Advertisement
E-Paper

‘মা উঠবেই’, মৃতাকে খাওয়ানোর চেষ্টায় নাছোড় মেয়ে, ৪৮ ঘণ্টা পচা দেহ আগলে বসে নদিয়ার বাড়িতে!

মেয়ের জেদাজেদিতে বৃদ্ধার দেহ নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে। চিকিৎসকেরা জানান, অনেক আগেই মারা গিয়েছেন রুমা। কিন্তু পিয়ালি মানেননি। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘মাকে মৃত বলায় চিকিৎসকদের উপর বিরক্ত হন মেয়ে।’’

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৫ ২১:১৩
Death Body

—প্রতীকী চিত্র।

মা মারা গিয়েছেন দু’দিন। কিন্তু মেয়ে তা বিশ্বাস করেন না। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা মায়ের দেহ আগলে বসে রইলেন তিনি। প্রতিবেশী এবং স্বেচ্ছাসেবীরা দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেও ‘ডাক্তারি’ করে বৃদ্ধাকে বাঁচিয়ে তোলার ব্যর্থ এবং মরিয়া প্রয়াস করলেন যুবতী। পরিস্থিতি দেখে কারও চোখ ভিজল, কেউ অসহায় ভাবে সমস্তটাই দেখতে থাকলেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল নদিয়ার কল্যাণী এলাকায়।

মা-মেয়ের সংসার। ছেলে থাকেন বাইরে। ৭০ বছর বয়সি রুমা দত্ত এবং ৩০ বছরের পিয়ালি দত্তের সংসারে অঘটন ঘটে দিন দুয়েক আগে। কোনও ভাবে বাড়িতেই মারা যান রুমা। কিন্তু মেয়ে তা বুঝতে পারেননি। কিংবা বুঝলেও বিশ্বাস করতে চাননি। দেহ থেকে পচা গন্ধ বেরিয়েছে। কিন্তু মেয়ে মৃত মায়ের সেবা করে গিয়েছেন। বিশ্বাস করে গিয়েছেন মা সুস্থ হয়ে উঠবেন। সোমবার দুপুরে কল্যাণী থানার বি-১২ নম্বর এলাকা বাড়ি থেকে রেড ভলান্টিয়ার্সের সদস্যেরা যখন রুমাকে উদ্ধার করলেন, তখন কেঁদে আকুল মেয়ে। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বৃদ্ধাকে মৃত বলে ঘোষণা করার পরেও মেয়ে তা মানতে নারাজ।

স্থানীয় সূত্রে খবর, গত দু’দিন ধরে পিয়ালিদের বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ ভেসে আসছিল। মা বা মেয়ে কাউকেই বাইরে দেখা যায়নি। সোমবার ডাকাডাকির পরেও কারও সাড়া না পেয়ে রেড ভলান্টিয়ারদের খবর দিয়েছিলেন কেউ। তাঁরা এসে কড়া নাড়ার পর দরজা খোলেন বিধ্বস্ত পিয়ালি। স্বেচ্ছাসেবকেরা ঘরে ঢুকে দেখেন, বিছানায় এক বৃদ্ধা নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছেন। শরীরের একাংশে পচন ধরেছে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। ডাকা হয় অ্যাম্বুল্যান্স। মেয়ের জেদাজেদিতে বৃদ্ধার দেহ নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে। চিকিৎসকেরা জানান, অনেক আগেই মারা গিয়েছেন রুমা। কিন্তু পিয়ালি মানেননি। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘মাকে মৃত বলায় চিকিৎসকদের উপর বিরক্ত হন মেয়ে। তিনি দু’হাত দিয়ে মায়ের বুক চেপে চেপে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করতে থাকেন। কখনও মুখ খুলে জল খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। সকলে ওঁকে বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু কোনও কথাই মানেননি তিনি। উনি উন্মাদের মতো হাসপাতালের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়ান।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতার ছেলে স্বরূপ দত্ত সপরিবার কলকাতায় থাকেন। তাঁদের খবর দেওয়া হয়। স্ত্রীকে নিয়ে বিকেলে বাড়ি ফেরেন যুবক। এক দিকে মায়ের শোক, অন্য দিকে নাছোড় বোনকে সামলাতে হিমশিম খান তাঁরা। এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘বাড়িতে মা-মেয়ে থাকতেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগ ছিল না তাঁদের। একে অপরের উপর নির্ভরতা ছিল প্রচণ্ড। তাই মায়ের মৃত্যু কোনও ভাবেই মানতে পারছেন না মেয়ে।’’ তাঁরা কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের পার্থকাণ্ডের তুলনা টানেন।

পুলিশ জানিয়েছে, শেষমেশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ মর্গে রাখা হয়েছে দেহ। পরে পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হবে। কী ভাবে বৃদ্ধার মৃত্যু হল, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Death Case Nadia Kalyani
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy