Advertisement
১৭ মে ২০২৪
West Bengal Lockdown

পানশালা বন্ধ, ওঁরা জ্বলছেন খিদেয়

মোড় থেকে কয়েকশো মিটারের মধ্যে রাস্তার বাঁ দিকে দু’টি নাম করা পানশালা ও হোটেল রয়েছে। ওই দুই পানশালায় ফি সন্ধ্যায় বহু মেয়ে ভিড় করতেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২০ ০২:৪৩
Share: Save:

বন্ধ সব হোটেল, পানশালা। তাই ওঁদের কাজও বন্ধ।

ধুবুলিয়া, চাকদহ, কল্যাণী ও পড়শি উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুর থানা এলাকার বহু পানশালা ও হোটেলে ওই মেয়েরা ছড়িয়ে থাকেন। এখন ওঁরা পড়েছেন বেকায়দায়। এখন ওঁদের কোনও রোজগার নেই।

বীজপুরের কাঁপা মোড় থেকে ব্যারাকপুরের দিকে খানিকটা এগোলেই পাশাপাশি একাধিক পানশালা। মোড় থেকে কয়েকশো মিটারের মধ্যে রাস্তার বাঁ দিকে দু’টি নাম করা পানশালা ও হোটেল রয়েছে। ওই দুই পানশালায় ফি সন্ধ্যায় বহু মেয়ে ভিড় করতেন। ওই মেয়েদের একটা বড় অংশ যেতেন কল্যাণী, চাকদহ ও শিমুরালি থেকে। বাড়িতে বলে যেতেন, বিউটি পার্লার বা শপিং মল বা অন্য কোনও কাজে যাচ্ছেন। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত এক যুবক জানান, ভালই রোজগার হত। কিছুটা টাকা এখনও হাতে আছে। তা দিয়েই চলছে। কল্যাণীরই এক বছর তিরিশের মহিলাও যেতেন ওই পানশালায়। তাঁর টাকাতেই চলে সংসার। তিনি বলছেন, “লকডাউন বেশি দিন চললে না খেয়ে মরতে হবে।’’

একই অবস্থা হরিণঘাটা পুর এলাকার বাসিন্দা এক মহিলার। তাঁর স্বামীর সেলুন আছে। কিন্তু লকডাউনে সে-ও এখন বন্ধ। খাওয়াই জুটছে না।

এই মেয়েদের একাংশ আবার কোনও না কোনও ‘ম্যাডাম’-এর হেফাজতে থেকেও কাজ করেন। এঁদের পোশাকি নাম ‘এজেন্সির মেয়ে’। রোজগারের টাকার একাংশ ম্যাডামেরা পান। এখন অনেক ম্যাডামই অল্প করে হলেও নিজের মেয়েদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাচ্ছেন। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত এক মাঝবয়সী পুরুষ কর্মী বলেন, ‘‘রোজ জনা বিশেক মেয়ে কাজ পেতেন। এখন সবাই ঘরে বসা।’’

হরিণঘাটার এক যুবক যিনি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত এবং মেয়েদের সঙ্গে মূলত যোগাযোগ করিয়ে দিতেন, তিনি এ দিন বলেন, “ওঁদের এখন খুবই বাজে অবস্থা। অনেকে টাকার জন্য কান্নাকাটি করছেন।”

কালীগঞ্জের এক মাঝবয়সী ব্যক্তি, চাকদহের একটি পঞ্চায়েতের ঠিকাদার এবং চাকদহ থানা এলাকার এক জন মাঝে-মধ্যে ওই হোটেলগুলিতে যেতেন। তাঁরা জানান, হোটেল বন্ধ হওয়ার পরে পরিচিত কয়েক জনকে টাকা পাঠিয়েছেন। এর বেশি তাঁদের সাধ্য নেই। ঘরবন্দি এই মেয়েদের কয়েক জন জানান, লকডাউনের মধ্যে চেনা দু’এক জন ডাকছেন, কিন্তু ট্রেন, বাস নেই। স্কুটিতে গেলে পুলিশ আটকাচ্ছে। তা ছাড়া, নিরাপত্তার প্রশ্নও আছে।

এই যৌনকর্মীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, ওঁরা গোপনে কাজ করেন। পেশাদার কর্মীর স্বীকৃতি ওঁদের নেই। ফলে সরকার বা কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যদি যৌনকর্মীদের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থাও করে, ওঁরা তার কানাকড়িও পাবেন না। ওঁরা প্রায় সকলেই নিম্ন বা নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসারে থাকেন, ফলে প্রকাশ্যে বেরিয়ে এসে সাহায্য চাইতেও পারবেন না। যাঁরা তা পারবেন, সেই নথিভুক্ত যৌনকর্মীরাও কি ভাল আছেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Sex Workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE