Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নবদ্বীপের রাসে উদ্বোধনের ধুম

তিনি আসছেন। উদ্বোধন করছেন। চলে যাচ্ছেন। ক’দিন ধরে এমনটাই তো চলছে। আর শুধু কী উদ্বোধন! সঙ্গে রয়েছে হাজারও বায়না। ফিতে কাটা, শীতবস্ত্র বিতরণ, অতি উত্‌সাহী উদ্যোক্তাদের অনুরোধে ক্যামেরার সামনে হাসি হাসি মুখে দাঁড়ানো।

শান্তিপুরে আঁকা হচ্ছে পট।

শান্তিপুরে আঁকা হচ্ছে পট।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ০০:২৪
Share: Save:

তিনি আসছেন। উদ্বোধন করছেন। চলে যাচ্ছেন।

ক’দিন ধরে এমনটাই তো চলছে। আর শুধু কী উদ্বোধন! সঙ্গে রয়েছে হাজারও বায়না। ফিতে কাটা, শীতবস্ত্র বিতরণ, অতি উত্‌সাহী উদ্যোক্তাদের অনুরোধে ক্যামেরার সামনে হাসি হাসি মুখে দাঁড়ানো। আর এই উদ্বোধনের গুঁতোয় নাওয়া-খাওয়ার সময় পাচ্ছেন না নবদ্বীপের বিধায়ক তথা মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। মন্ত্রীমশাই বলছেন, “শরীরটাও আর পেরে উঠছে না। কিন্তু কী আর করা যাবে! ছেলেপুলের আব্দারটাও তো রাখতে হবে।”

নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় সেই কবে পটপূর্ণিমায় শুরু হয়েছিল নবদ্বীপের রাস উত্‌সব। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। নবদ্বীপের অন্যতম প্রধান উত্‌সবকে ঘিরে উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন ভাবনা-চিন্তা রাসকে সময়োপযোগী করে তুলছে। এক, দুই করে ৩০০ বছরের দিকে পা বাড়ানো রাসের এখন নতুন ট্রেন্ড, নেতা-মন্ত্রী দিয়ে উদ্বোধন। মূল উত্‌সবের দিনকয়েক আগে থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে এই উদ্বোধন পর্ব। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত শহরের পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই শুধু উদ্বোধনের ধুম।

অথচ বছর কয়েক আগেও রাসে এসব চল ছিল না। থিম পুজোর জন্য বিখ্যাত রয়েল ক্লাবের মতো হাতেগোনা দু’একটি বারোয়ারিই এমন ‘বিলাসিতা’ করত। বেশিরভাগ বারোয়ারির প্রতিমা তৈরি সম্পূর্ণ হত রাসের দিন সকালে। উদ্বোধন বহু দূরের কথা। কিন্তু ছবিটা আমূল বদলে গেল গত বছর থেকে। শহর কলকাতার উদ্বোধনের ছোঁয়াচ লাগল নবদ্বীপেও। তবে খেলোয়াড় কিংবা স্টার নয়, নবদ্বীপের পছন্দ নেতা-মন্ত্রী। কোন বারোয়ারি কিংবা ক্লাব কোন নেতা-মন্ত্রী দিয়ে উদ্বোধন করাবেন তা নিয়ে একটা প্রচ্ছন্ন প্রতিযোগিতাও শুরু হল উদ্যোক্তাদের মধ্যে।

স্থানীয় পুজো কমিটির এক কর্তা বলছেন, “২০১২ সালের শেষের দিকে রাজ্যে মন্ত্রীসভার সদস্য হলেন নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের তিন বারের বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষবাবু। স্বাধীনতার পরে নবদ্বীপ থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনিই তো প্রথম মন্ত্রী। ফলে উদ্বোধক হিসাবে সকলেই চান এলাকার মন্ত্রীকে। আর তিনিও কাউকে নিরাশ করেন না।”

তবে বছরখানেক আগে পুণ্ডরীবাবুর অবশ্য ‘চাপ’ একটু কম ছিল। মামার বাড়ি এলাকার ‘আব্দার’ মেটাতে নবদ্বীপে বেশ কয়েকটি রাসের উদ্বোধন করেছিলেন মুর্শিদাবাদের তত্‌কালীন মন্ত্রী সুব্রত সাহা। উদ্বোধনে দেখা গিয়েছিল রাজ্যের আর এক মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকেও। কিন্তু এ বছর পুণ্ডরীবাবুকেই একা হাতেই সব সামলাতে হচ্ছে। মঙ্গলবার প্রায় ১৮ টি পুজোর উদ্বোধন সেরে বাড়ি ফিরেছেন রাত পৌনে তিনটেয়। বুধবারেও উদ্বোধন পর্ব শুরু হয়েছে সকাল সাড়ে আটটায়। এ দিন সন্ধ্যায় বুড়োশিবতলায় উদ্বোধন সেরে গাড়িতে ওঠার সময় পুণ্ডরীকাক্ষবাবু বলছিলেন, “আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পারলে ভাল হয়। দেখা যাক কী হয়।”

পকেটে বেজে ওঠে মোবাইল। অপেক্ষায় থাকা কোনও এক পুজো উদ্যোক্তার ফোন। হাসি মুখে তিনি বলেন, “চলে এসেছি রে। সব রেডি তো?” ধুলো উড়িয়ে এক মণ্ডপ থেকে আর এক মণ্ডপের দিকে এগিয়ে চলে মন্ত্রীমশাইয়ের গাড়ি।

ছবিগুলি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nabadwip rass raas yatra debashis bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE