Advertisement
E-Paper

কাদার গোলা থেকে মুক্তি কবে, প্রশ্ন লালগোলার

দুয়ারে বর্ষা। সেই কথাই জানান দিচ্ছে ইতিউতি দু’এক পশলা বৃষ্টি। কিন্তু সেই বৃষ্টিতেই বুক দুরুদুরু লালগোলার। শহর ইতিমধ্যেই কাদায় প্যাচপ্যাচে। এরপরে বর্ষাকাল যত গড়াবে ততই জল জমবে রাস্তাঘাটে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০১:২১
জল ভেঙে এ ভাবেই যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র

জল ভেঙে এ ভাবেই যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র

দুয়ারে বর্ষা। সেই কথাই জানান দিচ্ছে ইতিউতি দু’এক পশলা বৃষ্টি। কিন্তু সেই বৃষ্টিতেই বুক দুরুদুরু লালগোলার। শহর ইতিমধ্যেই কাদায় প্যাচপ্যাচে। এরপরে বর্ষাকাল যত গড়াবে ততই জল জমবে রাস্তাঘাটে। দিনের পর দিন সেই নোংরা জল ঠেলে অফিস যাওয়া, কচিকাঁচাদের স্কুলে যাওয়া প্রাণান্তকর অবস্থায় গিয়ে ঠেকে। অভিজ্ঞতা এত করুণ যে লালগোলাকে কেউ কেউ ব্যঙ্গ করে ‘কাদাগোলা’ বলেন।

লালগোলা ও বাহাদুরপুর— এই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে জেলার অন্যতম প্রাচীন শহর লালগোলা। প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বাস শহরে। রেলের শিয়ালদহ বিভাগের কৃষ্ণনগর শাখার শেষ স্টেশন লালগোলা। তারপরই পদ্মাপারে বাংলাদেশ। সীমান্তশহর লালগোলা থেকে ট্রেন ধরে সরাসরি শিয়ালদহ যাওয়ার সুবিধা থাকায় জঙ্গিপুর-রঘুনাথগঞ্জের মানুষের কাছেও লালগোলার গুরুত্ব রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এমন একটি জনবহুল শহরের মিনিস্টার রোড়, রুবি ডাক্তারের মোড় থেকে থানা যাওয়ার রাস্তা, থানা থেকে স্টেশন পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা, লালগোলা পঞ্চায়েত ভবন থেকে সিন্ডিকেট মোড় যাওয়ার পথ, নেতাজি মোড় থেকে স্টেশন যাওয়ার রাস্তায় নবপল্লি ও কালীবাগে, রথবাজার থেকে ফরওয়ার্ড ব্লক অফিস যাওয়ার পথ বর্ষার সময় জলকাদায় ডুবে থাকে।

অভিযোগ, বাম আমলে অপরিকল্পিত ও অক্ষম একটি নিকাশি নালা নির্মাণ করা হয়েছিল বটে। কিন্তু বছর পনেরো আগে সেটি মজে গিয়েছে। ইংরেজ আমলে নিকাশি ব্যবস্থা ও পানীয় জলের কথা ভেবে লালগোলার মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায় ১৫টি পুকুর খনন করিয়েছিলেন। সংস্কারের অভাবে সেই পুকুর গভীরতা কমে গিয়েছে। পুকুরের পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি ও দোকানঘর। ফলে পুকুরে বৃষ্টির জল গিয়ে পড়তে পারে না।

লালগোলা ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সারজেমান শেখ জানান, রানিপুকুর, তমালতলা পুকুর, এমএন অ্যাকাডেমিকে ঘরে ৩টি পুকুর, মারোয়াড়ি পট্টির উত্তর ও দক্ষিণের দু’টি পুকুর, আড়ৎপট্টি লাগোয়া একটি পুকুর, রহমতুল্লা হাইমাদ্রাসা লাগোয়া একটি পুকুর- সহ লালগোলাতেই মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায় ১৪-১৫টি পুকুর খনন করিয়েছিলেন। পুকুরপাড় জবরদখল করে ঘরবাড়ি তৈরি করায় এবং পুকুর সংস্কার না করায় এখন জলকাদায় ভুগতে হচ্ছে বাসিন্দাদেরকে।

স্থানীয় বাসিন্দা পীতাম্বর সারেঙ্গি বলেন, ‘‘মাস্টারপ্ল্যান করে লালগোলার সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থার দাবি দীর্ঘ দিনের। আজও সেই দাবি পূরণ হয়নি।’’ লালগোলা ও বাহাদুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতি, লালগোলা বিধানসভা, স্থানীয় লোকসভা, এমনকী জেলাপরিষদ— সবই কংগ্রেসের দখলে। তুবও মাস্টার প্ল্যান করে লালগোলার সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা করতে না পারায় কংগ্রেসের সমালোচনা করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। লালগোলা ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক রজেমান শেখ বলেন, ‘‘২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে জিতে লাগোলার বিধায়ক আবু হেনা ১৪ মাস মন্ত্রীত্ব করেছেন। সেই সময় তিনি যদি লালগোলার মাস্টার প্ল্যানের জন্য আন্তরিক ভাবে সক্রিয় হতেন তবে আজ এই দশা হত না।’’ লালগোলা পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান অজয় ঘোষ ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীপশিখা হালদার বলেন, ‘‘মাষ্টার প্ল্যানের আর্থিক বোঝা টানার ক্ষমতা পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতের নেই। তাই জেলা পরিষদের কাছে দাবি রেখেছি।’’

জেলা পরিষদের সভাধিপতি কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদার বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের আর্থিক অসহায়তায় লালগোলার দাবি পূরণ করা সম্ভব হয়নি।’’

বাদানুবাদ, কাদা ছোড়াছুড়ি হয়তো এ ভাবেই চলতে থাকবে। কিন্তু কাদার গোলা থেকে লালগোলা কবে রেহাই পায় সেই আশায় হাপিত্যেশ করে বসে শহরবাসী।

Water logged Dwellers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy