Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পারোদেবীর পর লড়াইয়ের মুখ কৃষ্ণগঞ্জের রিঙ্কু মণ্ডল

নদিয়া জেলা প্রশাসনের নিজস্ব প্রকল্প ‘সবার শৌচাগার’ প্রশংসিত হয়েছে কেন্দ্র সরকারের কাছে। আর সেই সাফল্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে জেলা প্রশাসনের ‘সাকসেস স্টোরি বুকলেট’-এ স্থান পাচ্ছেন রিঙ্কু মণ্ডল। পাটনার পারোদেবীর কথা আগেই জেনেছে সারা ভারতবর্ষ। বাড়িতে শৌচাগার না থাকায় স্বামীর ঘর ছেড়েছিলেন তিনি। লড়াইয়ের একটা নতুন দিশা দেখা গিয়েছিল।

নিজের বাড়িতে রিঙ্কুদেবী। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

নিজের বাড়িতে রিঙ্কুদেবী। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:১৫
Share: Save:

নদিয়া জেলা প্রশাসনের নিজস্ব প্রকল্প ‘সবার শৌচাগার’ প্রশংসিত হয়েছে কেন্দ্র সরকারের কাছে। আর সেই সাফল্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে জেলা প্রশাসনের ‘সাকসেস স্টোরি বুকলেট’-এ স্থান পাচ্ছেন রিঙ্কু মণ্ডল।

পাটনার পারোদেবীর কথা আগেই জেনেছে সারা ভারতবর্ষ। বাড়িতে শৌচাগার না থাকায় স্বামীর ঘর ছেড়েছিলেন তিনি। লড়াইয়ের একটা নতুন দিশা দেখা গিয়েছিল।

নিজের অজান্তে সেই লড়াইয়ে সামিল হয়ে গিয়েছেন নদিয়ার সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এলাকার আর এক গৃহবধূও। তবে এক পা এগিয়ে তিনি গিয়েছেন উচ্চ আদালত পর্যন্ত। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই তাঁর বাড়িতে শৌচাগার তৈরি হয়েছে সরকারি প্রকল্পের আওতায়।

রিঙ্কুদেবীর এই লড়াইকে সম্মান জানিয়ে পুস্তিকায় তাঁকেই সাফল্যের মুখ হিসাবে তুলে আনা হয়েছে। সম্প্রতি গুজরাতের আহমেদাবাদে একশো দিনের প্রকল্পের উপর একটি সর্বভারতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সফল জেলা হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিত্ব করে নদিয়া জেলাও। জেলাশাসক পি বি সেলিম ওই কর্মশালাতেই তুলে ধরেন রিঙ্কুদেবীর কথা। জেলাশাসক বলেন, “গোটা দেশের সামনে আমাদের সাফল্যের মুখ রিঙ্কুদেবী। তাঁর ভূমিকাকে গোটা দেশের সামনে তুলে ধরছি। আমাদের পুস্তিকাতে ছাপানো হয়েছে ওঁর ছবি।”

১৫ বছর আগে কৃষ্ণগঞ্জের শ্যামনগরের বাসিন্দা রিঙ্কুদেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় জয়ঘাটা মণ্ডলপাড়ার জয়গোবিন্দ মণ্ডলের। তাঁদের এক ছেলেও রয়েছে। বছর চারেক আগে মাঠপাড়া এলাকায় নতুন বাড়ি তৈরি করলেও শৌচাগার তৈরি করেননি পেশায় রাজমিস্ত্রি জয়গোবিন্দবাবু। আর তাতেই যত বিপত্তি। সময়-অসময়ে বাড়ির বৌ মাঠে-ঘাটে গেলেই পরিবারে জেগে উঠে সন্দেহের কাঁটা। সে অশান্তি এতদূর গড়ায় যে রিঙ্কুদেবীর বাপের বাড়ি গিয়ে বধূ নির্যাতনের মামলা করেন স্বামী, ভাসুর এবং জা-য়ের বিরুদ্ধে।

আদালতে দাঁড়িয়ে রিঙ্কুদেবী স্বীকারোক্তি দেন, “শৌচাগার না থাকাতেই যত অশান্তি। বাড়িতে একটা শৌচাগার থাকলেই আমি সংসার করতে রাজি।” সে দিনই কৃষ্ণগঞ্জ থানার পুলিশকে বিচারক নির্দেশ দেন সমস্যার সমাধান করতে।

এজলাস থেকে বেরিয়েই দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক স্বরূপ পাল ফোন করেন জয়ঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে। সিপিএম-র প্রধান বিশ্বজিত্‌ বিশ্বাস বলেন, “কৃষ্ণগঞ্জ থানার পুলিশ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই পরিবারকে দ্রুত একটি শৌচাগার নির্মাণ করে দিতে বলেন আধিকারিক। সেই মতো কাজও হয়েছে।”

পুলিশের উদ্যোগে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় শৌচাগার নির্মাণ করে দেয় গ্রাম পঞ্চায়েত। নিজের ঘরে ফেরেন বধূ। হাসি মুখে জানান, ‘ভাল আছি।” খুশি জয়গোবিন্দবাবুও। তিনি বলেন, “টাকার অভাবে শৌচাগার বানাতে পারছিলাম না। সরকার বানিয়ে দিল, এখন সব ঠিক আছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE