Advertisement
২৪ মে ২০২৪

ফের উত্তপ্ত ধুলিয়ান, প্রহৃত পুলিশও

টহলরত সিভিক ভলান্টিয়ারের উপরে হামলা, পাল্টা হিসেবে বাড়ি বাড়ি ঢুকে পুলিশি হানা ও বেধড়ক মারধরের অভিযোগ। প্রতিবাদে কংগ্রেসের সামশেরগঞ্জ থানা ঘেরাও। সেই দেখে পুলিশের সমর্থনে তৃণমূলের মিছিল —সোমবার একের পর এক ঘটনায় গোটা দিন ধরেই উত্তেজনার আঁচ পোহাল ধুলিয়ান শহর। ঘটনায় আহত দুই পুলিশ কর্মী।

সামশেরগঞ্জ থানা ঘেরাও কংগ্রেস কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র।

সামশেরগঞ্জ থানা ঘেরাও কংগ্রেস কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩২
Share: Save:

টহলরত সিভিক ভলান্টিয়ারের উপরে হামলা, পাল্টা হিসেবে বাড়ি বাড়ি ঢুকে পুলিশি হানা ও বেধড়ক মারধরের অভিযোগ। প্রতিবাদে কংগ্রেসের সামশেরগঞ্জ থানা ঘেরাও। সেই দেখে পুলিশের সমর্থনে তৃণমূলের মিছিল —সোমবার একের পর এক ঘটনায় গোটা দিন ধরেই উত্তেজনার আঁচ পোহাল ধুলিয়ান শহর। ঘটনায় আহত দুই পুলিশ কর্মী। তার মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। অন্য দিকে, পুলিশের মারে আহত হয়েছেন সাত জন মহিলা-সহ ২২ জন বলে অভিযোগ কংগ্রেসের। পুলিশের মারে আহত টুম্পা বিবি নামে এক তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘ধুলিয়ানে পুর নির্বাচনে জিততে এখন পুলিশকে নামিয়েছে তৃণমূল। রবিবার মাঝরাতে তিনটি গাড়ি পুলিশ ধুলিয়ানের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাঠ পাড়ায় দরজা ভেঙ্গে বাড়ি বাড়ি ঢুকে যেভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে, মহিলাদের মারধর করেছে তা দেখিয়ে দিচ্ছে সংখ্যালঘুদের কোনও নিরাপত্তা নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে। পুলিশি অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পায়নি অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, ১০ মাসের শিশুরাও। সোমবার পুলিশ সুপারের কাছে আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছি। তাতে সন্ত্রাস বন্ধ হলে ভাল, না হলে এ জেলায় পুরভোটে যদি কোও অঘটন ঘটে তার দায় প্রশাসনের।’’ অধীরের উত্তরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, ‘‘হুমকি দেওয়া ওঁর স্বভাব। এ জেলায় তৃণমূলের উত্থান তার পায়ের তলার মাটি সরিয়ে দিয়েছে। তাই কংগ্রেস হারবে জেনেই সন্ত্রাসের অজুহাত খাড়া করছে।’’

ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাত ১২টা নাগাদ। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে মোটরবাইক নিয়ে পাহারা দিচ্ছিলেন জনা কয়েক সিভিক ভলান্টিয়ারস্‌ ও আরজি পার্টির সদস্যরা। সেই সময় তাঁরা স্থানীয় একটি মাঠে জনা কয়েক ব্যক্তিকে মদ খেতে দেখেন। তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁদের উপর চড়াও হয় মদ্যপরা। তাদের মোটরবাইক ভাঙচুর করে। টহলরত দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে বেধড়ক মারধর করে। তাঁদের মধ্যে সামশুল আলম নামে একজনকে অনুপনগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। এক আরজি পার্টির কর্মীর মাথাও ফেটে গিয়েছে। ওই ঘটনার ঘণ্টা খানেক পরে পুলিশ ওই এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেফতার করে।

তবে ওই ঘটনার পর পুলিশের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালানো নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। অভিযোগ, তল্লাশি চালানোর নামে বাড়ির স্ত্রী, পুরুষ এমনকী শিশুদেরও ঘর থেকে টেনে বের করে বেধড়ক পেটানো হয়। নিস্তার পায়নি অন্তঃসত্ত্বা মহিলাও। টুম্পা বিবি নামে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে অনুপনগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে টুম্পা বলেন, ‘‘রাত দুপুরে এলোপাথাড়ি লাথির পড়ার শব্দ শুনে দরজা খুলতে যাই। কিন্তু দরজা খুলতে না খুলতে পুলিশ আমাকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়।’’ গ্রামের বৃদ্ধা শরিফা বিবি বলেন, ‘‘দরজা খুলতে একটু দেরি হয়েছিল। তাতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে পুলিশ। আমার স্বামী ও ছেলেকে মারতে মারতে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ছেলেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে স্বামীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায় পুলিশ।’’

কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এ দিনের পুলিশি হানায় সাত মহিলা-সহ অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন। তাদের সকলকেই প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে হয়েছে। পুরভোটে তৃণমূলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে পুলিশ পরিকল্পিত ভাবেই কংগ্রেসি সমর্থক পরিবারের উপর এই অত্যাচার চালিয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এক আরজি পার্টির কর্মীকে দিয়ে মিথ্যে কেস রুজু করিয়ে ে২০ জনকে আসামী করা হয়েছে। যাতে ভোট দিতে না পারেন সেজন্য ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকালে ধুলিয়ানের পথে নেমে পড়ে কংগ্রেস সমর্থকরা। থানা ঘেরাও করে শুরু হয় বিক্ষোভ। যদিও ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পুলিশ লাঠি হাতে তাড়া করে তা সরিয়ে দেয়। অন্য দিকে, বিক্ষোভের পাল্টা হিসেবে এ দিন তৃণমূল সমর্থকরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একটি মিছিল বের করে। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি কাউসার আলি বলেন, ‘‘রাতের বেলায় মাতালদের আড্ডাখানা ভাঙতে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু পুলিশকে যেভাবে মারধর করা হয়েছে তা সমর্থন করা যায় না। আসলে কংগ্রেস ধুলিয়ানে হেরে যাওয়ার ভয়ে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা তা রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করব।’’ এ দিন বিকেলেও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তৃণমূল মহিলাদের নিয়ে মিছিল বের করে।

প্রসঙ্গত, গত এক সপ্তাহ ধরে পুর নির্বাচনের প্রচারকে ঘিরে তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে অশান্তি চলছে। তার জেরে শনিবার কংগ্রেস বন্‌ধ ও রবিবার সামশেরগঞ্জ থানা ঘেরাও করা হয়।

এ দিকে, পুর এলাকায় সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশ শাসক দলের হয়ে কাজ করছে এই অভিযোগ তুলে সোমবার সকালে রঘুনাথগঞ্জ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জঙ্গিপুরে পুলিশকে নামিয়ে ভোটের দিন ব্যাপক সন্ত্রাস সৃস্টির পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল। বিষয়টি নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’’

পুলিশ সুপার সি সুধাকর অবশ্য বলেন, ‘‘ধুলিয়ান ও জঙ্গিপুর পুরসভার সমস্ত ঘটনার প্রতিই নজর রাখা হচ্ছে । ভোট নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই। সর্বত্রই কড়া পুলিশি ব্যবস্থা থাকবে ভোটের দিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE