Advertisement
E-Paper

চোর সন্দেহে পিটিয়ে খুন ডোমকলে

ফের জনতার শাসন। এবং ফের এক যুবকের মৃত্যু। কলকাতার এনআরএসের কোরপান-কাণ্ডের পরে এ বার ডোমকলের রায়পুর। রবিবার সাতসকালে চোর সন্দেহে এক যুবককে বাড়ি থেকে বের করে এনে পিটিয়ে, লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় খুঁচিয়ে খুন করল উত্তেজিত জনতা। নিহত ওই যুবকের নাম মিরাজুল শেখ (২৮)। তিনি রায়পুরের কারিগরপাড়ার বাসিন্দা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৬
ভাঙচুর মিরাজুলের বাড়িতেও। নিজস্ব চিত্র।

ভাঙচুর মিরাজুলের বাড়িতেও। নিজস্ব চিত্র।

ফের জনতার শাসন। এবং ফের এক যুবকের মৃত্যু।

কলকাতার এনআরএসের কোরপান-কাণ্ডের পরে এ বার ডোমকলের রায়পুর। রবিবার সাতসকালে চোর সন্দেহে এক যুবককে বাড়ি থেকে বের করে এনে পিটিয়ে, লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় খুঁচিয়ে খুন করল উত্তেজিত জনতা। নিহত ওই যুবকের নাম মিরাজুল শেখ (২৮)। তিনি রায়পুরের কারিগরপাড়ার বাসিন্দা। মিরাজুলের পরিবারের তরফে ১১ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রবিবার রাত পর্যন্ত ওই ঘটনায় পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। ডোমকলের এসডিপিও অমরনাথ কে বলেন, “অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”

শনিবার রাতে কারিগরপাড়া এলাকায় একটি বাড়ি থেকে সাইকেল, গ্যাসের সিলিন্ডার-সহ বেশ কিছু জিনিসপত্র চুরি যায়। রবিবার সকালে গ্রামের জনাকয়েক বাসিন্দা সেই চুরি যাওয়া মালপত্র পড়ে থাকতে দেখে মিরাজুলের বাড়ির পাশের সর্ষেখেতে। দু’একজন করে আরও কিছু লোকজন জুটে যায় ঘটনাস্থলে। এরপর আর থানা-পুলিশ-অভিযোগের কেউ ধার ধারেনি। উত্তেজিত ওই গ্রামবাসীদের একাংশ মিরাজুলের বাড়ি ভাঙচুর করে। তারপর ওই যুবককে নিয়ে আসা হয় পাড়ার মোড়ে। সেখানে প্রকাশ্যে প্রথমে কিল, চড়, ঘুসি ও পরে লোহার রড দিয়ে শরীরের নানা জায়গায় খুঁচিয়ে ‘চুরির শাস্তি’ দেয় উত্তেজিত জনতা।

খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই যুবককে উদ্ধার করে ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই ওই যুবক মারা গিয়েছেন। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “এটা অত্যন্ত নৃশংস ঘটনা। এ ভাবে যারা ওই যুবককে খুন করেছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।” প্রসঙ্গত, গত ১৬ নভেম্বর ভোরে ঠিক এ ভাবেই এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক কোরপান শাহকে চোর সন্দেহে থামে বেঁধে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল।

এমন ঘটনা মানতে পারছেন না মৃতের পরিবারের সদস্যরা। পেশায় দিনমজুর মিরাজুলের বাড়িতে রয়েছেন মা, স্ত্রী, চার ছেলে ও চার ভাই। স্ত্রী রেহেনা বিবি বলেন, “লোকটা বাড়িতেই বসেছিল। আচমকা লোকজন এসে বাড়ি ভাঙচুর শুরু করল। পরে ছেলে ও বাড়ির লোকজনের চোখের সামনে ওকে মারতে মারতে নিয়ে গেল। আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদেরও হেনস্থা করা হয়।”

তবে গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, “মিরাজুল ও তার ভাইদের অত্যাচারে গোটা গ্রাম অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। গ্রামের এমন কোনও বাড়ি নেই যেখানে ওরা চুরি করেনি। এ কথা গ্রামের সবাই জানে। মিরাজুল হেরোইনের নেশা করত। আর সেই নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে গ্রামের সাইকেল, হাঁস, মুরগি যা পেত তাই চুরি করত। ফলে এলাকার সকলেরই ওদের উপরে বহু দিন থেকেই রাগ ছিল। এ দিনের ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মিরাজুলের এক ভাইকে চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সম্প্রতি সে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। তবে মিরাজুলের বিরুদ্ধে তেমন কোনও অভিযোগ আছে কি না তা অবশ্য মনে করতে পারেনি ডোমকল থানার পুলিশ।

তবে আইন নিজে হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনার নিন্দা করেছেন ওই গ্রামেরই কিছু বাসিন্দা। তাঁদের কথায়, “বিষয়টি পুলিশকে জানানো যেত। তারা যা করার করত। কিন্তু এ ভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে একজনকে মেরে ফেলা মোটেই ঠিক হয়নি।”

মিরাজুলের পরিবারের আক্ষেপ, “দেশে কি আইন-কানুন বলে কিছুই নেই! একজনকে সবার চোখের সামনে নির্মম ভাবে কিছু মানুষ মেরে ফেলল। অথচ কেউ প্রতিবাদটুকু করল না!”

domkol mirajul sekh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy