Advertisement
E-Paper

বিক্রি নেই, গরু খাচ্ছে আনাজ

চাষিদের অনেকেই বলছেন, লকডাউনের জেরে একটু একটু করে ভেঙে পড়ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।

নিজস্ব প্রতিবেদন 

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২০ ০২:৪৬
বিক্রির অপেক্ষায় বসে।—ছবি এএফপি।

বিক্রির অপেক্ষায় বসে।—ছবি এএফপি।

ঢেঁড়স নিয়ে হাটে গিয়েছিলেন করিমপুরের গোয়াশের বাসিন্দা বিধান বিশ্বাস। মেরেকেটে বিক্রি হয়েছে মোটে ১০ কিলোগ্রাম। বাকিটা বাড়ি ফিরিয়ে এনেছেন। তা প্রায় ৩০ কিলোগ্রাম। আনাজ বিক্রির এমন হাল দেখে মুষড়ে পড়েছেন তিনি।

যাঁদের হাঁকডাকে হাট গমগম করত সেই পাইকারদের দেখা নেই। তাই একরের পর একর জমিতে চাষ হওয়া আনাজ কেনার লোক নেই। স্থানীয় মানুষ যেটুকু কিনছেন, তা অতি সামান্য। তাই টন-টন আনাজ হাটে পড়ে থাকে। বিক্রি হয় না। যদিও বা বিক্রি হয় তা গতবারের তুলনায় অর্ধেকেরও কম দামে।

চাষিদের অনেকেই বলছেন, লকডাউনের জেরে একটু একটু করে ভেঙে পড়ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় বাইরে আনাজ নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চাহিদা ক্রমশ কমছে। কিন্তু উৎপাদন আছে একই রকম।

এ বার তিন বিঘা জমিতে পটল,কচু আর ঢেঁড়সের চাষ করেছেন বিধান বিশ্বাস। তিনি বলেন, “গত বছর এই সময় যে দামে আনাজ বিক্রি করেছি, এ বার তার অর্ধেকও দাম পাচ্ছি না। খরিদ্দার কোথায়? স্থানীয় মানুষরাও তো চাষি। তাঁরাই বা কত কিনবেন? হাট থেকে আনাজ ফিরিয়ে নিয়ে এসে গরু দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে বা এলাকায় গরিব মানুষদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হচ্ছে।”

একই কথা বলছেন হাঁসখালির গাজনার বাসিন্দা সুনীল ঘোষ। প্রায় ১০ বিঘা জমিতে আনাজ ফলিয়েছেন। সঙ্কটে পড়েছেন তিনিও। জেলার অন্যতম বড় আনাজের হাট গাজনা। সেখান থেকে গাড়ি বোঝাই হয়ে আনাজ চলে যেত কলকাতায়। পাইকাররা চাষিদের কাছ থেকে আনাজ কিনতেন। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে কোথায় সেই পাইকারেরা, কোথায় বা তাঁদের গাড়ি? ফাঁকা হাটে চাষিরা আনাজ নিয়ে বসে থাকছেন। কেনার লোক নেই। তিনি বলছেন, “গত বছর কলার কাঁদি দু'শো টাকায় বিক্রি করেছিলাম। এ বার খরিদ্দারই নেই। মাঠে পড়ে থাকছে।” তাঁর কথায়, “এমনটা চলতে থাকলে চাষিদের 'আত্মহত্যা' করা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। বিকল্প পথের সন্ধান করতেই হবে। না হলে এই সর্বনাশ ঠেকানো যাবে না।”

চাষিরা জানান, গত বছর যে পটল চাষিরা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি করেছেন এ বার সেটা ১৫ থেকে ১৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উচ্ছে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা প্রতি কিলোগ্রামে। গত বছর যা প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়েছিল। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ টাকায়। গত বছর ঢেঁরস বিক্রি হয়েছিল ২৫ থেকে ২৮ টাকার মধ্যে। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ টাকায়। অন্যান্য আনাজের অবস্থাও সেই একই রকম। চাপড়া-ধানতলা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার জয়দেব বিশ্বাস বলছেন, “আমাদের এখান থেকে পটল লরি বোঝাই হয়ে দিল্লি যায়। কিন্তু এ বার সে সব কল্পনাও করা যাচ্ছে না। বাইরের খরিদ্দার নেই। চাহিদা নেই। দাম পাচ্ছেন না চাষিরা।” তাঁর কথায়, “কৃষি নির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতি ক্রমশ ভেঙে পড়ছে। আগামী দিনে কী অপেক্ষা করছে কে জানে।”

West Bengal Lockdown farmers Vegetables
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy