Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
চাপড়া

টাকা ফেরানোর চিঠি, অস্বস্তি তৃণমূলে

টাকা দিয়েও যাঁরা চাকরি বা জমির পাট্টা পাননি এমন ব্যক্তিদের টাকা বিধায়কের অফিস থেকে ফেরত দেওয়া হবে। ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতির নামে এই মর্মে বেশ কিছু চিঠি সাধারণ মানুষের হাতে চলে আসায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে চাপড়ায়। সম্প্রতি চাপড়া ব্লকের যুব সভাপতি শুকদেব ব্রহ্মের নামে ওই চিঠি এলাকার বেশ কিছু মানুষের হাতে গিয়ে পৌঁছয়। বিষয়টি জানাজানি হতেই দলের অভ্যন্তরেও শুরু হয়েছে চাপানউতোর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৩৪
Share: Save:

টাকা দিয়েও যাঁরা চাকরি বা জমির পাট্টা পাননি এমন ব্যক্তিদের টাকা বিধায়কের অফিস থেকে ফেরত দেওয়া হবে। ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতির নামে এই মর্মে বেশ কিছু চিঠি সাধারণ মানুষের হাতে চলে আসায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে চাপড়ায়।

সম্প্রতি চাপড়া ব্লকের যুব সভাপতি শুকদেব ব্রহ্মের নামে ওই চিঠি এলাকার বেশ কিছু মানুষের হাতে গিয়ে পৌঁছয়। বিষয়টি জানাজানি হতেই দলের অভ্যন্তরেও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। চিঠিতে পরিষ্কার লেখা রয়েছে, “প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ও সিভিক পুলিশের চাকুরিপ্রার্থী এবং যে সকল ব্যক্তিগণ খাস জমির পাট্টা পাবার জন্য অগ্রিম দিয়েছেন তাঁদের চাকুরি ও পাট্টা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই প্রতি শনি ও রবিবার বিধায়ক অফিসে এসে বিধায়ক ও ব্লক তৃণমূলের সভাপতির কাছে আবেদনপত্র-সহ যোগাযোগ করলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।” চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই বিধায়ক রুকবানুর রহমান ও তার ‘ছায়াসঙ্গী’ বলে পরিচিত শুকদেব ব্রহ্ম রীতিমতো বিব্রত। তবে তাঁরা বিষয়টিকে ‘বিরোধীদের’ চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন। শুকদেববাবু বলেন, “মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। কারণ মানুষ বুঝতে পারছেন এটা বিরোধীদের চক্রান্ত।” একই দাবি করেছেন রুকবানুর রহমানও। তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে বিরোধীদের এটা একটা কৌশল মাত্র।” তবে তাঁরা বিরোধী বলতে কাদের বোঝাতে চেয়েছেন তা খোলসা করে বলেননি। অন্য দিকে, চাপড়া ব্লক সভাপতি আব্দুর রসিদ মল্লিক বলেন, “এটি একটি ভিত্তিহীন বিষয়। মানুষের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কিছু মানুষের চক্রান্ত মাত্র।”

স্থানীয় তৃণমূল-কর্মীরা জানান, দু’জ‌নেই বিরোধী বলতে দলের ভিতরে তাঁদের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীকে বোঝাতে চেয়েছেন। শুধু এবারই নয় এর আগেও রুকবানুর রহমান ও শুকদেব ব্রহ্মের নামে লিফলেট বের হয়েছিল। সেবারেও নিজেরা প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও দলেরই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর দিকে আঙ্গুল তুলেছিলেন তাঁদের ঘনিষ্ঠরা। যদিও বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর অভিযোগ, ওই চিঠি শুকদেব ব্রহ্মেরই দেওয়া। তাঁদের দাবি, “চাকরি ও পাট্টা দেওয়ার নাম করে বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়েছেন দু’জন। কিন্তু যাঁরা চাকরি বা পাট্টা পাননি তাঁরা এখন টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। সেই কারণেই শুকদেব ব্রহ্ম তাঁদের গোপনে চিঠি দিয়ে বিধায়কের অফিসে ডেকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু এভাবে যে চিঠিটা প্রকাশ্যে চলে আসবে সেটা ওঁরা বুঝতে পারেননি।” যদিও বিধায়কের ঘনিষ্ঠদের দাবি, “এভাবে চিঠি দিয়ে ডেকে বোকামি করার মতো অপরিণত রাজনীতিবিদ শুকদেব ব্রহ্ম নন। এটা বিরোধী গোষ্ঠীর চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।”

চাপড়াতে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে কংগ্রেস থেকে ব্লকের স্তরে বেশ কিছু প্রথম সারির নেতা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। তার উপরে বাইরে থেকে এনে রুকবানুর রহমানকে বিধায়ক পদের জন্য প্রার্থী করা হলে স্থানীয় অনেক নেতাই তা মানতে পারেননি। তাঁরা সেই সময় প্রকাশ্যে ক্ষোভও জানিয়েছিলেন। কিন্তু রুকবানু জিতে যাওয়ায় তাঁরা আর মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস পাননি। অন্য দিকে, অচিরেই সবাইকে সরিয়ে শুকদেব ব্রহ্ম বিধায়কের খাস লোক হয়ে ওঠেন। বিধায়কের অনুপুস্থিতিতে তিনিই বকলমে বিধায়কের কাজ চালান বলে অভিযোগ। এরই মধ্যে কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের ব্লক সভাপতি আব্দুর রসিদ মল্লিক তৃণমূলে যোগ দেন। নবাগত হয়েও তিনি দলের ব্লক সভাপতি হন। দলের কর্মীদের দাবি, এই ‘তিনমূর্তির’ বোঝাপড়ার কারণে দলের অন্যরা ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছিল। শুধু তাই নয় দলের একেবারে প্রথম দিকের বেশ কিছু নেতা একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। কিন্তু তার পরেও জেলা রাজনীতির সূত্র ধরে চাপড়াতে বেশ কিছু বিরোধী গোষ্ঠীর লোকের অস্তিত্ব রয়ে যায়। বিধায়কের অনুগামীদের অভিযোগ, ব্লক রাজনীতিতে কল্কে না পেয়েই এই সব বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেরাই এই ধরনের চিঠি ছাপিয়ে বিলি করছে।

তবে যেই চিঠি ছাপাক না কেন বিরোধীরা কিন্তু ওই চিঠিকে সামনে রেখে মাঠে নেমে পড়েছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “চাপড়াতে বিধায়ক ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের কুকীর্তি প্রকাশ্যে এসেছে। এই বিষয়ে প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্ত করুক। তাহলেই চিঠির সত্যতা বেরিয়ে আসবে।” বিজেপির জেলা কমিটির মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, “এত দিন চাকরি ও পাট্টার নাম করে বিধায়ক ও তাঁর অনুগামীরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছেন তা আজ প্রকাশ্যে এসেছে। মানুষ সব বুঝতে পারছেন। যত দিন যাবে এভাবে আরও অনেক দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসবে।” যদিও জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “শুকদেব ব্রহ্ম আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি এ ধরনের কোনও চিঠি কাউকে দেননি। কোনও ধরনের আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে আমাদের দলের কেউ যুক্ত নন। যাঁরা মানুষের সমর্থন হারাচ্ছেন তাঁরাই এই ধরনের মিথ্যে চিঠি ছড়াচ্ছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chapra money return tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE