Advertisement
E-Paper

নকশিকাঁথায় স্বপ্ন বুনছেন মাফুজা, সরিফারা

তাঁরা সংসার সামলে হাতে তুলে নিলেন সূচ-সুতো। বুনতে শুরু করলেন নকশিকাঁথা। সেই কাঁথাই এখন স্বপ্নপূরণ করছে মাফুজাদের।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৬
কাঁথা বুনতে ব্যস্ত মহিলারা। চাপড়ায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

কাঁথা বুনতে ব্যস্ত মহিলারা। চাপড়ায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

সে সময় সংসারে শ্রী ফিরছিল ঠিকই। কিন্তু সে সময় বড় সুখের ছিল না।

কাঁটাতারে ঘেরা চরাচরে সুয্যি পাটে গেলেই গাঁয়ের বেশ কিছু পুরুষদের ব্যস্ততা বেড়ে যেত। সীমান্ত পেরিয়ে কাশির সিরাপ পৌঁছে যেত ওপারে। সকালে হাসিমুখে বাড়ি ফিরতেন ছেলেরা। কিন্তু দুশ্চিন্তায় রাতভর দু’চোখের পাতা এক করতে পারতেন না মাফুজা বিবি, সরিফা বিবিরা (সকলের নাম পরিবর্তিত)।

তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাচারে ভাটা পড়ল। ভাটা পড়ল আয়েও। গ্রামের বহু পুরুষ কাজের সন্ধানে পাড়ি দিলেন ভিনরাজ্যে। ধুঁকতে থাকা সংসারের হাল ধরতে হল মাফুজা, সরিফাদেরই।

তাঁরা সংসার সামলে হাতে তুলে নিলেন সূচ-সুতো। বুনতে শুরু করলেন নকশিকাঁথা। সেই কাঁথাই এখন স্বপ্নপূরণ করছে মাফুজাদের। এখন দু’জনের আয়ে ফের শ্রী ফিরছে সংসারে। সঙ্গে উপরিপাওনা, কোনও দুশ্চিন্তা নেই। নেই ঝুঁকিও। সে টাকায় পরবের বাজার হয়, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসা হয়। ছেলেমেয়েরা নিয়মিত স্কুলে যায়। তাদের গৃহশিক্ষকও আছে। মাফুজারা বলছেন, “ভাগ্যিস মায়ের কাছে নকশিকাঁথা বুনতে শিখেছিলাম।’’

চাপড়ার পাথুরি, বড় আন্দুলিয়া, ছোট আন্দুলিয়া, হাঁটরা, লক্ষীগাছা, বৃত্তিহুদা, তালুকহুদা, নাকাশিপাড়ার মোটা, বালিয়াডাঙা, গোয়ালডাঙার মতো এলাকার মহিলারা দিনরাত এক করে বুনে চলেছেন নকশিকাঁথা। বড় ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে সেই নকশিকাঁথা চলে যাচ্ছে দিল্লি, রাজস্থান, এমনকী জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড সহ একাধিক দেশেও।

এমনই এক ব্যবসায়ী উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা এ কে সিংহ। তাঁর কথায়, “ওই এলাকার প্রায় তিন হাজার মহিলা আমাকে নকশিকাঁথা তৈরি করে দেন। ভাল পারিশ্রমিকও পান।’’ একটা নকশিকাঁথা তৈরির মজুরি প্রায় দেড় হাজার টাকা। সংসারের সমস্ত কাজ সামলে মাসে একটা কাঁথা তৈরি করে ফেলছেন অনেকেই।

এখন ব্যবসায়ীরা ছাড়াও গ্রামের মহিলাদের কর্মসংস্থানের সম্ভবনা দেখে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে অনেক স্বনির্ভর গোষ্ঠীও। চাপড়ার এক স্বনির্ভর গোষ্ঠী ইতিমধ্যে প্রায় দুশো মহিলাকে দিয়ে নকশিকাঁথা তৈরি করাচ্ছেন। গোষ্ঠীর সম্পাদক রিজিয়া দফাদার বলছেন, ‘‘নকশিকাঁথাই এলাকার আর্থ-সামাজিক চেহারা অনেকটা বদলে দিয়েছে।”

নকশিকাঁথা এই সব এলাকার মানুষের কাছে নতুন নয়। নিজেদের প্রয়োজনে কিংবা প্রিয়জনকে উপহার দিতে তাঁরা এই কাঁতা তৈরি করতেন। কিন্তু কাঁথা তৈরি করে এ ভাবে যে টাকা রোজগার করা যায়, শ্রী ফেরানো যায় সংসারে তা অবশ্য স্বপ্নেও ভাবেননি গ্রামের মহিলারা।

হাঁটরার আনোয়ারা বিবি বলছেন, “মায়ের কাছেই খেলার ছলে নকশিকাঁথা তৈরি করা শিখেছিলাম। সেই কাঁথাই আজ আমাদের স্বনির্ভর করছে, স্বপ্নপূরণ করছে!’’

Village women Nakshi Kantha Self help group
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy