ঘটনার দু’দিন পরেও অভিযুক্তদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে করিমপুর বাজারের মধ্যে স্ত্রীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পালিয়েছে স্বামী। গুরুতর জখম হয়ে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় সুজাতা স্বর্ণকার নামে ওই মহিলাকে। ঘটনার দিন ওই মহিলার কাকা ভীমচন্দ্র সরকার সুজাতার স্বামী মণিকুমার স্বর্ণকার ও ননদ ঊর্মিলা দাসের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করেন। সেই মতো পুলিশ বধূ নির্যাতন, অ্যাসিড ছোড়া ও খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করে। তারপর অভিযুক্তদের বাড়িতে নাম কা ওয়াস্তে একবার ঘুরে এসেই দায় সেরেছে পুলিশ। এসডিপিও (তেহট্ট) সুনীল সিকদার বলেন, “মণি ও তার দিদি দু’জনেই পলাতক। যে ভাবেই হোক তাদের খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা হবে।”
তবে পুলিশের এই আশ্বাসে অবশ্য ভরসা পাচ্ছে না করিমপুর। ভরা বাজারের মধ্যে এমন ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা ও এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে। স্থানীয় বাসিন্দা সৌমিত্র বিশ্বাস বলছেন, “এই ঘটনার পরে দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গেল।” করিমপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিধান দত্ত বলেন, “বাসস্ট্যান্ডের মতো ব্যস্ত এলাকায় এমন একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমরাও উদ্বেগে রয়েছি। অবিলম্বে পুলিশ যদি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে না পারে তাহলে সেই উদ্বেগ আরও বাড়বে।” করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক স্বাগত অধিকারী বলেন, “অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার। নাহলে এমন অপরাধ আরও বাড়বে।” স্থানীয় বিধায়ক সিপিএমের সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ ও করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলের অতনু ঘোষ ও স্থানীয় কংগ্রেস নেতা তারক সরখেল সকলেই অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
ছেলেকে পরীক্ষার জন্য স্কুলে পৌঁছে দিতে হবে বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে ডেকে এনে স্ত্রীর মুখে অ্যাসিড ছুড়েছিল মণি। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, “ওই দৃশ্যটার কথা ভাবলে এখনও গা শিউরে উঠছে। বাজারের মধ্যে হঠাৎ একজন মহিলা ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করে ছুটতে ছুটতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। গিয়ে দেখি, অ্যাসিডে ঝলসে গিয়েছে মুখ-সহ শরীরের বেশ কিছু অংশ। পাশে পড়ে রয়েছে নতুন পেন, ক্লিপবোর্ড ও স্কুলের পোশাক।” স্থানীয় লোকজন ওই মহিলাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেন।
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে সুজাতা কোনওমতে শুধু বলেন, “অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। সহ্য করতে পারছি না।” পাশের শয্যার তপতী কর্মকার বলেন, “যন্ত্রণায় কাল সারারাত ও ছটফট করেছে। একটুও ঘুমোতে পারেনি। বেচারা খুব কষ্ট পাচ্ছে গো।”
বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির সদস্য তথা স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বাসুদেব সরকার বলেন, “গয়নার কাজে অ্যাসিডের প্রয়োজন হয়। ফলে স্বর্ণশিল্পী হওয়ার সুযোগে অ্যাসিড জোগাড় করে অভিযুক্ত ওই যুবক যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। তার কঠোর শাস্তি চাইছি।”