চার প্রতিদ্বন্দ্বী মহাদেব বসাক, সমরলাল সিংহ রায়, বিশ্বনাথ গুপ্ত ও রত্না ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
সময়ের ব্যবধান মাত্র তিন বছর। কিন্তু লড়াইয়ের ব্যবধান কয়েক গুণ বেশি। অল্প সময়ের মধ্যে নদিয়ার চাকদহ বিধানসভার উপ-নির্বাচনে লড়াইটা যে এত কঠিন হয়ে যাবে, তা বুঝতে পারেননি খোদ প্রার্থী থেকে শুরু করে তৃণমূলের পোড় খাওয়া নেতা-কর্মীরাও। প্রকাশ্যে সেভাবে কিছু না বললেও দলের একাংশ অবশ্য মানছেন যে, ২০১১ সালের বিধানসভার লড়াই এর থেকে ঢের সহজ ছিল।
কী রকম? তৃণমূলের জেলা স্তরের এক নেতার ব্যাখ্যা, ২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট ছিল। ফলে বিধানসভাতে লড়াইটা ছিল শুধুমাত্র সিপিএমের বিরুদ্ধে। এবার কংগ্রেসের প্রার্থী রয়েছে। আর রয়েছে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো মোদী-ঝড়।
কিন্তু অঙ্কের হিসাবে তৃণমূল এই এলাকায় বেশ এগিয়ে রয়েছে। ২০১৩ সালের পুরসভা নির্বাচনে চাকদহ পুরসভায় তৃণমূল সিপিএমের থেকে ২৮ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল। বর্তমানে এখানকার ২১টি ওয়ার্ডের সবকটিই রয়েছে তৃণমূলের দখলে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তৃণমূলের চেয়ে সিপিএম বেশ পিছিয়ে ছিল। এই বিধানসভা এলাকার চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতি সহ ৮টি পঞ্চায়েতের সবকটিই তৃণমূলের দখলে রয়েছে।
যদিও চাকদহ একটা সময় সিপিএমের দুর্গ বলেই পরিচিত ছিল। এখানে ঘাসফুলের রমরমা বেড়েছে কয়েক বছর থেকে। রাজ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর থেকে টানা ২০১১ সাল পর্যন্ত বিধানসভা ছিল বামেদের দখলে। ১৯৮৭ সালে চাকদহ পুরসভায় প্রথম নির্বাচন হয়েছিল। সেই থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এখানে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী বিশ্বনাথ গুপ্ত তৃণমূলের নরেশচন্দ্র চাকীর কাছে ১৪ হাজার ৯৯ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। নরেশবাবু পেয়েছিলেন ৮৮ হাজার ৭৭১টি ভোট এবং বিশ্বনাথবাবু পেয়েছিলেন ৭৪ হাজার ৬৭২টি ভোট।
গত ২৪ ফেব্রয়ারি কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে বিধায়ক নরেশচন্দ্র চাকীর মৃত্যু হওয়ায় ১২ মে রাজ্যের পঞ্চম দফা লোকসভা নির্বাচনের দিন চাকদহ বিধানসভাতে উপনির্বাচন। এবার এই কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৪১২ জন। বুথ রয়েছে ২৬২টি। এবারেও সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন বিশ্বনাথ গুপ্ত। তৃণমূল থেকে দাঁড়িয়েছেন রত্না ঘোষ। কংগ্রেসের সমরলাল সিংহ রায় (খোকন), বিজেপির মহাদেব বসাক ও পিডিএসের পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হয়েছেন।
কিন্তু তৃণমূলের লড়াইটা কঠিন কেন? স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনীতির কারবারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের প্রার্থী রত্না ঘোষ হরিণঘাটার বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দারা ও তৃণমূলের একটা বড় অংশ চেয়েছিল স্থানীয় কাউকেই তৃণমূলের প্রার্থী করা হোক। কিন্তু তা না হওয়ায় দলের মধ্যেই অসন্তোষ দেখা দেয়। তাছাড়া এবারে কংগ্রসের যিনি প্রার্থী হয়েছেন সেই সমরবাবুও এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। তাঁকে জেতাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন জেলা সভাপতি শঙ্কর সিংহও। সেই সঙ্গে মোদী হাওয়ায় বিজেপির যে ভোট বাড়বে তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত সকলেই। এ ছাড়াও রয়েছে গত বছরের পুরভোটের ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতা। তৃণমূল ছাড়া বাকি সব দলেরই অভিযোগ, নির্বাচনের নামে পঞ্চায়েত ও পুরভোটে প্রহসন চলেছে। এবার সুষ্ঠুভাবে ভোট হলে তৃণমূলের অনেক অঙ্কই মিলবে না। তাছাড়াও গত বিধানসভা নির্বাচনে পিডিএসের কোনও প্রার্থী ছিল না। এবার আছে। আর আছে ভোট কাটাকুটির খেলা। এই সব মিলিয়েই নির্বাচনের আগে স্বস্তিতে নেই তৃণমূল।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমল ভৌমিক বলছেন, “নির্বাচন অবাধ হলে পঞ্চায়েত ও পুরভোটের যোগ্য জবাব দেবেন ভোটাররা।” তাঁর সংযোজন, “আর সেটা বুঝতে পেরেই তৃণমূল আমাদের কর্মীদের প্রচার করতে বাধা দিচ্ছে, মারধর করছে, ভয় দেখাচ্ছে।”
ভাল ফল নিয়ে আশাবাদী কংগ্রেসও। জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর সিংহ বলেন, “গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতায় আমাদের প্রার্থী অন্য দলের প্রার্থীর তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। আমার বিশ্বাস, মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারলে সমর্থন আমাদের প্রার্থীর পক্ষেই যাবে। নির্বাচন কমিশনকেও জানিয়েছি গত পঞ্চায়েত ও পুরসভার মতো পরিস্থিতি যাতে এবার না হয় সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য।”
বিজেপির চাকদহ ব্লক সভাপতি নারায়ণচন্দ্র দে বলেন, “মোদী হাওয়ায় তৃণমূল রীতিমতো টলে গিয়েছে। তাঁরা বিজেপিকে এখন ভয় পাচ্ছে। আর সেই কারণেই ওরা নানা ভাবে আমাদের কর্মীদের ভয় দেখাচ্ছে। তবে এতে বিশেষ কোনও লাভ হবে না। কারণ মানুষ এবার ঠিখ করেই ফেলেছেন তাঁরা কাকে ভোট দেবেন।”
জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য এসব যুক্তি মানতে নারাজ। তিনি বলছেন, “চাকদহে আমাদের লড়াইটা মোটেও কঠিন নয়। গত পঞ্চায়েত ও পুরসভা নির্বাচনে এলাকার মানুষ তাঁদের রায় দিয়ে জানিয়েই দিয়েছেন যে, চাকদহে তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও দলের প্রয়োজন নেই। গত বিধানসভা নির্বাচনের চেয়ে এবার অনেক বেশি ভোটে জিতব। মিলিয়ে নেবেন।”
হিসাব মেলাবে ১৬ মে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy