পানিফল চাষে সফল হয়েছে নদিয়া। সেই পথেই এ বার পা বাড়াল পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদও। উদ্যান পালন দফতরের সহযোগিতায় বহরমপুরের নওদা পানুর গ্রামে জনা দশেক চাষি ইতিমধ্যেই পানিফলের চাষ শুরু করেছেন। পানিফল চাষের জন্য পরিচিত নদিয়ার কালিনারায়ণপুরের চাষিরা তাঁদের এ ব্যাপারে সবরকম সাহায্য করছেন।
মুর্শিদাবাদের সহ-উদ্যানবিদ শুভদীপ নাথ বলেন, “এই চাষের জন্য দরকার জলে ডোবা জমি। একবার চারা লাগালে আর নতুন চারার দরকার নেই। সে ভাবে সার, কীটনাশক বাবদ খরচও নেই। পুজোর সময় এ জেলার বিভিন্ন বাজারে পানিফলের চাহিদা বেড়ে যায়। এই সব নানা কারণে আমাদের জেলার চাষিদেরও পানিফল চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।” নদিয়ার উদ্যান পালন দফতরের জেলা আধিকারিক রাহুল মারিক বলেন, “পানিফলের চাষে যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছে কালিনারায়ণপুর, রানাঘাট, চাকদহ-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকা। অর্থকরী ফসল হিসাবে পানিফলের বাজারও রয়েছে। মুর্শিদাবাদের চাষিদের সঙ্গে নদিয়ার চাষিদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। চারা থেকে শুরু করে চাষের পদ্ধতি-সহ নানা বিষয়ে এখানকার চাষিরা তাঁদের সাহায্যও করছেন।”
কালিনারায়ণপুরের বিশ্বজিৎ মণ্ডল পেশায় হাই স্কুলের শিক্ষক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পানিফলের চাষ করছেন। বিশ্বজিৎবাবু বলছেন, “আমাদের গ্রামে প্রায় চার দশক ধরে পানিফলের চাষ হচ্ছে। আমাদের পরিবারও এই চাষের সঙ্গে যুক্ত। গ্রামের বহু চাষি এই চাষ করে ভাল লাভ করছেন। ” তিনি জানান, এক বিঘে ডোবা জমিতে হাজার দু’য়েক টাকার চারা ও এক হাজার টাকার মতো সার ও কীটনাশক লাগে। ইতিমধ্যেই চারা লাগানো হয়ে গিয়েছে। বিশ্বকর্মা পুজোর সময় পানিফল উঠতে শুরু করবে। প্রথম দিকে কিলোগ্রাম প্রতি পানিফলের দাম থাকে প্রায় ৩০ টাকা। পরে জোগান বাড়লে তা ১৮ থেকে ২০ টাকায় নেমে আসে। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পাঁচ বার ফল উঠবে। বিঘা পিছু ২৫ থেকে ৩০ মন করে ফলন হয়।
গ্রামের অপর একজন চাষি শচীন মণ্ডল প্রায় ৪০ বছর ধরে চাষ করছেন পানিফলের। শচীনবাবু জানান, নদিয়া থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পানিফল যায়। বাজারে ভাল চাহিদা আছে। পানিফল চাষের পদ্ধতিও সহজ। ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। বহরমপুর থেকে এই চাষে আগ্রহ দেখিয়ে কয়েকজন চাষি এসেছিলেন। চারার পাশাপাশি তাঁদের চাষের পদ্ধতিও শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। বহরমপুরের নওদা পানুর গ্রামের মনোতোষ মণ্ডলের বিঘে ছয়েক জমি রয়েছে। এর আগে তিনি দু’বার ক্যাপসিকাম চাষ করে ভাল দাম পেয়েছিলেন। ব্রকোলি, লেটুস শাক, লাল বাঁধাকপিরও চাষও তিনি করেছিলেন। পানিফল চাষের কথা জানতে পেরে তিনি শুধু নিজে উদ্যোগী হয়েছেন তাই নয়, রাজি করিয়ে ফেলেছেন আরও জনা দশেক চাষিকে।
মনোতোষবাবু বলেন, “বাড়ির পাশে বিঘে খানেক ডোবা পড়ে রয়েছে। কালিনারায়ণপুর থেকে চারা নিয়ে এসে সেখানেই লাগিয়ে দিয়েছি। আশা করছি, আশ্বিন মাসের শেষ থেকেই পানিফল উঠতে শুরু করবে। একবার পোঁতা চারা অন্তত ১২ বছর ধরে ফল দেয়।” জেলা উদ্যান পালন দফতরের আশা, আগামী দিনে এই চাষে উৎসাহ দেখাবেন মুর্শিদাবাদের বহু চাষি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy