Advertisement
E-Paper

নিহত অভিজিতের জন্যই পরীক্ষা দেবেন অনিঞ্জিতা

এই দু’দিন খাওয়া নেই, ঘুম নেই। কারও সঙ্গে তেমন কথাবার্তাও বলছেন না সদ্য বিবাহিত ওই তরুণী। বিয়ের অ্যালবামটা আঁকড়ে তিনি কেবল কেঁদেই চলেছেন।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০০:৪৯
শোকাহত স্ত্রী (বাঁ দিকে)।

শোকাহত স্ত্রী (বাঁ দিকে)।

শোকস্তব্ধ পরিবার। থম মেরে পাড়া। মন ভাল নেই পাঁচদাড়ার। মণিপুর থেকে দুঃসংবাদটা এসেছিল বুধবার রাতে। তার পর মাধেমধ্যেই সংজ্ঞা হারাচ্ছেন নিহত জওয়ান অভিজিৎ মণ্ডলের স্ত্রী অনিঞ্জিতা।

এই দু’দিন খাওয়া নেই, ঘুম নেই। কারও সঙ্গে তেমন কথাবার্তাও বলছেন না সদ্য বিবাহিত ওই তরুণী। বিয়ের অ্যালবামটা আঁকড়ে তিনি কেবল কেঁদেই চলেছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘর ভর্তি লোক। অনিঞ্জিতাকে সামলাচ্ছেন বাড়ির মহিলারা। আচমকা চোখের জল মুছে অনিঞ্জিতা বললেন, ‘‘পরীক্ষায় বসব। ও চেয়েছিল, আমি যেন ভাল ভাবে পরীক্ষা দিই। ওর জন্যই পরীক্ষাটা দেব।’’ বাইরের বারান্দায় বসে অভিজিতের বাবা-মা বলছেন, ‘‘ছেলেটাকে তো হারালামই। মেয়েটাও এই ক’দিন কেঁদে কেঁদে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। বৌমা মাধ্যমিকটা দিলে ছেলেও শান্তি পাবে।’’

বুধবার রাতে চান্ডেল জেলায় খেংজোই ও বংজোই গ্রামের মাঝে সেনার ২৮ রাজপুত রেজিমেন্টের টহলদার বাহিনীকে লক্ষ করে ৩টি বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। ঘটনাস্থলেই মারা যান পলাশিপাড়ার পাঁচদাড়া গ্রামের অভিজিৎ মণ্ডল। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সাতাশের ওই যুবক সদ্য ২৮ রাজপুত রেজিমেন্টে যোগ দিয়েছিলেন। ফোনেও তিনি বাড়ির লোকজনকে জানিয়েছিলেন, ‘‘জায়গাটা বিশেষ সুবিধার নয়। মাঝেমধ্যেই গণ্ডগোল হয়।’’ তবে সেখানেই যে এ ভাবে মারা যাবেন অভিজিৎ, ভাবতে পারেননি কেউই।

কফিনবন্দি নিহত সেনা জওয়ান। শুক্রবার পলাশিপাড়ায়।

অভিজিতের বাবা হীরেন মণ্ডলের সামান্য কিছু জমি জায়গা আছে। বড় ছেলে স্মরজিৎ মাধ্যমিক পাশ করার পরে ২০০৪ সালে যোগ দেন সেনাবিভাগে। দাদাকে দেখেই সেনা বিভাগে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেন অভিজিৎও। পলাশিপাড়া হাই স্কুল থেকে ২০১১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ২০১২ সালে তিনিও যোগ দেন সেনা বিভাগে।

সংসারে অভাব ছিল ষোলো আনা। দুই ছেলে চাকরি পাওয়ার পরে কিছুটা হলেও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন হীরেন। এ দিন কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘যেই একটু সুখের মুখ দেখা শুরু করলাম, তখনই ছেলেটাকে হারালাম। বড়টাও তো ওই একই পেশায় থাকে। এর পরে আর নিশ্চিন্তে কী করে থাকি বলুন তো?’’

গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নওদার সর্বাঙ্গপুরের অনিঞ্জিতার সঙ্গে বিয়ে হয় অভিজিতের। মাসখানেক বাড়িতে কাটিয়ে তিনি ফিরে যান মণিপুরে। অনিঞ্জিতা সর্বাঙ্গপুর জনকল্যাণ সঙ্ঘ আদর্শ বিদ্যাপীঠ থেকে এ বারে মাধ্যমিক দিচ্ছেন। তাঁর পরীক্ষার আসন পড়েছে কাশিপুর তারিণীসুন্দরী বিদ্যাপীঠে।

আগামী সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যই স্বামী চলে যাওয়ার পরে অনিঞ্জিতা সর্বাঙ্গপুরে বাবার বাড়িতেই থাকতেন। বুধবার অভিজিতের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি পাঁচদাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে চলে আসেন। কথা ছিল, অভিজিৎ ফিরবেন অনিঞ্জিতার পরীক্ষার আগে। স্ত্রীর সঙ্গে যাবেন পরীক্ষাকেন্দ্রে। সেই মতো বাড়ি ফেরার টিকিটও কাটা হয়ে গিয়েছিল তাঁর। গত মঙ্গলবারেও স্ত্রীকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, সোমবার খুব সকালেই তিনি বাড়ি ফিরবেন। তার পরে স্ত্রীকে সঙ্গে করে যাবেন পরীক্ষাকেন্দ্রে।

অভিজিতের মা প্রতিমা বলছেন, ‘‘ছেলেটা বাড়ি ফিরল আগেই। তবে কোনও দিন সে আর মা বলে ডাকবে না। আমার সব শেষ হয়ে গেল।’’ অভিজিতের কফিনবন্দি দেহ গ্রামে ফিরেছে বৃহস্পতিবার রাতে। সেই রাতেই তাঁর দেহ দাহ করা হয়েছে পলাশির রামনগর ঘাটে। স্থানীয় বাসিন্দা মথুরা বিশ্বাস, রূপচাঁদ মণ্ডলেরা বলছেন, ‘‘অত্যন্ত মিশুকে স্বভাবের ছেলে ছিল অভিজিৎ। ছুটিতে বাড়ি এলেই সকলের সঙ্গে হইহই করে কাটাত। তার এমন মৃত্যু আমরা মানতে পারছি না।’’

—নিজস্ব চিত্র

Abhijit Mondal Death Jawan Examination Wife
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy