Advertisement
১৯ মে ২০২৪

নব্য-আদি বিতর্কে থমকে পুরসভা

নব্য না আদি? এই দ্বন্দ্বে আজও ঠিক হল না কে হবেন কৃষ্ণনগর পুরসভার উপ পুরপ্রধান বা কারা হবেন চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল। পুরপ্রধান নির্বাচনের পরে প্রায় আট মাস কেটে গেলেও ওই প্রশ্নের মীমাংসা করতে পারল না তৃণমূল। নিজেদের গোষ্ঠীকোন্দল ধামা চাপা দিয়ে রাখতে তৃণমূল শহরের মানুষকে পুরপরিষেবা থেকে বঞ্চিত করছে বলে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০১:১৮
Share: Save:

নব্য না আদি? এই দ্বন্দ্বে আজও ঠিক হল না কে হবেন কৃষ্ণনগর পুরসভার উপ পুরপ্রধান বা কারা হবেন চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল। পুরপ্রধান নির্বাচনের পরে প্রায় আট মাস কেটে গেলেও ওই প্রশ্নের মীমাংসা করতে পারল না তৃণমূল। নিজেদের গোষ্ঠীকোন্দল ধামা চাপা দিয়ে রাখতে তৃণমূল শহরের মানুষকে পুরপরিষেবা থেকে বঞ্চিত করছে বলে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। একই কথা বলেছেন এমনকী তৃণমূলের কাউন্সিলরদের একাংশও।

কারণ উপ পুরপ্রধান ও চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের কাজ সহ পুরসভার যাবতীয় কাজ পুরপ্রধানকে একার হাতে সামলাতে হচ্ছে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই শহরের মানুষকে অনেক ক্ষেত্রেই পরিষেবা পেতে বিলম্ব হচ্ছে বা অনেককে অহেতুক হয়রানি হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। শুধু তাই নয়, পূর্ত বা জলকলের মতো গুরুত্ত্বপূর্ণ দফতরের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেও বিলম্ব হচ্ছে বলে দাবি পুরসভারকর্মীদের এক অংশের। পাশাপাশি পুর আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য উপ পুরপ্রধান ও চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল মনোনীত না হওয়ায় আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করছেন বিরোধীরা। যদিও পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যার কথা স্বীকার না করলেও পুরপ্রধান অসীম সাহা বলেন, “পুরসভা পরিচালনা বা পরিষেবা দেওয়ার বিষয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু প্রচণ্ড চাপ এসে পড়ছে।” কিন্তু এতদিনেও কেন উপ পুরপ্রধান ও চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল মনোনয়ন করা গেল না? এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি অসীমবাবু। তিনি শুধু বলেন, “কেন দেরি হল, সেটা আমাদের দলের জেলা নেতৃত্বই বলতে পারবে।”

গত বছর ২২ নভেম্বর কৃষ্ণনগর পুরসভায় নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে পুরপ্রধান অসীমবাবু সহ ১৪ জন কংগ্রেস কাউন্সিলরই তৃণমূলে যোগ দেন। নির্বাচনে ২৪টি আসনের মধ্যে ২২টিতেই জয়ী হয় তৃণমূল। নির্বাচনের আগেই অসীমবাবুর নেতৃত্বেই যে পুরবোর্ড গঠন হবে, তা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন মুকুল রায়। তাঁর নেতৃত্বেই পুরবোর্ড গঠিতও হয়। এ ছাড়া যে দু’জন নির্দল প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন, তাঁরা গণনা কেন্দ্রেই তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে এই মুহুর্তে ২৪ জন কাউন্সিলরই তৃণমূলের। কিন্তু তার পরও উপ পুরপ্রধান সহ চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল বাছতে পারল না তৃণমূল নেতৃত্ব?

তৃণমূল সূত্রে খবর, উপপুরপ্রধান বাছার ক্ষেত্রে আদি ও নব্য তৃণমূলের দ্বন্ধ সামনে চলে এসেছে। দু’পক্ষ থেকে একাধিক নাম উঠে আসতে থাকে। এমনকী কংগ্রেস থেকে আসা ‘নতুন’ তৃণমূলের ভিতর থেকেও একাধিক নাম উঠে আসতে থাকে। এরই মধ্যে এক কনিষ্ঠ কাউন্সিলরের নামও শহরে ভাসিয়ে দেওয়া হয় বলে দলেরই এক অংশের দাবি। পরিস্থিতি এমন আকার নেয় যে, ১৩ ডিসেম্বর পুরপ্রধান পদে অসীমবাবু শপথ নিলেও বাকি রেখে দেওয়া হয় উপ পুরপ্রধান সহ তিন চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল পদে শপথ। তার পর থেকে নানা টানবাহানা চলতে থাকে। কিন্তু আজও ওই পদগুলি ফাঁকাই থেকে গেল।

পুরসভারই এক কাউন্সিলর বলেন, “উপ পুরপ্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের দল আসলে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। কারণ বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে এক পক্ষের লোককে উপপুরপ্রধান বাছলে অন্য পক্ষ বিদ্রোহ করতে পারে। সেই কারণেই প্রথমে ওই পদগুলি বাকি রেখেই শপথ নেন পুরপ্রধান। তার পরে ওই একই কারণে লোকসভা ভোটের আগে ওই পদে মনোনীত করতে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে পারেনি তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।” লোকসভা ভোটে রীতিমত করুণ ফল করে তৃণমূল ২৩টি ওয়ার্ডেই পিছিয়ে থাকে। তারা এর পিছনে কাউন্সিলরদের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আনতে শোনা গিয়েছিল সাংসদ তাপস পালের অনুগামীদের। উপ পুরপ্রধান সহ চেয়ারম্যন ইন কাউন্সিল পদে কাকে বসানো হবে, তাই নিয়ে বিতর্কও এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন দলেরই অনেকে। দলের এক নেতা বলেন, “লোকসভা ভোটের পরে জেলা সভাপতি অসুস্থ হয়ে পড়ায় এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দল। তবে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে।”

তবে কাউন্সিলরদের ভিতর থেকেও চাপ আসতে শুরু করেছে। নির্বাচনের আগে কংগ্রেস থেকে আসা এক কাউন্সিলর বলেন, “এ ভাবে তো আর অনন্তকাল চলতে পারে না। একটা তো সিদ্ধান্তে আসতে হবে। শহরের মানুষ বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছেন না।” তিনি বলেন, “পুরপ্রধানের দীর্ঘ দিনের পুরসভা পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকায় পুর পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে হয়তো তেমন কোনও সমস্য হচ্ছে না। কিন্তু অনেক কাজই কিন্তু দেরিতে হচ্ছে।” দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি চারটি পদের জন্য একটি তালিকা প্রস্তাব আকারে মুকুল রায়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। অসীমবাবু বলেন, “বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবে দল। এক্ষেত্রে আমার কোনও বক্তব্য নেই। দলের সিদ্ধান্তই মেনে চলব।”

তবে এখনও বোর্ড গঠিত না হওয়ায় শুধু যে পরিষেবার ক্ষেত্রেই সমস্যা হচ্ছে তাই নয়, কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী ও কল্যাণী পুরসভার টানা তিন বারের পুরপ্রধান শান্তনু ঝা বলেন, “আইন অনুযায়ী পুরপ্রধান নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্য উপপুরপ্রধান ও চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল মনোনয়ন করে বোর্ড গঠন করে ফেলতে হবে। সেটা সম্ভব না হলে মিউনিসিপ্যল অ্যাফেয়ার্স দফতর থেকে আরও ৩০ দিনের মধ্যে এই পদে মনোনয়নের জন্য অনুমোদন নিয়ে আসতে হবে। তার পরও সেটা সম্ভব না হলে মনোনীত উপপুরপ্রধান ও চেয়ারম্যন ইন কাউন্সিলদের ওই দফতর থেকে অনুমোদন করিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আইনি জটিলতা তৈরি হবে।” তিনি বলেন, “আমি দীর্ঘ দিনের পুরসভা পরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, পুরপ্রধানের একার পক্ষে সব ধরনের পরিষেবা ঠিক মতো দেওয়া সম্ভব নয়। সেই কারণেই ওই পদগুলি পূরণ করা দরকার।”

তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের দাবি, “ওই পদগুলিতে মনোনয়নের জন্য কোনও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া নেই। কাউন্সিলরদের কাজের দক্ষতা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।” তিনি বলেন, ‘‘খুব শীঘ্র ওই পদগুলিতে মনোনয়নের কাজ করে ফেলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

krishna nagar municipality chairman cintriversy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE