শহরের গা ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে গঙ্গা। তবু তীব্র জল-সঙ্কটে নাজেহাল মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান শহরের বাসিন্দারা।
ভূগর্ভস্থ জলাধার থেকে শতবর্ষ প্রাচীন ধুলিয়ান পুরসভায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সেই সুবিধা পেয়ে থাকেন শহরের ১৯টির মধ্যে মাত্র ৬টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। গত কয়েকদিন সেই জল সরবরাহও অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। বাকি ১৩টি ওয়ার্ডে এমনিতেই ভরসা ছিল নলকূপ। প্রচণ্ড দাবদাহে জলস্তর নেমে যাওয়ায় নলকূপগুলোও একের পর এক অকেজো হয়ে পড়ছে। আর্সেনিক-মুক্ত একটি জলপ্রকল্পের কাজ চলছে শহরে। তা শেষ না হওয়ায় এই গরমে ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
প্রায় ৫০ বছর আগে ধুলিয়ানে যখন মাত্র ৯টি ওয়ার্ড ছিল তখন ভূগর্ভস্থ এক লক্ষ গ্যালনের জলাধারটি তৈরি করা হয়। দু’টি পাম্পের সাহায্যে জল তুলে পরিশোধন করে তা পাইপলাইনের মাধ্যমে ৬টি ওয়ার্ডে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গরম যত বাড়ছে জলসঙ্কট যেন তত চেপে বসছে। দিনে সকাল, দুপুর, সন্ধেতিন বার জল পাওয়ার কথা। তা আর হচ্ছে কই। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কল্যাণ গুপ্ত বলেন, “বুধবার সকালে জল আসেনি। দুপুরে আধ ঘণ্টার জন্য জল পেয়েছি। তা-ও জল আসছে সুতোর মতো সরু হয়ে। কখনও শুনছি বিদ্যুৎ নেই, কখনও বা পাম্প খারাপ। আমাদেরই মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়।” পুরসভার জল কখন আসবে, সেই আশায় বসে থেকে ক্লান্ত ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সত্যরঞ্জন দাস। বাধ্য হয়ে পরিবারে জলের খরচে যতটা সম্ভব কাটছাঁট করছেন তিনি। বিরক্ত গলায় বলেন, “এ ভাবে আর পারা যাচ্ছে না।”
এ দিকে, এখন ধুলিয়ান পুরসভায় ওয়ার্ড বেড়ে হয়েছে ১৯টি। লোকসংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়েছে। পরে যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলিতে এখনও পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করে দিতে পারেননি পুর-কর্তৃপক্ষ। যেমন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে পুরসভার জল যায় না। স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল খান বলেন, “এখানে পুরসভার পাইপ লাইনের জল কখনওই আসে না। নিজেরা বাড়িতে নলকূপ বসিয়েছি। স্নানের জন্য যেতে হচ্ছে গঙ্গায়।” গাজিনগরের বাসিন্দা মাইরুল শেখ বলেন, “১৫ বছর হল আমরা পুরসভায় যুক্ত হয়েছি। ভেবেছিলাম অন্তত জল এবং বিদ্যুৎটা পাব।
কোথায় কী।”
২৫ বছর ধরে পুরসভায় একটানা কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়ে আসছেন সিপিএমের সুন্দর ঘোষ। এক সময় পুরপ্রধানও ছিলেন ধুলিয়ানের। তিনি জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে ধুলিয়ান শহরের বিভিন্ন এলাকার নলকূপের জল পরীক্ষার পর তাতে আর্সেনিকের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এই প্রেক্ষিতে বছর পাঁচেক আগে ধুলিয়ানে কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যে ২২ কোটি টাকার একটি ‘সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ তৈরির কাজ শুরু হয়। দু’বছরের মধ্যে জলপ্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বারবার পুরবোর্ড বদলের রাজনীতির ফলে জল প্রকল্পের কাজ মাঝপথে থমকে রয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২২ কোটি টাকার এই জলপ্রকল্পে গঙ্গা থেকে দৈনিক ১.৫ মিলিয়ন লিটার টন জল তুলে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে শ্মশানের কাছে মূল জলাধারে পরিশোধন করে পাঠানো হবে কাঞ্চনতলা, কাহারপাড়া ও পুর-অফিস সংলগ্ন তিনটি এক লক্ষ গ্যালনের জলাধারে। সেখান থেকে শহরের ১৯টি ওয়ার্ডে যাবে আর্সেনিক-মুক্ত জল। জনপ্রতি দৈনিক ১৩৫ লিটার করে জল পাবেন পুরবাসী।
তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত ধুলিয়ান পুরসভার উপ-পুরপ্রধান দিলীপ সরকারের দাবি, “জলপ্রকল্পের প্রায় ৬০ শতাংশ কাজই হয়ে গিয়েছে। পাইপ লাইনও বসানো হয়েছে।”
শহরে জলসঙ্কট কাটাতে নলকূপ বসানোর কাজ চলছে বলেও দাবি করেছেন উপপুরপ্রধান। তাঁর কথায়, “পাইপ লাইনের জল যেখানে যায়নি সেখানে প্রতিটি ওয়ার্ডেই গড়ে ১২টি করে নলকূপ কাজ করছে।” তিনি আরও বলেন, “অভিযোগ এসেছে অনেকেই বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে সরাসরি পাইপ লাইন থেকে জলাধারে জল তুলে নিচ্ছেন। ফলে পাশের বাড়ি ও রাস্তায় বসানো ট্যাপে জল পাচ্ছেন না অন্যরা। ইতিমধ্যেই কয়েকজনকে পুরসভা থেকে নোটিস পাঠানো হয়েছে মোটর খুলে ফেলতে। যারা তারপরেও অবৈধ ভাবে জল নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy