হাতে আর সময় নেই। দর্শক টেনে প্রতিপক্ষকে কাবু করতে পুজো উদ্যোক্তাদের ‘যুদ্ধের প্রস্তুতি’ এখন তুঙ্গে। কারও বিশ লাখ বাজেট, তো কারও ১০ লাখ। বাজেটের বহর যার যেমনই হোক, বহরমপুর শহরের ছোট, মাঝারি, অথবা বড় মাপের পুজো কমিটির কর্তারা ব্যস্ততার নিরিখে এখন আর কেউ কারও থেকে এক ইঞ্চিও পিছিয়ে নেই। ব্যস্ততায় ও মেজাজে শহরের এক একটা এলাকার পুজো কমিটি যেন এক একটা মনসবদার। তার মধ্যে আক্ষেপও আছে! বহরমপুর শহরের উত্তরপ্রান্তের খাগড়া এলাকার এক পুজো কমিটির কর্তা শহরের দক্ষিণ প্রান্তের গোরাবাজার এলাকার ‘অজানা সঙ্ঘ’-এর মণ্ডপে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ করেন, “খাগড়া, গোরাবাজার, বা সৈয়দাবাদ এলাকায় আর আগের মতো জমকালে পুজো কই! সবই কেড়ে নিয়েছে বিষ্ণুপুর-মধুপুর।”
শহরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের বিষ্ণপুর এলাকায় কয়েকশো গজ তফাতে পরস্পরকে টেক্কা দেওয়ার জেদে মাটি কামড়ে লড়ছে ‘অনামি’ ও ‘আমরা ক’জন’। ধানগাছের কচি চারা দিয়ে তৈরি করা ‘আমরা ক’জন ক্লাব’-এর মৃন্ময়ী মণ্ডপের ভিতরে রয়েছে ডাকের সাজের সাবেকি গড়নের সপরিবার দেবী দুর্গা। মণ্ডপের দু’ পাশের পৃথক দু’টি মণ্ডপের একটিতে আলোছায়ার খেলায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কেদারনাথের বিধ্বংসী বন্যা। বর্ষা মাথায় করে দেবীকে কাঁধে নিয়ে কীভাবে ক্লাবের ছেলেরা চলেছে মণ্ডপের দিকে সেই দৃশ্যও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পাশের আর একটি মণ্ডপে। ওই তিনটি মণ্ডপের সামনে গড়ে তোলা হয়েছে ৫০ ফুট উঁচু ‘মুম্বই গেট’। তার সামনে পুজোর তিন দিন দেখানো হবে পুতুল নাচ।
প্রতিদ্বন্দ্বীর ওই আয়োজন ফুৎকারে উড়িয়ে দেন ‘অনামি ক্লাব’-এর কর্মকর্তা উজ্জ্বল সাহা। তিনি বলেন, “ধানের চারা দিয়ে মণ্ডপ করার মধ্যে কোনও নতুনত্ব নেই। ওটা তো ব্যাক ডেটেট।” আস্ফালনের নেপথ্যে রয়েছে প্যাগোডা আদলে করগেটেড সিট দিয়ে গড়া ৬০ ফুট বাই ৬৫ ফুটের দৈত্যাকৃতির মণ্ডপ। মণ্ডপের ভিতরের দেওয়ালে রয়েছে করগেটেড সিট দিয়ে গড়া মণীষীদের প্রতিকৃতি ও নানান অলঙ্করণ। সুসজ্জিত সেই মণ্ডপে রয়েছে ডাকের সাজের সাবেকি প্রতিমা। সেখান থেকে ৫০০ মিটর দূরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে তুমুল ব্যস্ততায় চলছে ‘বাবুলবোনা ইয়ংস কর্নার’-এর মণ্ডপ তৈরি কাজ। এঁদের কাছে প্যাগোডা আদলের মণ্ডপ কিন্তু সেই ‘ব্যাক ডেটেড’। বাবুলবোনার পুজো কর্তা সৌম্যদীপ সরকারের দাবি, “আমরা কোনও কিছুর নকল করছি না। শিল্পীর কল্পনায় ভেসে ওঠা কাল্পনিক মন্দির গড়ছি আমরা। ৫০ ফুট উঁচু সেই মন্দির তৈরি হচ্ছে মাদুর দিয়ে। সাবেকি বাংলা গড়নের মায়ের চোখ হবে টানা টানা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy