Advertisement
১৯ মে ২০২৪

নাট্যমঞ্চের উদ্বোধন, স্বপ্নপূরণ নবদ্বীপের

বলা হয় নবদ্বীপ তো বটেই গোটা বঙ্গদেশেই মঞ্চাভিনয়ের প্রাচীনতম প্রয়াসটি ছিল স্বয়ং চৈতন্যদেবের। অথচ সেই নবদ্বীপেই এতদিন পর্যন্ত ছিল না কোনও আধুনিক স্থায়ী নাট্যমঞ্চ। এ নিয়ে আপামর নবদ্বীপবাসী বিশেষত সাংস্কৃতিক মহলের ক্ষোভ-বিক্ষোভের অন্ত ছিল না।

নতুন ভবন।—নিজস্ব চিত্র।

নতুন ভবন।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০০:৫৩
Share: Save:

বলা হয় নবদ্বীপ তো বটেই গোটা বঙ্গদেশেই মঞ্চাভিনয়ের প্রাচীনতম প্রয়াসটি ছিল স্বয়ং চৈতন্যদেবের। অথচ সেই নবদ্বীপেই এতদিন পর্যন্ত ছিল না কোনও আধুনিক স্থায়ী নাট্যমঞ্চ। এ নিয়ে আপামর নবদ্বীপবাসী বিশেষত সাংস্কৃতিক মহলের ক্ষোভ-বিক্ষোভের অন্ত ছিল না। অবশেষে শ্রীচৈতন্যের ৫৩০’তম জন্মোসবের প্রাক্কালে নবদ্বীপ পেল তার বহু প্রতীক্ষিত নাট্যমঞ্চ তথা টাউনহল। সোমবার দুপুরে কলকাতা থেকে দূর নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার মাধ্যমে নবদ্বীপ পুরসভার উদ্যোগে নবনির্মিত শ্রীচৈতন্য ভবনে “রবীন্দ্র সংস্কৃতি মঞ্চের” উদ্বোধন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ইতিহাস বলে সেটা ছিল ১৫০৯ সাল। চৈতন্যজীবনীকার বৃন্দাবন দাস তাঁর চৈতন্যভাগবতে জানিয়েছেন, নিমাই পণ্ডিত গয়া থেকে ফিরে একদিন অভিনয়ের আসর বসালেন। সেদিন অভিনীত হয়েছিল রুক্মিনীহরণ পালা। নিমাই নিজে রুক্মিনী চরিত্রে অভিনয় করেন। চৈতন্যদেবের সেই নাট্যাভিনয় পরবর্তী পাঁচশো বছরেরও বেশি সময় ধরে নবদ্বীপ মঞ্চাভিনয়ের অনেক বাঁক। কিন্তু নাট্যচর্চার এহেন উত্তরাধিকার যে শহরের, সেই নবদ্বীপে এতদিন পর্যন্ত কোন স্থায়ী নাট্যমঞ্চ ছিল না। অথচ এ শহর বাঁচে নাটক নিয়ে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলেই শহরের নানা প্রান্তে বিভিন্ন দলের একান্ত মহলা কক্ষে কুশীলবদের ঘড়ির কাঁটা ধরে আনাগোনা। মফস্সল শহরে রাত বাড়ে, টিমটিমে আলো ঘিরে তত জমে ওঠে মহলা। ঘরের ভেতর থেকে ছিটকে আসা সংলাপে অভ্যস্ত মানুষ একে অপরকে বলে, চুপ মহলা চলছে। তবে সে যে কেমন করে চলছে তা জানেন সকলেই। ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের মতো শুধু ইচ্ছাটুকুই সম্বল। ছোট এক মঞ্চে ঘেমে নেয়ে স্নান করতে করতে সংলাপে ডুবে যান নাটকের কুশীলবেরা। গরমে হাঁসফাঁস দর্শক এক সময় বাধ্য হয়ে হাট করে খুলে দেন হলের দরজা। মঞ্চ থেকে একটু দূরে রাখা অস্থায়ী জেনারেটরের শব্দকে পাত্তা না দিয়েই তাঁরা নাটক দেখেন ভালবেসে।

নতুন এই মঞ্চের উদ্বোধনী ভাষণে নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা জানান, শ্রীচৈতন্য ভবন-সহ “রবীন্দ্র সংস্কৃতি মঞ্চের” জন্য ব্যয় হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, “বহুদিনের দাবি ছিল একটি নাট্যমঞ্চ সমেত অত্যাধুনিক হলের। এরই সঙ্গে রয়েছে একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সও গড়া হয়েছে।”

আটশো আসন বিশিষ্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হল দেখে খুশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসা অতিথিরা। তবে নতুন হলে নাটক করার জন্য উদগ্রীব নবদ্বীপের নাট্য দলগুলির একটাই প্রশ্ন হলের ভাড়া কত হবে? হল ভাড়া মফফসলের ছোট গ্রুপগুলির সামর্থ্যে কুলোবে তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

theatre hall nabadwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE