শিয়রে লোকসভা ভোট। অথচ, জেলায় দলের প্রধান সেনাপতি হাসপাতালে ভর্তি! হাসপাতাল থেকে কবে ছাড়া পাবেন জানা নেই। আবার ছাড়া পেলেও তাঁকে দাঁড়াতে হবে সিআইডি-র মুখোমুখি।
সব মিলিয়ে বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকার আবার কবে পুরোপুরি রাজনীতির ময়দানে ফিরতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে বিজেপি-র অন্দরে। ভোটের মুখে যখন নেতাকে সামনে রেখে লড়াইয়ের কৌশল ঠিক করার কথা তখনই দল নেতাকে পাচ্ছে না।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, গত পঞ্চায়েত ভোটের পর নদিয়ায় বিজেপির জমি শক্ত হয়েছিল। লোকসভা ভোটে তার ফসল তোলার গুরুদায়িত্বের অনেকটাই ন্যাস্ত হয়েছিল জগন্নাথবাবুর উপর। তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনের অভিযোগে তিনি যে ভাবে জড়িয়ে যাচ্ছেন এবং সিআইডি তাঁকে যে ভাবে ঘিরে ধরছে তাতে জেলায় বিজেপি-র নেতৃত্বের জায়গায় ফাঁক তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি, জগন্নাথ-বিরোধী গোষ্ঠী এই মওকায় শক্তিবৃদ্ধি করতে চাইছে। ফলে দলের অন্দরে ক্ষমতা দখলের জন্য শুরু হয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এখনই নেতৃত্বের জায়গা ঠিক না হলে এই দ্বন্দ্ব নদিয়ায় বিজেপির শক্ত জমিকে নড়বড়ে করবে বলে মনে করছেন অনেকে। বিজেপির কর্মীরাও ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছেন।
নদিয়ায় রানাঘাট কেন্দ্রকে বিজেপি অনেকদিন ধরেই পাখির চোখ করে রেখেছে। কারণ এখানে যেমন তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল রয়েছে তেমনই রয়েছে ‘মতুয়া ফ্যাক্টর।’ ও পার বাংলা থেকে আসা হিন্দু ভোটারদের একটা বড় অংশ মতুয়া। এঁরা দীর্ঘ দিন ধরে ছিলেন সিপিএমের ভোট ব্যাঙ্ক। পরে তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে পরিণত হন। হিন্দুত্বের রাজনীতিতে এই মতুয়া ভোট নিজেদের দিকে টানতে বিজেপি মরিয়া। নদিয়ায় তৃণমূলের ‘মতুয়া মুখ’ হয়ে ওঠা কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুন হওয়ায় বিজেপির পথ আরও পরিষ্কার হয়েছিল বলে রাজনৈতিক মহলের খবর। কিন্তু সেই খুনের ঘটনায় এ বার বিজেপির জগন্নাথ সরকারকে সিবিআইয়ের তলব করা এবং তার পরেই জগন্নাথের হাসপাতালে ভর্তির ঘটনায় বিজেপির হাতে আসা সুবর্ণ সুযোগ হারাতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। মতুয়া ভোট টানার ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার দায়িত্ব কে পালন করবেন বা কে পন্থা বাতলাবেন সেই বিকল্প এখনও ঠিক করতে পারেনি বিজেপি। হাঁসখালির এক বিজেপি কর্মীর যেমন বলেছেন,“আমরা ধরেই নিচ্ছি জগন্নাথদাকে ভোটের আগে সে ভাবে পাব না। তা হলে সামনে থেকে ভোট পরিচালনা করবেন কে?”
সিআইডি সূত্রের দাবি, তৃণমূল বিধায়ক খুনে ধৃত মূল অভিযুক্ত অভিজিৎ পুণ্ডারীর ফোনের কল লিস্ট ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, জগন্নাথের সঙ্গে তার কয়েক বার কথা হয়েছিল। সেই কারণেই তাঁকে শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল। কলকাতায় দলের কর্মসূচিতে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে তিনি পরে সময় চেয়ে নেন। তার পর নদিয়ায় ফিরে শুক্রবার মাঝরাতেই রানাঘাটে জাতীয় সড়কের ধারে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হন জগন্নাথ সরকার। বিজেপির অনেকেই অবশ্য এতে ‘রাজনৈতিক অভিসন্ধি’ দেখছেন। কিন্তু এই সুযোগে দলের ভিতরে ক্রমশ সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন জগন্নাথবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর লোক জন। মাথা চাড়া দিচ্ছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
কারণ, জেলায় বিজেপির দুই গোষ্ঠীই চাইবে দলের কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে রাখতে। দলে জগন্নাথবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর বলে পরিচিত এক নেতার কথায়, “সুস্থ হয়ে ফিরেও যে জগন্নাথদা সিআইডি-র ঝামেলা মিটিয়ে দলের হাল পুরোপুরি ধরতে পারবে মনে হয় না। সে ক্ষেত্রে দলকে কিন্তু একটা সিদ্ধান্তে আসতেই হবে। একটা বিকল্প মুখ আনতেই হবে।’’ জেলা কমিটির সহ সভাপতি দিব্যেন্দু ভৌমিক বলছেন, “আমরা দলের দিকে তাকিয়ে আছি। দেখা যাক দল কি সিদ্ধান্ত নেয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy