Advertisement
E-Paper

কোর্টে জমছে মামলা, প্রাপ্তি শুধুই ‘তারিখ’

জেলা পুলিশের এক কর্তার মতে, কথায় কথায় আইনজীবীদের কর্মবিরতিও মামলা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাছাড়া সীমান্তের জেলা হিসেবে মুর্শিদাবাদে অপরাধ প্রবণতার হার এমনিতেই বেশি। তার উপরে জাল টাকা, পাচার, মাদক কারবারের রমরমা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। 

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৫২

প্রতি বছর দশ হাজার করে মামলা বাড়ছে মুর্শিদাবাদের আদালতে। ২০১৭ সালের শুরুতে যে সংখ্যাটা ছিল ১,৩৪,১৯৯। এ বছরের জানুয়ারিতে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৪৪,২৭২। মামলার এমন বাড়বাড়ন্তে উদ্বিগ্ন আইনজীবী থেকে শুরু করে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। আর বিচারপ্রার্থীরা বলছেন, ‘‘আদালতে যাচ্ছি আর একটা করে তারিখ নিয়ে বাড়ি ফিরছি। বিচার মিলছে কই!’’

জেলা পুলিশের এক কর্তার মতে, কথায় কথায় আইনজীবীদের কর্মবিরতিও মামলা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাছাড়া সীমান্তের জেলা হিসেবে মুর্শিদাবাদে অপরাধ প্রবণতার হার এমনিতেই বেশি। তার উপরে জাল টাকা, পাচার, মাদক কারবারের রমরমা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

বর্তমানে মুর্শিদাবাদে ৪৮টি আদালত রয়েছে। ২০১৬ সালের শেষে জেলায় দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ছিল ৩২৪৮৪, ফৌজদারি মামলা ছিল ১,০১৭১৫। ২০১৮ সালের শুরুতে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ৩২৩৫৬। কিন্তু ফৌজদারি মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১১,৯১৬।

এই মুহূর্তে মুর্শিদাবাদে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে জমে থাকা মামলা রয়েছে ১৬,৭০৯। সেগুলির কবে নিষ্পত্তি ঘটবে, কেউ জানেন না। পাঁচ বছরের উপরে চলছে ২৫,০৩৩ মামলা। নিট ফল, বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি ও অর্থনাশ। সামাজিক ক্ষেত্রে মহিলাদের অধিকারের কথা শোনা গেলেও আদালত থেকে পাওয়া হিসেব অনুযায়ী মুর্শিদাবাদে ৩০৩৪৩ টি এমন মামলা জমে রয়েছে যেগুলি দায়ের করেছিলেন মহিলারাই।

লাগোয়া জেলা নদিয়া। সীমান্ত ও পাচার সমস্যা সেখানেও রয়েছে। কিন্তু সেখানে ২০১৬ সালের শুরুতে বকেয়া মামলার সংখ্যা ছিল ৯৩,৩২৭। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯১,৯৭১। জেলার তেহট্ট, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট ও কল্যাণী দায়রা আদালতে জমে থাকা মামলার সংখ্যা প্রায় চার হাজার। তবে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জমে থাকা মামলার সংখ্যা অনেকটাই বেশি। জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর নাসিরুদ্দিন আহমেদ বলছেন, “বিচারকের সংখ্যা না বাড়ালে এ সমস্যার সমাধান হবে না।”

বহরমপুর জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী দেবাশিস রায় জানান, এক দিকে বাংলাদেশ, অন্যদিকে ঝাড়খণ্ড। অপরাধের সংখ্যা অনেক বেশি। মাদকের মামলা সবথেকে বেশি হয় মুর্শিদাবাদে। জাল নোট , পকসো মামলার সংখ্যাও কম নয়। প্রতিদিন যে হারে মামলা রুজু হচ্ছে, সেই তুলনায় নিষ্পত্তির সংখ্যা কম। ফলে জেলায় মামলা বাড়ছে।

জঙ্গিপুরের আর এক আইনজীবী অশোক সাহা বলছেন, “আদালতগুলিতে কর্মবিরতি, বিচারকদের ছুটির ফলে আদালতে কর্মদিবস কমছে। আদালতে মামলা আসছে। কিন্তু সময়ে সাক্ষীকে সমন পাঠানো হয় না। এমন নানা কারণে বিচার এগোচ্ছে না। আর তাই মামলার পাহাড় জমছে।”

জেলা আদালতের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারকের মতে, লোক আদালত ও প্রতিটি থানায় প্যারা লিগাল ভলান্টিয়ার্সের মাধ্যমে বাদী-বিবাদীকে বসিয়ে বিবাদ নিষ্পত্তির আইনগত সংস্থান রয়েছে। এর জন্য আইনজীবী নিয়োগ করে ভাতাও দেয় সরকার। কিন্তু এই ব্যবস্থার বাস্তব প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে। আদালতে মামলা বৃদ্ধির এটাও একটা বড় কারণ।

(সহ প্রতিবেদন— সুস্মিত হালদার)

Cases Court Law and Order Lawyers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy