Advertisement
E-Paper

খড়গ্রামের পর পুষ্টি-বাগান দাদপুরে

ছোট্ট একটা চালা ঘর। তার পাশে একফালি সবুজ। সময় সময় গাছে পেকে উঠে আম, জাম, পেয়ারা, লেবু। উঠোনে আদুল গায়ে ঘুরে বেড়ান ছেলেটার খিদের মেটানোর ভাবনা অনেকটা কমেছে মায়েরও। ছবিটা হয়ত ভবিষ্যতের। তবু আশায় বুক বাঁধছে শাঁখদা। দারিদ্র্য আর অপুষ্টি যেখানে একে অপরের দোসর, সেখানে সেই যুগলকে ভাঙতেই উদ্যোগী হচ্ছে মুর্শিদাবাদ জেলা উদ্যানপালন দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫০

ছোট্ট একটা চালা ঘর। তার পাশে একফালি সবুজ। সময় সময় গাছে পেকে উঠে আম, জাম, পেয়ারা, লেবু। উঠোনে আদুল গায়ে ঘুরে বেড়ান ছেলেটার খিদের মেটানোর ভাবনা অনেকটা কমেছে মায়েরও।

ছবিটা হয়ত ভবিষ্যতের। তবু আশায় বুক বাঁধছে শাঁখদা।

দারিদ্র্য আর অপুষ্টি যেখানে একে অপরের দোসর, সেখানে সেই যুগলকে ভাঙতেই উদ্যোগী হচ্ছে মুর্শিদাবাদ জেলা উদ্যানপালন দফতর। সার্ক-র আদর্শ গ্রামের ‘পুষ্টি বাগান’ গড়ার ধারনাকে কাজে লাগাতে চাইছে তারা। পরীক্ষামূলক ভাবে বেলডাঙা-২ ব্লকের দাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত শাঁখদা গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।

উদ্যানপালন দফতরের সহ- উদ্যানবিদ শুভদীপ নাথ বলেন, “গ্রামাঞ্চলে বাড়ির পাশে কিছুটা ফাঁকা জমি থাকেই। সেই জায়গাকে কাজে লাগিয়ে শাক সব্জি বা ফল চাষ করতে পারলে কিছুটা সুরাহা হয়। সব্জি বিক্রি করে রোজগার হলে ভাল। না হলে প্রাথমিক পুষ্টিটুক নিজের বাগান থেকে সুনিশ্চিত করা যায়।” তিনি জানান, সামান্য জমিতেই ঋতুকালীন নানা শাকসব্জি চাষ করা সম্ভব হবে।

শাঁখদা গ্রামে আছে ৭৫ টি পরিবার। ভাগীরথীর চরে জল বেষ্ঠিত এই গ্রাম মূল জেলা থেকে বিচ্ছিন্নই বলা যায়। বাসিন্দারাও কেউ বাঙালি নন। বিহারের বাসিন্দা তফশিলি রজোয়ার সম্প্রদায়ের মানুষগুলো এক সময় রামনগরের চিনিকলে কাজ করতে এখানে এসেছিলেন। তারপর থেকে এই তাঁদের বাসস্থান। চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এঁদের রোজগার বলতে কারও রয়েছে সামান্য লিজ নেওয়া জমি, কারও আবার গোটা চারেক ছাগল বা ভেড়া। নিকটতম স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয় কিলোমিটার দূরে বেলডাঙায়। তাও যাতায়াতের ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে।

এই শাঁখদা গ্রামেই ‘পুষ্টি বাগান’ প্রকল্পে সাড়াও মিলছে। স্থানীয় বাসিন্দা টুনুবালা রাজোয়ার বলেন, “রোজগার তেমন কিছু নেই। বাড়ির পাশে কিছুটা জায়গা তো পড়েই রয়েছে। সময়েরও অভাব নেই। তাই পুষ্টিবাগান করার প্রস্তাব পেয়ে রাজি হয়ে গিয়েছি।” আর এক বাসিন্দা সুখেন রাজোয়ার বলেন, “ছাগল চড়িয়ে কিছু রোজগার হয়। বাড়িতে একটা বাগান থাকলে নিজেরাও তো খেয়ে বাঁচতে পারব।”

তবে শাঁখদা প্রথম নয়। ২০১১ খড়গ্রাম ব্লকের জয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘পুষ্টি বাগান’ গড়ে সাফল্য পেয়েছে দফতর। জয়পুরের ১২ গ্রামের ২৩০ টি পরিবারে এর আগেই এই ধরনের বাগান তৈরি হয়েছে। তেমনই একটি গ্রাম ডাঙাপাড়া। সেখানে ইতিমধ্যেই ফল ধরেছে বাগানে বাগানে। খুশি বাসিন্দারাও। তাঁদের সাফল্যই আশা জাগাচ্ছে শাঁখদাবাসীর মনে।

উদ্যান পালন দফতরের ক্ষেত্র পরামর্শদাতা বিমলকান্তি লাহা বলেন, “পরিকল্পিত পদ্ধতি মেনে প্রশিক্ষণ দিয়ে পুষ্টিবাগান গড়া হচ্ছে। কোনও কৃত্রিম সার ব্যবহার না করে বাড়ির নিত্য দিনের আবর্জনাকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে উৎপাদন বাড়ান যায়, সেই প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়।”

বেলডাঙ্গা ২ ব্লকের বিডিও অরিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো শাঁখদা গ্রামের ১০০ শতাংশ বাসিন্দাই তফশিলি জাতিভুক্ত। আর্থিক উন্নয়ন খুব জরুরি। সে কারণেই উদ্যান পালন দফতরের সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। তারাই এই ব্যবস্থা করছেন।” এর জন্য যে অর্থ লাগবে তা প্রাথমিক পর্যায়ে দেবে কৃষি দফতর। পরে অর্থের সংস্থান করবে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি।

dadpur pusti bagan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy