Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হোমের শিশুদের নিয়ে আটে পা বিরাজের

হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ’ নয়, সকলেই একসঙ্গে গাইল ‘উই শ্যাল ওভারকাম’মজার ছলে বলা কথাটা কিন্তু মনে রেখেছে বিরাজ। গত কয়েক বছরে আত্মীয় ও বাড়ির লোকজন তাকে উপহার হিসেবে যে টাকা দিয়েছে সে খরচ করেনি। জমিয়ে রেখেছে নিজের একটি ছোট্ট বাক্সে। দিন কয়েক আগে গুনে দেখা যায় প্রায় ১৮ হাজার টাকা।

হ্যাপি-বার্থ-ডে...। করিমপুরে সেই হোমে। নিজস্ব চিত্র

হ্যাপি-বার্থ-ডে...। করিমপুরে সেই হোমে। নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭ ১৩:০০
Share: Save:

জন্মদিনটা হবে অন্যরকম!

বাবা-মা জানতে চাইতেন, ‘‘কী রকম?’’

ছেলের সেই এক গোঁ, ‘‘তা জানি না। তবে আর পাঁচ জনের মতো নয়।’’

বহু ভেবেচিন্তে বাবা-মা প্রস্তাবটা দিয়েছিলেন, তাহলে আট বছরের জন্মদিনের অনুষ্ঠানটা হোমেই হোক। ছেলে এক কথায় রাজি।

সে হোমও বেশি দূরে নয়। বাড়ি থেকে মেরেকেটে তিন কিলোমিটার। বুধবার করিমপুরের পাট্টাবুকার সেই হোমে ৪০ জন অনাথ শিশুদের সঙ্গে নিয়ে নিজের জন্মদিন পালন করল বিরাজ ধর।

করিমপুর আনন্দপল্লির বিপ্লববাবু ও প্রিয়াদেবীর একমাত্র সন্তান বিরাজ। তার পরিবারের দাবি, স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ওই ছাত্র বরাবর একটু অন্যরকম। সে যখন আরও ছোট ছিল তখন বাড়িতে কেউ ভিক্ষে করতে এলে বা সাহায্য চাইতে এলে হইহই কাণ্ড ঘটত। কী রকম?

বিরাজের জেঠু বিভাসবাবু জানান, হাতের সামনে একশো-পাঁচশো যে নোটই সে পেত, দিয়ে দিত তাঁদের। কিছু বললেই আবার বলত, ‘ওরা গরিব। ওদের টাকার দরকার।’ পরে ওকে মজা করে বলা হয়েছিল, ‘‘রোজ এ ভাবে টাকা দিয়ে দিলে তো আমাদেরই না খেয়ে থাকতে হবে রে। বড় হয়ে নিজের টাকা দিয়ে এ সব করবি।’’

মজার ছলে বলা কথাটা কিন্তু মনে রেখেছে বিরাজ। গত কয়েক বছরে আত্মীয় ও বাড়ির লোকজন তাকে উপহার হিসেবে যে টাকা দিয়েছে সে খরচ করেনি। জমিয়ে রেখেছে নিজের একটি ছোট্ট বাক্সে। দিন কয়েক আগে গুনে দেখা যায় প্রায় ১৮ হাজার টাকা।

বিরাজের বাবা বিপ্লববাবু পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি জানান, হোম সম্পর্কে ছেলের কোনও ধারণা ছিল না। গোটা ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতেই সে রাজি হয়। সেই মতো হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়। তাঁরাও সায় দেন।

এ দিন সকাল থেকে পাট্টাবুকার ওই হোমেও ছিল সাজ সাজ রব। বেলুন ও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল হোম চত্বর। ছোট ছোট আবাসিকেরাও এ দিন ছিল অন্য মেজাজে। দুপুরে ওই চল্লিশ জন আবাসিককে সঙ্গে নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটল বিরাজ। ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ’ নয়, সকলেই একসঙ্গে গাইল ‘উই শ্যাল ওভারকাম’।

নিজের হাতে কেক খাইয়ে দিয়ে সবার হাতে নতুন পোশাক, কলম ও মিষ্টি তুলে দিয়েছে বিরাজ। আর এই সমস্ত খরচ করা হয়েছে বিরাজের জমানো টাকা থেকে। নতুন বন্ধুদের পেয়ে উচ্ছ্বসিত বিরাজ বলছে, ‘‘আমার বন্ধুর সংখ্যা একলাফে অনেক বেড়ে গেল।’’ হোমের সুপার অমিতকুমার আইচ জানান, হোমে কোনও সমস্যা নেই ঠিকই। কিন্তু বাবা-মা ছেড়ে থাকার একটা কষ্ট তো আছেই। তবে এ দিন সবাই খুব খুশি।

পড়ন্ত বিকেলে বাবা-মাকে নিয়ে ঘরে ফিরছে বিরাজ। আচমকাই ছুটে এল নতুন বন্ধুরা, ‘‘হোমে আবার এসো কিন্তু!’’ বিরাজ শুধু ঘাড় নাড়ল। তার গলায় নোনতা স্বাদ। চোখ দু’টো জ্বালা করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chirldrens Home Birth Day করিমপুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE