Advertisement
E-Paper

রক্ষী ছুটি চাইতেই হুমায়ুনের গোসা, বাবার নিরাপত্তারক্ষীকে পিটিয়ে গ্রেফতার বিধায়ক-পুত্র! থানায় হল ‘শান্তিপূর্ণ আলোচনা’

পুলিশ সূত্রে খবর, শুধু তৃণমূল নেতা গোলাম নন, তাঁর বাবা জনতা উন্নয়ন পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ুনের বিরুদ্ধেও নিরাপত্তারক্ষীকে হেনস্থার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। তবে দু’টি মামলাই জামিনযোগ্য ধারায়। যা নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি এবং কংগ্রেস।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:৪৯
Humayun Kabir

হুমায়ুন কবীর। —ফাইল চিত্র।

নতুন দল গড়েছেন। প্রতিদিন প্রচুর কাজ। কিন্তু রবিবার সেই সব ছেড়েছুড়ে তৃণমূলনেতা পুত্রকে ছাড়িয়ে আনতে শক্তিপুর থানায় গেলেন মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। সকালে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বহরমপুর স্তব্ধ করে দেবেন বলেছিলেন। সেই হুমায়ুন থানা থেকে বেরিয়ে সুর নরম করে বললেন, ‘‘ওদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।’’

ঘটনার সূত্রপাত রবিবার সকালে। হুমায়ুন-ঘনিষ্ঠদের সূত্রে খবর, বাড়িতে নিজের অফিসঘরে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কয়েক জনের সঙ্গে নবগঠিত জনতা উন্নয়ন পার্টির সংগঠন নিয়ে আলোচনা করছিলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা। বিধায়কের নিরাপত্তায় তিন পুলিশকর্মী থাকেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের নাম জুম্মা খান। সেই জুম্মা হঠাৎ বিধায়কের অফিসে ঢুকে পড়েন। ‘কী চাই’ জিজ্ঞাসা করায় পুলিশ কনস্টেবল জানান, তাঁর ছুটি প্রয়োজন। ব্যক্তিগত কিছু কাজ রয়েছে।

হুমায়ুন পত্রপাঠ আবেদন নাকচ করে দিয়েছিলেন বলে খবর। কিন্তু ওই নিরাপত্তারক্ষীও ছুটির জন্য নাছোড়। শুরু হয় কথা কাটাকাটি। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে অন্য ঘর থেকে বাবার অফিসে প্রায় ছুটে যান হুমায়ুনের পুত্র বেলডাঙা-২ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ গোলাম। তার পর দুই তরফের মধ্যে গন্ডগোল হয়। হুমায়ুন দাবি করেছেন, ওই নিরাপত্তারক্ষী তাঁদের আক্রমণ করেছেন। অন্য দিকে, জুম্মার দাবি, বিধায়কের ছেলে তাঁর গায়ে হাত তুলেছেন। তিনি গোটা বিষয়টি ফোন করে শক্তিপুর থানায় জানান এবং তার কিছু ক্ষণ পরে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগও করেন।

এর মধ্যে মধ্যাহ্নভোজ সেরে বহরমপুরের দিকে বেরিয়ে গিয়েছেন হুমায়ুন। হঠাৎ পুত্রবধূর ফোন। শ্বশুরকে ফোন করে তিনি জানান, তাঁদের বাড়ি ‘ঘিরে ফেলেছে’ পুলিশ। থানায় ধরে নিয়ে গিয়েছে গোলামকে। ওই ফোন পেয়ে সমস্ত কর্মসূচি মাথায় ওঠে হুমায়ুনের। জনা পঞ্চাশ অনুগামী নিয়ে শক্তিপুরের পথে রওনা দেন ভরতপুরের বিধায়ক। পথেই ঘোষণা করেন, ‘‘আগামী বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপারের অফিস ঘেরাও করা হবে।’’

থানায় পৌঁছে হুমায়ুন দেখেন, ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন শক্তিপুর এবং হরিহরপাড়া থানার আধিকারিকেরা। পুত্রের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আছে, জানার জন্য বসে পড়েন হুমায়ুন। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, হুমায়ুন, তাঁর ছেলে এবং নিরাপত্তারক্ষীকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিধায়ক ও তাঁর পুত্র নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন। প্রমাণ হিসাবে বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজের কথা বলেন তাঁরা। পুলিশ আগেই সেটা সংগ্রহ করেছিল।

এর পর প্রায় ঘণ্টাখানেক পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ভরতপুরের বিধায়ক। থানা থেকে বেরিয়ে হুমায়ুনের দাবি, “জেলা পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে সুস্থ, সুষ্ঠু আলোচনা হয়েছে। দুই আইসি ও এসডিপিও-র সঙ্গে কথা বলে আমি খুশি।” তিনি জানিয়ে যান, তাঁর আইনজীবী আসছেন। জামিনে পুত্রকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেন।

যদিও পুলিশ সূত্রে খবর, শুধু তৃণমূল নেতা গোলাম নন, তাঁর বাবা জনতা উন্নয়ন পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ুনের বিরুদ্ধেও নিরাপত্তারক্ষীকে হেনস্থার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। তবে দু’টি মামলাই জামিনযোগ্য ধারায়।

গোটা ঘটনায় দিনভর মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক মহলে শোরগোল চলেছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন কেউ কেউ। যেমন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, “কেনই বা পুলিশ অতিসক্রিয় হয়ে একজন জনপ্রতিনিধির ছেলেকে বাড়ি থেকে নিয়ে গেল, কেনই বা জামিনযোগ্য ধারা দিয়ে সব মিটমাট করা হল, সবটাই ধোঁয়াশা। সাধারণ কেউ হলে কি পুলিশ এমনই করত?” মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষের মন্তব্য, “তৃণমূল আর হুমায়ুনের গট আপ গেম চলছে এখানে। পরিকল্পিত ভাবে তাঁকে প্রচারের আলোয় রাখা হচ্ছে।”

ওই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে শাসকদল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলেন, “পুরো বিষয়টি বিচারাধীন। অভিযোগ করেছেন একজন পুলিশকর্মী। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।”

Humayun Kabir Police case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy