Advertisement
E-Paper

বছর ঘুরেছে, জোটেনি স্কুলের নতুন পোশাক

জামা আঁটো হয়ে বসেছে গায়ে। ফ্রক উঠে গিয়েছে হাঁটুর উপরে। হবে না-ই বা কেন? টানা দু’বছর ধরে এক জোড়া পোশাক পরেই স্কুলে আসতে হয়েছে ওদের। ছেঁড়া, ফাটা, তালি দেওয়া, মলিন সেই জামাকাপড় সময়ে পাল্টে দেননি কর্তারা। কারণ গোটা একটা বছরে পোশাক তৈরি করে ওঠা যায়নি!

ধানতলা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১৫
ছবি:সংগৃহীত

ছবি:সংগৃহীত

জামা আঁটো হয়ে বসেছে গায়ে। ফ্রক উঠে গিয়েছে হাঁটুর উপরে।

হবে না-ই বা কেন? টানা দু’বছর ধরে এক জোড়া পোশাক পরেই স্কুলে আসতে হয়েছে ওদের। ছেঁড়া, ফাটা, তালি দেওয়া, মলিন সেই জামাকাপড় সময়ে পাল্টে দেননি কর্তারা। কারণ গোটা একটা বছরে পোশাক তৈরি করে ওঠা যায়নি!

গত শিক্ষাবর্ষে পোশাক তৈরির জন্য জুনেই টাকা দিয়েছিল সর্বশিক্ষা মিশন। ডিসেম্বরে জেলা প্রশাসনের নজরে আসে, চাপড়ায় বহু স্কুলেই জামাকাপড় দেওয়া হয়নি। চাপড়া (দক্ষিণ) চক্রের ৯৪টি স্কুলের মধ্যে ২০টিতে এবং চাপড়া চক্রের ১১৫টি স্কুলের মধ্যে মোটে পাঁচটিতে পোশাক দেওয়া হয়েছিল।

পোশাক তৈরির জন্য স্কুলগুলিকে বছরে পড়ুয়া পিছু চারশো টাকা দেওয়া হয়। কোন-কোন স্বনির্ভর গোষ্ঠী পোশাক তৈরি করবে, তা ঠিক করেন বিডিও। বেশির ভাগ জায়গায় যখন এই পদ্ধতিতে কাজ হয়েছে, চাপড়ায় তা হল না কেন? চাপড়ার বিধায়ক রুকবানুর রহমানের অভিযোগ, “বিডিও স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে বঞ্চিত করে কৃষ্ণনগরের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে সব স্কুলের পোশাক তৈরির বরাত দেন। তাতেই জটিলতা তৈরি হয়।”

বিডিও অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “প্রথম দিকে স্থানীয় কোনও স্বনির্ভর গোষ্ঠী আবেদন করেনি। আমি বাধ্য হয়ে কৃষ্ণনগরের গোষ্ঠীকে বরাত দিতে বাধ্য হয়েছিলাম।” গোটা ব্লকে একটাও স্বনির্ভর গোষ্ঠী পাওয়া গেল না? কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন? শুক্রবার বিডিও এ রকম কোনও গোষ্ঠীরই নাম মনে করতে পারেননি। এলাকায় ঘুরে এমন গোষ্ঠী পাওয়া যায়নি, যারা বিষয়টা জেনেও আবেদন করেনি। ফলে, এর পিছনে ‘অন্য হিসেব’ খুঁজে পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। যদিও বিডিও তা উড়িয়ে দিয়েছেন।

পরে অবশ্য চাপড়ার মোট ১৩টি ব্লকের মধ্যে সাতটির পোশাক তৈরির বরাত ফিরিয়ে নেওয়া হয় কৃষ্ণনগরের গোষ্ঠীর হাত থেকে। সেগুলির বরাত দেওয়া হয় স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে। কিন্তু তার মধ্যে যা গোলমাল হওয়ার হয়ে গিয়েছে। নতুন করে যাদের বরাত দেওয়া হয়, তাদের অনেকেরই অত জামাকাপড় তৈরি করার মতো অর্থ ও লোকবল ছিল না। পোশাক সরবরাহ করতে তাদের অনেকটাই দেরি হয়। এমনই একটি গোষ্ঠীর সম্পাদিকা খাদিজা বিবি দাবি করেন, “প্রথমে বরাত পেলে আগেই দিয়ে দিতে পারতাম।”

মাঝ-ডিসেম্বরে জেলা প্রশাসনের টনক নড়ে। তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু জানুয়ারির মধ্যেও ৪০ শতাংশ স্কুলের কয়েকশো পড়ুয়াকে পোশাক দেওয়া যায়নি। ফেব্রুয়ারি শেষ হতে চলল, এখনও জামাকাপড় পায়নি সব স্কুলের পড়ুয়ারা। নবীননগর প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী অর্চনা দাস বলে, “দু’বছর ধরে একই জামাকাপড় পরে আসছি। গায়ে হতে চায় না, কষ্ট হয়।” অভিভাবক শ্যামলী দাস, সাবিত্রী দাসদের আক্ষেপ, “টাকা পড়ে আছে ব্যাঙ্কে। অথচ ওদের জামা সেলাই করে স্কুলে পাঠাতে হয়েছে।”

গোল বেধেছে আর এক কারণেও। মাঝ-জানুয়ারির থেকে যখন তড়িঘড়ি পোশাক দেওয়া শুরু হয়, শিক্ষাবর্ষ শেষ হয়ে যাওয়ায় তত দিনে অনেক পড়ুয়া চতুর্থ থেকে পঞ্চম ও অষ্টম থেকে নবম শ্রেণিতে উঠে গিয়েছে। অর্থাৎ প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক (আপার প্রাইমারি), সেখান থেকে হাইস্কুলে চলে গিয়েছে অনেকে। ওই সব ছাত্রছাত্রীদের পোশাক নিয়ে স্কুল করে কী?

নবীননগর প্রাথমিক স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে পাশ করে চলে যাওয়া ১০ ছাত্রছাত্রীকে ডেকে তাদের গত বছরের পোশাক দেওয়া হয়েছে। চাপড়ার ইসলামগঞ্জ প্রাথমিক স্কুল বৃহস্পতিবারও পুরো পোশাক পায়নি। তবে তারা চতুর্থ শ্রেণিতে পাশ করে চলে যাওয়া পড়ুয়াদের টাকা দিয়েছে। আবার বাদলাঙ্গি প্রাথমিক স্কুল থেকে পাশ করে চলে যাওয়া চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের পোশাক তুলে রাখা হয়েছে আলমারিতে।

অনেক পোশাক আবার দেওয়া হলেও কাজে লাগছে না। তাড়াহুড়ো করে তৈরি করায় মাপে ভুল হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে। আবার এক বছর আগে নেওয়া মাপে এখন পোশাক তৈরি হওয়ায় গায়ে আঁটছে না হু-হু বড় হতে থাকা ছেলেমেয়েদের।

এই প্রহসনের দায় নেবে কে?

uniforms School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy