Advertisement
E-Paper

তথ্যে গরমিল জানা নেই, দাবি ডাক্তারের

নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা জজ ও সেশন জজ সুধীর কুমারের আদালতে সোমবার ফের শুরু হয়েছে সজল ঘোষ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। এ দিনের একমাত্র সাক্ষী ছিলেন ঘটনার রাতে নবদ্বীপ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক পবিত্রকুমার করণ। দুপুর ২টোর কিছু পরেই রুদ্ধদ্বার আদালত কক্ষে শুনানি শুরু হয়। হাল্কা সবুজ স্ট্রাইপ দেওয়া সাদা জামা এবং কালো প্যান্টে কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত, বর্ধমানের পারুলিয়ার কুলকামিনী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সিপিএম নেতা প্রদীপ সাহা।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১৮

নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা জজ ও সেশন জজ সুধীর কুমারের আদালতে সোমবার ফের শুরু হয়েছে সজল ঘোষ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। এ দিনের একমাত্র সাক্ষী ছিলেন ঘটনার রাতে নবদ্বীপ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক পবিত্রকুমার করণ।

দুপুর ২টোর কিছু পরেই রুদ্ধদ্বার আদালত কক্ষে শুনানি শুরু হয়। হাল্কা সবুজ স্ট্রাইপ দেওয়া সাদা জামা এবং কালো প্যান্টে কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত, বর্ধমানের পারুলিয়ার কুলকামিনী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সিপিএম নেতা প্রদীপ সাহা।

সাক্ষ্য গ্রহণের শুরুতেই নদিয়ার অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায় সাক্ষীর কাছে জানতে চান, ঘটনার দিন অর্থাৎ ০৯/০১/১২ তারিখ সাক্ষী কোথায় ছিলেন। করণ বলেন, রাত ৯’টা থেকে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ছিলেন তিনি। বিকাশবাবু সাক্ষীকে একে একে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রেজিস্টার, ইনজুরি রিপোর্ট বুক এবং সজল ঘোষের ‘বেডহেড টিকিট’ দেখান। পবিত্রবাবু সেগুলি শনাক্ত করেন। সরকারি কৌঁসুলি জানতে চান, জরুরি বিভাগের রেজিস্টারে ‘সিরিয়াল নম্বর ৫৯১, নাম সজল ঘোষ’ কার লেখা। সাক্ষী জানান, তাঁরই লেখা। এরপরে বিকাশববাবু সজল ঘোষ কখন ভর্তি হন, বেডহেডের স্বাক্ষর সাক্ষীরই কি না তা জানতে চান। পবিত্রবাবু বলেন, হ্যাঁ। সজল ঘোষকে কে নিয়ে আসেন জানতে চাওয়া হলে সাক্ষী বলেন জনৈক পঙ্কজ গাঙ্গুলি রোগীকে নিয়ে এসেছিলেন।

বিকাশবাবুর প্রশ্ন শেষ হতেই অভিযুক্তদের তরফে জেরা শুরু করেন সামসুল ইসলাম মোল্লা। তিনি জানতে চান জরুরি বিভাগে কোনও রোগী এলে তাঁর নাম নথিভুক্ত করা এবং চিকিৎসা শুরুর পদ্ধতি কী। পরের প্রশ্ন, সজল ঘোষের বেড ইনচার্জ কে ছিলেন? সাক্ষী জানান, চিকিৎসক পি মুখার্জি। সামসুল মোল্লা জানতে চান সজল ঘোষকে জরুরি বিভাগ থেকে কোথায় পাঠানো হয়েছিল। সাক্ষী জানান, মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছিল। এরপরের প্রশ্ন, রোগী যখন বুলেট ইনজুরি নিয়ে এলেন তখন সাক্ষীর তাঁকে ওটিতে পাঠানোর কথা কেন মনে হল না? সাক্ষীর জবাব, ওটি’র চিকিসক ওই সময় হাসপাতালে ছিলেন না, তাই রোগীকে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছিল। জেরার শেষে জরুরি বিভাগের রেজিস্টার দেখিয়ে আইনজীবী বলেন, ওই দিন রেজিস্টারে যতজনের নাম রয়েছে, তাঁর মধ্যে কেবলমাত্র সজল ঘোষের ক্ষেত্রেই সব বিস্তারিত লেখা রয়েছে, অন্য রোগীদের বেলায় নেই। সাক্ষী তা মেনে নেন। সামসুল ইসলাম মোল্লা বলেন, অর্থাৎ এ সবই কৃত্রিম তথ্য। আপনি বিশেষ একটি রাজনৈতিক দল এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চাপে মিথ্যা নথি তৈরি করেছেন। সাক্ষী বলেন, একথা ঠিক নয়।

এরপরে সাক্ষীকে জেরা করতে ওঠেন প্রদীপ সাহার আইনজীবী প্রতিম সিংহ রায়। তিনি পবিত্র কুমার করণকে বলেন রেজিস্টারের পাতায় কোন নম্বর নেই। সাক্ষী বলেন হ্যাঁ। তিনি জানতে সাক্ষী এমএস নাকি এমডি। পবিত্রবাবু বলেন, তিনি এমবিবিএস। আইনজীবী বলেন, সজল ঘোষের দেহের কোথায় গুলি লেগেছিল তা ইনজুরি রিপোর্টে সাক্ষী পরিস্কার ভাবে লেখেন নি। সাক্ষী বলেন, তিনি লিখেছেন। প্রতিমবাবু জানতে চান ওই রাতে জরুরি বিভাগে যাবতীয় লেখালেখি কম্পিউটারে কি সাক্ষী নিজেই টাইপ করেছিলেন? সাক্ষী বলেন, না। হাসপাতালের একজন স্টাফ টাইপ করেন। তবে তাঁর নাম বলতে পারেননি পবিত্রবাবু।

জেরার পরের পর্বে প্রতিম সিংহ রায় জানতে চান, ওই রাতে জরুরি বিভাগে কতজন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন এবং কতজন ভর্তি না হয়েই বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। সাক্ষী রেজিস্টার দেখে জানান মোট ১৪ জন ওই দিন রাত নটা থেকে ১২টার মধ্যে জরুরি বিভাগে দেখাতে এসেছিলেন। প্রতিমবাবু হাসপাতালের ইনজুরি রিপোর্ট বুক দেখিয়ে বলেন, তারিখের জায়গায় তারিখ লেখা নেই, পাতা বাদ দিয়ে রিপোর্ট লেখা হয়েছে। সাক্ষী বলেন, হ্যাঁ। জেরার শেষ পর্বে প্রতিমবাবু সাক্ষীকে বলেন, তিনি ঘটনার রাতে হাসপাতালের যে নথি দিয়েছেন সে সব পরে তৈরি করা। সাক্ষী বলেন, সত্যি নয়।

সবশেষে জেরা করতে ওঠেন বিষ্ণুপ্রসাদ শীল। তিনি শুরুতেই জানতে চান সজল ঘোষকে কি কি ওষুধ দিয়েছিলেন পবিত্রবাবু। সাক্ষী ওষুধের নাম জানান। সঙ্গে রক্ত দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল বলেও জানান। বিষ্ণুবাবু জানতে চান, কিন্তু সাক্ষী রোগীকে ওটি তে নিয়ে যেতে বলেন নি এবং রক্ত বন্ধের জন্য বিশেষ কোনও ইঞ্জেকশনও দেন নি। পবিত্রবাবু বলেন, হ্যাঁ। শেষে বিষ্ণুবাবু সাক্ষীকে সজল ঘোষের বেডহেড টিকিট দেখিয়ে জানতে চান ওই টিকিটে রোগীর বয়স, বাবার নাম প্রভৃতি তথ্যের জায়গা পেন দিয়ে কাটাকাটি করে পরিবর্তন করা হয়েছে। পবিত্র কুমার করণ বলেন, তিনি করেন নি। কে করেছে বলতেও পারবেন না। এরপর এ দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মঙ্গলবার ফের সাক্ষ্য গ্রহণ হবে।

sajal ghosh nabadwip
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy