পরিজনদের কান্না।—সাফিউল্লা ইসলাম
কাজ দিয়ে যায় চেনা!
দানা কোথায় বিঁধবে তা যেন আগে থেকেই ঠিক করা থাকে তার। তার সেই দানা খেয়েও বেঁচে থাকা নাকি আশ্চর্যের ব্যাপার। এমনকী, কাজের রকম দেখলে পুলিশও বুঝতে পারে কারিগর কে!
এ তল্লাটে তার তেমন নামডাক নেই। কিন্তু মুম্বইয়ের অন্ধকার জগৎ তাকে এক ডাকে চেনে। ডোমকলের অজগাঁয়ের সেই মিরশাদ শেখ ফের খবরের শিরোনামে। বৃহস্পতিবার জোড়া খুনের ঘটনার পর থেকেই পুলিশ তাকে খুঁজছে।
এ দিন সকালে কালো বাইকে তিন জন এসেছিল ডোমকলের রমনা শেখপাড়ায়। সেখানে চায়ের দোকানে আরও লোকজনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন ইয়ার আলি শেখ (৫২) ও আবেদুল ইসলাম (৪৭)। সেই সময়ে বাইকে উড়ে আসে মিরশাদ। সঙ্গে ছিল আরও দু’জন। সকলের মাথায় হেলমেট ছিল।
বাইক থেকেই ছিটকে আসে একের পর এক গুলি। লুটিয়ে পড়েন ইয়ার ও আবেদুল দু’জনেই। বাজারের মধ্যে আচমকা এমন ঘটনায় ভ্যাবাচাকা খেয়ে যান লোকজন। কে করবেন বোঝার আগেই মাথা থেকে হেলমেট খুলে ফেলে মিরশাদ। হুঙ্কার দেয়, ‘‘মুখ ঢাকা থাকলে তোরা তো আবার চিনতে পারবি না। এই দ্যাখ, আমি মিরশাদ। ভাইয়ের খুনের বদলা নিলাম।’’
তারপর ধুলো উড়িয়ে সাঁ করে মিলিয়ে যায় বাইক। জখম দু’জনকেই ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ইয়ার সেখানেই মারা যান। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আবেদুল।
এ দিন রাত পর্যন্ত মিরশাদ ও তার সঙ্গীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, এমন কাণ্ড করে মিরশাদ যাতে মুম্বই পালাতে না পারে তার জন্য আমরা কড়া নজর রাখছি।
কী ভাবে মুম্বইয়ের অন্ধকার জগতে পা রাখল মিরশাদ?
পুলিশের দাবি, এক সময় জেরায় মিরশাদ জানিয়েছিল, ১৮ বছর বয়সে সে বাবাকে খুন হতে দেখেছিল। আর তারপর থেকেই মাথায় খুন চেপে যায় তার। এলাকায় থেকে তেমন কিছু করতে না পেরে এক বন্ধুর সঙ্গে চলে যায় মুম্বই। সেখানে গিয়ে প্রথমে রাজমিস্ত্রির কাজ করলেও পরে অন্ধকার জগতে হাত পাকে তার।
কেবল হাত পাকানোই নয়, ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মুম্বই পুলিশ মিরশাদকে সঙ্গে করে এই জেলায় নিয়ে জানিয়েছিল আরও চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। কী রকম?
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘মিরশাদকে মুম্বই পুলিশ চেনে মুভিং শ্যুটার হিসেবে। যে কিনা চলম্ত গাড়ি থেকে অন্য একটি চলন্ত গাড়িতে বসা কাউকে লক্ষ্য করে নিখুঁত নিশানায় দানা পুরে দিতে পারে। আর সেই ‘গুণের’ জন্য তার দরও যথেষ্ট। এক একটা অপারেশনের জন্য সে কমপক্ষে দু’লক্ষ টাকা নিত। মুম্বইয়ে সে তিনটি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত।
তবে তার সব কাণ্ড যে মুম্বইয়ে, এমনও নয়। তার ‘হাতের কাজ’ দেখেছে ইসলামপুরও। বছর দু’য়েক আগে ওই এলাকায় একটি ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছিল ৩০ রাউণ্ড গুলি ও একটি কারবাইন। সেই ঘটনাতেও পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল মিরশাদ। জখম হয়েছিলেন দু’জন পুলিশকর্মী।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, আরশাদ বাইরে থাকায় কিছুটা রক্ষে। কিন্তু হাতের কাজ দেখলেই বোঝা যায় সে এলাকায় এসেছে। বছর দু’য়েক আগে মিরশাদের ভাই আরশাদকে নির্মম ভাবে খুন করে দুষ্কৃতীরা। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন ইয়ার আলি। সেই খুনের বদলা নিতেই মিরশাদ এমন কাণ্ড করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy