বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠে কাজ করতে করতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল ঠিকা শ্রমিকের। মঙ্গলবার দুপুরের দুর্ঘটনার পর থেকেই শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে পড়ল ফরাক্কার এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ।
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ এনটিপিসির স্থায়ী টাউনশিপ পূবারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে ওই শ্রমিককে টাউনশিপের নিজস্ব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘণ্টা দু’য়েক পরে মৃত্যু হয় মালদহের সুজাপুরের বাসিন্দা রেকাবুদ্দিন শেখের (৫০)। মৃত্যুর খবর চাউর হতেই দলে দলে ঠিকা শ্রমিকেরা হাসপাতালে ভিড় করতে শুরু করেন। দেহ হাসপাতালে আটকে রেখে শুরু হয় বিক্ষোভ। তাঁদের দাবি, মৃত শ্রমিকের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের কাউকে বিকল্প চাকরি দিতে হবে। ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একাধিক কর্তার সঙ্গে দফায় দফায় শ্রমিকদের বৈঠক হলেও সমাধান সূত্র মেলেনি।
এনটিপিসি কর্তারা অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ক্ষতিপূরণ বা বিকল্প চাকরি কোনওটাই তাঁদের দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে গভীর রাত অবধি হাসপাতালেই রেকাবুদ্দিনের দেহ আটকে বসে থাকেন শ’দুয়েক শ্রমিক। বিক্ষোভকারী শ্রমিকেরা অবশ্য কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয় বলে জানা গিয়েছে। তাঁরা নিজেরাই ‘সংগ্রাম কমিটি’ গড়ে তুলেছেন। কমিটির দাবি ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত ৩ হাজার ঠিকা শ্রমিকের ২৬০০ শ্রমিক তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন। কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমর চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘রেকাবুদ্দিন ২৫ বছর ধরে এই কেন্দ্রে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করছেন। কাজ করতে করতেই তাঁর প্রাণ গিয়েছে। এ বার ওর পরিবারের কী হবে? কী ভাবে চলবে সংসার?’’ কমিটি সূত্রে খবর, এর আগে মহাতাব শেখ নামে এক শ্রমিকের একই ভাবে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হয়। এখন তাঁর পরিবার অনাহারে মরতে বসেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁরা ক্ষতিপূরণ ও চাকরির দাবিতে অনড় রয়েছেন। এর আগে গত ১২ মে রাত থেকে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে বাঙ্কারে কয়লার জোগান না পাওয়ায় ফরাক্কায় এনটিপিসির বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়।
ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে এক কর্তা জানান, এনটিপিসিতে কর্মরত অবস্থায় কোনও স্থায়ী কর্মীর মৃত্যু হলেও ক্ষতিপূরণ ও চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা চালু নেই। ‘ওয়ার্কমেন কমপেনশেন আইন’ মতো বিমা ও পিএফের টাকা পান। ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শৈবাল ঘোষ বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় এক ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ওই শ্রমিকেরা যে সংগঠন গড়েছেন তা সরকারি ভাবে রেজিস্টার্ড নয়। তাই এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন না। তবু মানবিকতার কারণে ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে কয়েকজন কর্তা আলোচনায় বসেছেন। কিন্তু অচলাবস্থা কাটেনি।’’
এই বিক্ষোভের জেরে প্ল্যান্টে ফের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্বাচিত শ্রমিক সংগঠন সিটুর দখলে। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ মিশ্র অবশ্য ঠিকা শ্রমিকদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিকদের দাবি সঙ্গত। এনটিপিসিতে দুর্ঘটনায় মৃত কর্মীদের ক্ষতিপূরণ ও চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা চালু নেই। কিন্তু যা চালু নেই, তা কোনও দিনই চালু হবে না এটা কোনও কথা হতে পারে না। কর্মরত শ্রমিকদের চাকরির নিরাপত্তা সব জায়গাতেই রয়েছে। এনটিপিসিতেও তা চালু করা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy