মাত্র দু’মাসে সর মধ্যেই ভেঙে পড়ছে ‘সবার শৌচাগার’ প্রকল্পে তৈরি হওয়া শৌচাগার। সেই সঙ্গে দু’টির বদলে একটি কুয়ো (চেম্বার) তৈরি করা কিংবা উপভোক্তাদের কাছে থেকে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বেশি টাকা নেওয়া-সহ নানা অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে এই প্রকল্প ঘিরে। ইতিমধ্যে নবদ্বীপের বাবলারি গ্রাম পঞ্চায়তের একাধিক মানুষ লিখিত ভাবে নবদ্বীপের বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। নবদ্বীপের বিডিও বিক্রম চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগে যা বলা হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে দু’একদিনের মধ্যে যুগ্ম বিডিও বাবলারি যাচ্ছেন। যদি সত্যিই এমন ঘটে থাকে তাহলে তা নিয়ম বহির্ভূত। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করে জল এবং মলবাহিত রোগমুক্ত করে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটানোর লক্ষ্যে একশো দিনের কাজ, নির্মল ভারত অভিযান ও জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনএই তিন প্রকল্পকে মিলিয়ে নদিয়া জেলায় চলছে ‘সবার শৌচাগার’ প্রকল্পের কাজ। কিন্তু বাবলারির বাসিন্দাদের অভিযোগ কাগজে কলমে থাকা সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সবার শৌচাগার প্রকল্পের অধীন ব্যক্তিগত শৌচাগার তৈরি করতে গিয়ে নিজের মর্জি মতো কাজ করছে স্থানীয় পঞ্চায়েত। উপভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা, ইট, সিমেন্ট নেওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দু’টোর বদলে একটি কুয়ো (চেম্বার) তৈরি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বহু জায়গাতে দ্বিতীয় কুয়োটি না খুঁড়ে মাটির উপর সিমেন্টের গোলাকার রিং বা ‘পাট’ বসিয়ে মাথায় স্ল্যাব দিয়ে ভুয়ো লোক দেখানো কুয়ো তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রামের মানুষ।
বাবলারি পঞ্চায়েতের ৩৭ নম্বর বুথের বাসিন্দা হরেকৃষ্ণ পোদ্দার বলেন, “সবার শৌচাগার তৈরির নামে কী হচ্ছে তা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবেনা। নিয়ম হল ১০ ইঞ্চি উচ্চতার আটটি করে কংক্রিটের ‘গোল পাট’ দিয়ে দু’টি করে কুয়ো চেম্বার হবে। এখানে কিন্তু বেশিরভাগ বাড়িতে একটি করেই চেম্বার হচ্ছে এবং ওঁরা ৮ ইঞ্চি উচ্চতার পাট বসিয়ে কুয়ো করছেন। আমার বাড়িতে একটা কুয়ো চেম্বার মাটির ওপর ‘ফলস’ ঢাকনা দিয়ে বসিয়ে করা হয়েছে। এমনি দেখলে মনে হবে দুটো কুয়ো। আমি বিডিওকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।” প্রায় একই অভিযোগ বাবলারির ৩১ নম্বর বুথের বাসিন্দা নারায়ণ দেবনাথেরও। তিনি বলেন, “মাত্র চার ফুট করে গর্ত করা হচ্ছে কুয়োগুলির জন্য। জানি না এই গভীরতা আদৌ কতটা স্বাস্থ্যসম্মত। আবার ওই সব কুয়োর পাট জোড়া দেওয়ার জন্য সিমেন্ট নিজেদের কিনে দিতে হচ্ছে।”
আরও গুরুতর অভিযোগ এনেছেন ভারত পাল। তিনি বলেন, “আমার বাড়িতে শৌচাগারটি তৈরি করার জন্য সরকারি নিয়ম মেনে আগেই ৯০০ টাকা দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু শৌচাগার তৈরি হওয়ার আগে ঠিকাদারের কথা মতো আমাকে ১৫০ ইট, এক বস্তা সিমেন্ট এবং ৫ টিন বালি কিনে দিতে হয়েছে এবং মিস্ত্রিকে নগদ ৪০০ টাকা দিতে হয়েছে। আমি দরিদ্র মানুষ। খুব কষ্ট করে ওই সব জিনিসপত্র জোগাড় করতে হয়েছে। কিন্তু এসব করেও আমি শৌচাগারটি ব্যবহার করতে পারলাম না। দু’মাসের মধ্যে ভেঙে গেল। সব জানিয়ে অভিযোগ করেছি। দেখি কী হয়।”
বাবলারির পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জীব দাস বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। তবে আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ কেউ করেননি। সরাসরি বিডিওর কাছে গিয়েছেন। বিডিও অফিসের লোকজন তদন্তে আসছেন। তাঁরা এলে জানতে পারব কী হয়েছে। তাছাড়া এই কাজের কোনও দায়িত্বই পঞ্চায়েতের হাতে নেই। পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ কাজ করাচ্ছে। তাই আমার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে ঠিকাদার টাকা নিতেও আসেনি আমাদের কাছে।” আর অভিযোগ উড়িয়ে বাবলারির উপপ্রধান সিপিএমের সনৎ পাল বলেন, “এসব ব্ল্যাকমেল ছাড়া আর কিছু নয়। ওঁদের মধ্যে একজন নিজে এসে আমায় বলেন তাঁর বাড়িতে জায়গা নেই তাই একটা কুয়ো করে দিতে। সেই মতো ওখানে একটি কুয়ো করা হয়েছে। এরপর উনি অভিযোগ করছেন একটা কুয়ো নিয়ে। আরও দুটি জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেছে। সেখানে দ্বিতীয় কুয়ো করে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে টাকাপয়সা সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ আমার জানা নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy