নিজস্ব চিত্র

থানায়: বিজলির সঙ্গে সেই শিশু। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ১৪:০০
Share: Save:

বাড়ির উঠোনে খেলছিল বছর তিনেকের শিশুটি। তার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে সন্দেহ হয় চাপড়ার বাঙালঝি থেকে মুরগি বিক্রি করতে আসা লোকটির। তাঁর মনে হয়, এই ছেলেটি তাঁর গ্রামের হারিয়ে যাওয়া সামিম নয় তো?

শনিবার সন্ধ্যায় গ্রামে ফিরে সরিফা বিবিকে নিজের সন্দেহের কথা বলেন সেই মুরগি বিক্রেতা হাইবার শেখ। সারাটা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি সরিফা ও তাঁর স্বামী হাজু শেখ। রবিবার কাকভোরে তাঁরা ছুটেছিলেন ভীমপুরের পূর্ব ভাতজাংলা গ্রামে। পেশায় দিনমজুর সঞ্জিত দাস, তাঁর স্ত্রী বিজলি দাস ও তিন বছরের শিশুটি তখন সবে ঘুম থেকে উঠেছেন। মা বলে ডাকল ছেলে। একসঙ্গে সাড়া দিলেন দুই মহিলা। একজন বললেন, ‘‘সামিম, মানিক আমার। আমি তোমার আম্মা।’’ ডুকরে কেঁদে উঠল ছেলে। তাকে কোলে তুলে নিলেন বিজলি, ‘‘কাঁদে না শুভজিৎ। এই তো আমি।’’

এক মা বলছেন, ‘‘সেই চোখ, সেই নাক, সেই মুখের গড়ন। আমি আমার ছেলেকে চিনব না?’’ আর এক মা বলছেন, ‘‘তা কী করে হয়? ও তো আমাদেরই সন্তান।’’ খবর যায় পুলিশে। প্রথমে ভীমপুর ও পরে চাপড়া থানায় নিয়ে আসা হয় বিজলি, সঞ্জিত ও বছর তিনেকের শিশুটিকে। সরিফা বিবি কোলে নিতে গেলেই সে কেঁদেছে। সামাল দিতে হয়েছে বিজলিকে। বছর দুয়েক আগে বাঙালঝি গ্রামে বাড়ির সামনে থেকে আচমকা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল বছর খানেকের সামিম শেখ। বাবা হাজু শেখ চার আত্মীয়ের নামে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আট জনকে গ্রেফতারও করে। কিন্তু শিশুটির সন্ধান মেলেনি।

পুলিশের দাবি, জেরায় দাস দম্পতি কবুল করেছেন, তাঁরা শিশুটির জন্মদাতা বাবা-মা নয়। তাঁদের দাবি, প্রায় ১৫ বছর বিয়ে হয়ে গেলেও তাঁদের কোনও সন্তান হয়নি। সন্ধ্যামাঠপাড়ার বাপি দাস নামে এক যুবক বছর দুয়েক আগে তাঁদের জানায়, একটা বাচ্চা আছে। চাইলে তাঁরা দত্তক নিতে পারেন। বাপি তাঁদের নিয়ে যায় মধ্যমগ্রামের ফুলি দাস নামে এক মহিলার কাছে। সে ওই শিশুটিকে নিজের সন্তান বলে দাবি করে তাঁদের হাতে তুলে দেয়।

জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “ইতিমধ্যে ওই দাস দম্পতি ও বাপি দাসকে আটক করা হয়েছে। ফুলি দাসকে ধরতে পারলেই গোটা বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’ নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন রিনা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত শিশুটিকে হোমে রাখা হবে।” আর মুরগি বিক্রেতা হাইবার শেখ বলছেন, ‘‘যদি ছেলেটি হারিয়ে যাওয়া সামিম হয় তার থেকে আনন্দের খবর আর কী-ই বা হতে পারে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mothers Child Confusion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE