Advertisement
E-Paper

জগন্নাথদেবের ভোগে পরমান্ন থেকে পিৎজা

পাস্তা থেকে পায়েস, পিৎজা থেকে পুষ্পান্ন কিংবা পুডিং থেকে পান্তুয়া। বিস্কুট থেকে বাতাসা, কেক থেকে কচুরি, চাউমিন থেকে চপ। সোজা রথ থেকে উল্টো রথ পর্যন্ত আট দিন মাসির বাড়িতে জগন্নাথদেবের ভোগের তালিকায় দেশি-বিদেশি হাজারও ব্যাঞ্জনের এমনই সহাবস্থান এখন নবদ্বীপ বা মায়াপুরের মন্দিরগুলিতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৪ ০০:৪৯

পাস্তা থেকে পায়েস, পিৎজা থেকে পুষ্পান্ন কিংবা পুডিং থেকে পান্তুয়া। বিস্কুট থেকে বাতাসা, কেক থেকে কচুরি, চাউমিন থেকে চপ। সোজা রথ থেকে উল্টো রথ পর্যন্ত আট দিন মাসির বাড়িতে জগন্নাথদেবের ভোগের তালিকায় দেশি-বিদেশি হাজারও ব্যাঞ্জনের এমনই সহাবস্থান এখন নবদ্বীপ বা মায়াপুরের মন্দিরগুলিতে। এখানে বহু মন্দিরেই জগন্নাথের মাসির বাড়ি বা গুন্ডিচা নেই। তাই বলে মাসির আদরের কোনও ঘাটতি নেই। বরং জগন্নাথের ভোগের জন্য এমন দেশি-বিদেশি ব্যাঞ্জনের আন্তর্জাতিক আয়োজন খুব কম জায়গাতেই হয়।

মায়াপুরের ইস্কনের চন্দ্রোদয় মন্দিরে জগন্নাথদেব আসেন প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের রাজাপুরের জগন্নাথ মন্দির থেকে। প্রাচীন এই জগন্নাথ মন্দিরটি এক সময়ে ছিল রাজাপুরের আদি বাসিন্দা ফটিক চট্টোপাধ্যায়ের। পুত্রসন্তানহীন চাটুজ্যেমশাই তাঁর মেয়েদের বিয়ের পর জগন্নাথের সেবা পুজোর ভার ইস্কনের হাতে তুলে দেন। সেই জীর্ণ মন্দির সংস্কার করে ইস্কন জগন্নাথের নিত্যসেবা এবং সাড়ম্বরে রথের আয়োজন করছেন ২০০০ সাল থেকে। মায়াপুরে ইস্কনের মূল মন্দিরে অস্থায়ী ভাবে গুন্ডিচা তৈরি করে আট দিন ধরে সেখানেই জগন্নাথদেবের বিশেষ পুজো হয়।

অন্য দিকে নবদ্বীপের প্রাচীন মায়াপুরে চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমের অস্থায়ী গুন্ডিচায় থাকেন বালকসাধুর সুপ্রাচীন রথটি। দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠের জগন্নাথদেবের অবশ্য মাসির বাড়ি আছে। এই আট দিন তিনি থাকেন ফাঁসিতলার জগন্নাথ মন্দিরে। কোনও মাসির বাড়ি নেই, তাই সারদেশ্বরী আশ্রমের সন্ন্যাসিনীদের পরিচালিত রথ যাত্রা শেষে ফিরে আসে আশ্রমেই। তবে সারা বছর জগন্নাথদেব যে ঘরে থাকেন এই আটদিনে বদলে যায় তাঁর ঘর। একতলা থেকে দোতলায় ওঠেন দেবতা। সেখানেই তাঁর মাসির বাড়ি। তবে মাসির বাড়ি যেমনই হোক না কেন খাতিরদারিতে কার্পণ্য নেই কোথাও। সোজারথ থেকে উল্টোরথ। কেমন বন্দোবস্ত থাকে জগন্নাথদেবের ভোগের? উত্তরে ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রমেশ দাস জানান, প্রতিদিন জগন্নাথদেবকে ৫৬ রকম ভোগ দিয়ে পুজো করার কথা। তবে সেটা শুধু ৫৬ ভোগে আটকে থাকে না। হয়ে যায় ১৫৬ ভোগ। মন্দিরের তরফ থেকে ৫৬ ভোগ দেওয়া যেমন হয়, তেমনই ভক্তরাও এই ক’দিন জগন্নাথের জন্য নিজেরা নানা পদ রান্না করে আনেন। সব মিলিয়ে সে এক এলাহি কাণ্ড। আসলে এখানে স্থানীয় ভক্তদের মধ্যে একটা প্রথা চালু আছে, রথের এই ক’দিন ভক্তরা বাড়ি থেকে শুদ্ধাচারে নানা পদ রান্না করে জগন্নাথের জন্য নিয়ে আসেন। প্রতিদিন মধ্যাহ্নের ভোগে তা নিবেদন করা হয় জগন্নাথকে। ইস্কনের তরফে গুন্ডিচার এক পাশে কয়েক হাজার মাটির হাঁড়ি রেখে দেওয়া হয়। সকালে ভক্তরা সেই হাঁড়ি নিয়ে যান। তারপর বাড়িতে নিজেদের পছন্দ মতো পদ রান্না করে দুপুরে ওই হাঁড়িতে করেই জগন্নাথদেবকে নিবেদন করেন। প্রতিদিন এমন হাঁড়ির সংখ্যা হাজার ছুঁয়ে যায়। আর সেখানে কী কী পদ থাকে তা বলার থেকে কী থাকে না বলা সহজ। রমেশবাবু জানান, প্রতিদিন ভোর সাড়ে চারটে থেকে শুরু হয়ে যায় ইস্কনে ভোগের আয়োজন। মোট চল্লিশ জন নানা দেশের বাসিন্দা নানা ধরনের পদ রান্না করতে শুরু করেন। বেলা বারোটার মধ্যে সব কিছু তৈরি হয়ে যায়। বিদেশি ভক্তরা পিৎজা, পাস্তা, পুডিং, কেক, চাউমিন এবং নানা ধরনের বিস্কুট তৈরি করেন জগন্নাথদেবের জন্য।

নবদ্বীপের চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রম, সারদেশ্বরী আশ্রম বা দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠে জগন্নাথদেবের ভোগেও কার্যত একই রকমের বৈচিত্র্য দেখা যায়। চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমের প্রধান অদ্বৈত দাস বলেন, “স্বয়ং মহাপ্রভু যে জগন্নাথদেবকে পুজো করতেন তাঁকে নিয়ে নবদ্বীপের মঠ-মন্দিরে একটু বিশেষ ধরনের উন্মাদনা থাকবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। বিশেষ পুজোপাঠ ছাড়াও তাই রথের ক’টা দিন প্রতিটি মঠ-মন্দিরে ভিন্ন ধরনের ভোগরাগের ব্যবস্থা হয়।” চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমে যেমন অন্ন, পুষ্পান্ন, পরমান্নের পাশাপাশি জগন্নাথের প্রিয় পদের আয়োজন করা হয়। তেমনই সারদেশ্বরী আশ্রমে বিকেলের দিকে ভেজে দেওয়া হয় চপ বা মালপোয়া।

পদ-নামচা

অন্ন: সাধারণ অন্ন, পুষ্পান্ন, সব্জি পোলাও, মশলা পোলাও, ফ্রায়েড রাইস, লেমন রাইস, মিক্সড ভেজ রাইস, জিরা রাইস, নারকেল রাইস, তেঁতুল রাইস, দই ভাত।

রুটি: চাপাটি, গমের রুটি, সেঁকা রুটি, ভাপা রুটি, কচুরি, ডালের কচুরি, দই চাপাটি, আলুর পরোটা, ফুলকপির পরোটা, মশালা পরোটা, ভাজাপুরি, ডালপুরি, কলাপুরি, রাধাবল্লভী।

ডাল: জগন্নাথের প্রিয় মিষ্টি ডাল, মুগ ডাল, ছোলার ডাল, মটর ডাল, সম্বর ডাল, পকোড়া ডাল, টম্যাটো ডাল, পালং ডাল, টক ডাল, তেতো ডাল।

সব্জি: শুক্তো, নানা রকম শাক, নানা ধরনের কোপ্তা, আলুর দম, মোচার ঘণ্ট, থোরের তরকারি, দই বেগুন, ছানার রসা, ধোঁকার ডালনা।

চাটনি: কাঁচা আম, পেঁপে, টম্যাটো, আমড়া, চালতা, জলপাই, নারকেল, পুদিনা, রায়তা, খেজুর, আমসত্ত্ব, মিক্সড ফ্রুট, আনারস এবং নানা রকমের আচার।

মিষ্টান্ন: পরমান্ন, লাল দই, সাদা দই, ক্ষীর, রাবড়ি, রসগোল্লা, বরফি, কালাকাঁদ, সরপুরিয়া, নানা রকমের সন্দেশ, মালপোয়া, হালুয়া, মোহনভোগ, খাজা, গজা, লাড্ডু।

পানীয়: নানা রকমের লস্যি ও সরবত, সব ধরনের ফলের রস, নারকেল দুধ, এলাচ দুধ।

ফল: সব রকমের গোটা ফল ।

ভিনদেশি পদ: পাস্তা, পিৎজা, পুডিং, কেক, চাউমিন, বিস্কুট।

nabadwip iskcon mayapur ratha yatra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy