Advertisement
E-Paper

উমা আসার আগেই মেয়ে চলে আসেন বাপের বাড়ি

সারা রাত ধরে চলে ফুটবল। খেলা উপলক্ষে বসে বিরাট মেলা। ভিন্‌ দেশে কাজে যাওয়া ছেলেরা বাড়ি ফেরে। শ্বশুরবাড়ি থেকে সটান বাবার বাড়ি চলে আসেন গাঁয়ের মেয়েরা। আত্মীয়দের ভিড়ে গমগম করে গোটা গ্রাম।

কল্লোল প্রামাণিক ও সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৩০
পরবে-ফেরা: বাহাদুরপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। নিজস্ব চিত্র

পরবে-ফেরা: বাহাদুরপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। নিজস্ব চিত্র

কেরল থেকে বার বার ফোন করছেন হবিবুর রহমান। ঘুরেফিরে সেই একটাই কথা, ‘ভাই, নাইট হচ্ছে তো? আমি কিন্তু শনিবার সকালেই বাড়ি ঢুকছি।’

টিকটিকিপাড়ার রিঙ্কু মল্লিক তাঁকে আশ্বস্ত করছেন, ‘হচ্ছে, হচ্ছে। সব তৈরি। তুই নিশ্চিন্তে বাড়ি আয় দেখি।’

মুরুটিয়ার দিঘলকান্দি গ্রামে সব বাড়িতেই চলে এসেছেন আত্মীয়-স্বজনেরা। বিদেশ-বিভুঁইয়ে যাঁরা থাকেন তাঁরাও চলে এসেছেন বেশ কয়েকদিন আগে। সীমান্তের ওই গ্রামে এখন হইহই কাণ্ড। কারণ, ২ সেপ্টেম্বর রাতেই হবে গ্রমের সবথেকে বড় উৎসব, সমীর স্মৃতি কাপ নৈশ ফুটবল। দিঘলকান্দির এই উৎসব এ বার ১১ বছরে পা দিল। কর্মসূত্রে ডোমকলের টিকটিকিপাড়া ও দিঘলকান্দি গ্রামের বহু ছেলে থাকেন দুবাই, কাতার, সৌদি আরবে। কেউ আবার মুম্বই, সুরাত, কেরলে বছরভর মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন। নদীর পাড়ে সাদা কাশ মাথা তুলতেই মুচকি হাসে সীমান্তের জনপদ, ‘‘ফুটবলের সময় এল কাছে।’’ সেই ফুটবলের সঙ্গে সঙ্গেই এক করে আসে ইদ, বিশ্বকর্মা, দুর্গাপুজো। ২০০৭ সালে দিঘলকান্দি কিশোর সঙ্ঘ প্রথম গ্রামে নৈশ ফুটবলের আয়োজন করে। খেলা শুরুর আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ক্লাব সদস্য সমীর মণ্ডল। তার পর সমীরবাবুর স্মৃতিতে ‘সমীর স্মৃতি কাপ’ ফুটবল।

সারা রাত ধরে চলে ফুটবল। খেলা উপলক্ষে বসে বিরাট মেলা। ভিন্‌ দেশে কাজে যাওয়া ছেলেরা বাড়ি ফেরে। শ্বশুরবাড়ি থেকে সটান বাবার বাড়ি চলে আসেন গাঁয়ের মেয়েরা। আত্মীয়দের ভিড়ে গমগম করে গোটা গ্রাম। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

কিশোর সঙ্ঘের সম্পাদক রতন বালা বলেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খেলার জনপ্রিয়তা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এই উৎসবের খরচ। এ বারের বাজেট প্রায় লক্ষাধিক টাকা। এই গোটা খরচ বহন করছেন গ্রামের লোকজন ও বাইরে কাজ করা ছেলেরা।

এ বার নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা ও কলকাতার মোট ১৬টি দল খেলবে। দিঘলকান্দি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ইরাজুল মণ্ডল জানান, এই খেলা এলাকার অন্যতম বড় উৎসব। এ বার তো আবার ওই দিনই ইদুজ্জোহা। ফলে, এ বারে ভিড় হবে আরও বেশি।

ডোমকল এলাকার বহু জায়গায় নৈশ ফুটবল হলেও টিকটিকিপাড়ায় কোনও দিন খেলা হয়নি। এ বার সেখানে প্রথম নৈশ ফুটবল হবে। তা নিয়ে গ্রামে উন্মাদনার শেষ নেই। গ্রামের লোকজন বলছেন, ‘‘দিনে বহু খেলা হয়েছে। কিন্তু রাতে সে খেলা কেমন হবে, দেখার জন্য মুখিয়ে আছি।’’ কেউ আবার বলছেন, ‘‘মাঠের বাইরে বল খোঁজার জন্যও তো আবার লোক রাখতে হবে।’’ আলোচনার অন্ত নেই। ব্যস্ততাও তুঙ্গে। দিঘলকান্দিতে খেলার মাঠে দোকান তৈরিতে ব্যস্ত যুবক। পাড়া ঘুরে বান্ধবীদের সঙ্গে গল্প করছেন তরুণী, ‘‘বাব্বা, পাক্কা এক বছর পরে দেখা হল!’’

ছেলেবেলার বন্ধুকে দেখে চমকে ওঠে বিদেশ থেকে বাড়ি ফেরা যুবক, ‘কী রে, চিনতে পারছিস?’

কিছুক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে জড়িয়ে ধরেন আসমত, ‘আরে, তুই তো সেই অমল! কত্ত বদলে গিয়েছিস।’ এ ভাবেই জমে ওঠে মেলা। মিলিয়ে দেয় ফুটবল। ভাদ্রের বাতাসে ভাসে উৎসবের সুর।

(শেষ)

Football Eid al-Adha Durga Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy