Advertisement
E-Paper

আজ সকার কাপ ফাইনাল, উত্তেজনায় ফুটছে নবদ্বীপ

সবে শুরু হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধের খেলা। টাউন ক্লাবের ডিফেন্স কিছু বোঝার আগেই সপ্তর্ষি ক্লাবের সেন্টার ফরোয়ার্ড বল নিয়ে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের পরপর কাটিয়ে সোজা পৌঁছে গেলেন একেবারে গোলপোস্টের সামনে। গোলকিপারও নেমে এসেছে নীচে। তৈরি এক অসাধারণ মুহূর্ত, মাঠের চারদিকে ভিড়-করে থাকা অন্তত হাজার তিনেক লোকের গলা দিয়ে বেরিয়ে আসছে গো-ও-ও-ল।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:১১
নবদ্বীপে সপ্তর্ষি ক্লাব ও টাউন ক্লাবের মধ্যে খেলার একটি মুর্হূত। নিজস্ব চিত্র।

নবদ্বীপে সপ্তর্ষি ক্লাব ও টাউন ক্লাবের মধ্যে খেলার একটি মুর্হূত। নিজস্ব চিত্র।

সবে শুরু হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধের খেলা। টাউন ক্লাবের ডিফেন্স কিছু বোঝার আগেই সপ্তর্ষি ক্লাবের সেন্টার ফরোয়ার্ড বল নিয়ে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের পরপর কাটিয়ে সোজা পৌঁছে গেলেন একেবারে গোলপোস্টের সামনে। গোলকিপারও নেমে এসেছে নীচে। তৈরি এক অসাধারণ মুহূর্ত, মাঠের চারদিকে ভিড়-করে থাকা অন্তত হাজার তিনেক লোকের গলা দিয়ে বেরিয়ে আসছে গো-ও-ও-ল।

গোল অবশ্য হল না। গোলপোস্টের অনেকটা উপর দিয়ে ভেসে গেল বল। শেষ অবধি অবশ্য সপ্তর্ষিই ১-০ গোলে হারায় টাউন ক্লাবকে। খেলার একমাত্র গোলটি করেন সুমন সূত্রধর। বিপুল উত্তেজনার মধ্যে খেলা ভাঙে।

না, ফাইনাল নয়। সেমি-ফাইনালে হেরে যাওয়া দুই দলের খেলা, তৃতীয় স্থানের জন্য। তাতেই নবদ্বীপ মিউনিসিপ্যাল সকার কাপ (সংক্ষেপে এমএসসি) জমে উঠেছিল পুরোদস্তুর। মাঠে তিলধারণের জায়গা ছিল না। খোদ রাজ্যের মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহাও এ দিন তাঁর কৃষ্ণনগরের বিকেলের এক অনুষ্ঠানে যাওয়া পিছিয়ে দিয়ে মাঠে হাজির ছিলেন আগাগোড়া।

শনিবারের সেমি-ফাইনাল নিয়ে এই উন্মাদনা বুঝিয়ে দিল আজ, রবিবার, কী চেহারা নেবে নবদ্বীপ। তিন সপ্তাহের টুর্নামেন্টের শেষ দিনের দিকে তাকিয়ে গোটা শহরজুড়ে নজিরবিহীন উত্তেজনা। ষোল ক্লাবের টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে মিলন সঙ্ঘ আর ভ্রাতৃ সঙ্ঘ। ইতিমধ্যেই মিলন সঙ্ঘ নিজেদের এলাকায় (১৮ নং ওয়ার্ড) লাগিয়ে ফেলেছে এলইডি ডিসপ্লে বোর্ড। বোর্ডে ফাইনালের দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম, খেলার তারিখ, সময়, মাঠের নাম ভেসে উঠছে। শহরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে প্রচার গাড়ি। সবুজ ফ্লেক্স ও এলইডি আলেো দিয়ে ফুটবল মাঠের আদলে সাজানো সেই ম্যাটাডোর থেকে ঘোষণা হচ্ছে, “মাঠে মহিলাদের বসিবার সুবন্দোবস্ত আছে।” মহিলারা অবশ্য ঘোষণার অপেক্ষা না করেই নিয়মিত ভিড় জমাচ্ছেন শহরের তিন প্রান্তের তিন মাঠে। ম্যাচের দিন দর্শকের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

মঠ-মন্দির-কীর্তনের শহর নবদ্বীপ এখন কার্যত ফুটবলের দখলে। আইএসএল-এর ধাঁচে পরিকল্পিত সকার কাপ ঘিরে ক্লাবকর্তা থেকে স্থানীয় বাসিন্দা, সবার মধ্যে ফুটবল নিয়ে আবেগ জাগিয়ে তুলেছে। ফাইনাল ম্যাচ দেখতে পূর্বস্থলী, কালনা থেকেও দর্শক আসার কথা। মাঠে দর্শক সাত-আট হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে, বলছে পুলিশ।

আইপিএল-এর ধাঁচে খেলা শুরু হওয়ার আগে মাঠে থাকছে নাচ, জাগলিং-এর মতো আয়োজন। দু’টি দলের খেলোয়াড়দের হাত ধরে মাঠে নিয়ে যাবে ৩২ জন স্কুলপড়ুয়া। মাঠে অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকছেন জাতীয় দলের প্রাক্তন খেলোয়াড় মুরশেদ আলি ও রিয়াজুল ইসলাম। মহিলাদের জন্য পাতা হবে কয়েকশো আসন। মাঠে যাঁদের জায়গা হবে না, তাঁদের জন্য দু’দিকে দুটি জায়ান্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থা থাকছে।

রবিবার যে মাঠে খেলা হবে সেই প্যাকের মাঠের চারপাশে জায়গা কম। তিনদিকেই রাস্তা। খোলা মাঠের ভিড় উপচে রাস্তায় আসবেই। ফাইনালের জন্য ওই তিনটি রাস্তা খেলা চলাকালীন ‘নো এন্ট্রি’ করা হবে। চারপাশের রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে সকাল থেকেই।

রবিবার মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী দু’দলই চমক দেওয়ার জন্য তৈরি। এমএসসি-র আয়োজক নবদ্বীপ পুরসভাও রবিবার প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলাকে নানা ভাবে আকর্ষণীয় করার জন্য নতুন নতুন পরিকল্পনা করছেন।

মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষবাবু বলেন “এই প্রতিযোগিতা মানুষকে যেভাবে মাঠমুখী করেছে সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য। মনে হয় এরপর থেকে ক্লাবগুলো ভাল ফুটবলের জন্য ধারাবাহিক ভাবে ভাববে।”

শনিবারের ম্যাচ জেতার পরে সপ্তর্ষি ক্লাবের সম্পাদক সত্যজিৎ গোস্বামী বলেন, “প্রথম বছর অনেক কিছু জানলাম। আগামী বছরের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি।” জাতীয় স্তরের রেফারি নবদ্বীপের দীপক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গত ৩৭ বছর ধরে সারা ভারত জুড়ে অসংখ্য ম্যাচ খেলিয়েছি। নিজের শহরেই এমন একটা টুর্নামেন্টে বাঁশি দেওয়ার সুযোগ হবে তা কল্পনাই করতে পারিনি।”

nabadwip debasis bandyopadhyay soccer cup final
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy