Advertisement
০৩ মে ২০২৪

প্রেমিককে জেরা করে মিলল দেহ

প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল বছর সতেরোর কিশোরী। তারপর তার আর কোনও খোঁজ মেলেনি। রবিবার সেই প্রেমিককে নবদ্বীপ স্টেশন থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরা করে কুড়ি দিনের মাথায় পূর্বস্থলী থেকে মিলল ওই কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত দেহ। ধুবুলিয়ার বাসিন্দা ধৃত প্রশান্ত মণ্ডলকে সোমবার কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠান।

ধৃত প্রশান্ত মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র।

ধৃত প্রশান্ত মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধুবুলিয়া শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১৫
Share: Save:

প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল বছর সতেরোর কিশোরী। তারপর তার আর কোনও খোঁজ মেলেনি। রবিবার সেই প্রেমিককে নবদ্বীপ স্টেশন থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরা করে কুড়ি দিনের মাথায় পূর্বস্থলী থেকে মিলল ওই কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত দেহ। ধুবুলিয়ার বাসিন্দা ধৃত প্রশান্ত মণ্ডলকে সোমবার কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠান।

পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাত দশটা নাগাদ বর্ধমানের পূর্বস্থলীর যোগেশ্বরপুর ঘাটে ভাগীরথীর পাড় থেকে ধুবুলিয়ার বাসিন্দা ওই কিশোরীর দেহ উদ্ধার করা হয়। তার বুক থেকে পেট পর্যন্ত কাটা ছিল। সোমবার ওই কিশোরীর মা মেয়ের দেহ শনাক্ত করেন। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের কারণ এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। কী ভাবে খুন করা হয়েছে তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে তবেই বোঝা যাবে। নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, ‘‘ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই খুনের ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না সেটাও দেখা হচ্ছে। কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে না দিয়ে সব দিকই আমরা খতিয়ে দেখছি।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় বেলপুকুর হাই স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক প্রশান্তের সঙ্গে ওই কিশোরীর সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। সেই সম্পর্কের কথা দুই পরিবারের লোকজনও জানতেন। তাঁদের বিয়ের কথাবার্তাও চলছিল। কিন্তু প্রশান্তর পরিবার থেকে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা পণ চাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই কিশোরীর বাবার সম্বল বলতে ভিটেবাড়ি আর বিঘে দু’য়েক জমি। একলপ্তে ওই বিপুল অঙ্কের টাকা দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। এই নিয়ে দুই পরিবারে চাপান-উতোর চলছিল।

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১ মার্চ প্রশান্তের সঙ্গে দেখা করবে বলে সাইকেল নিয়ে ওই কিশোরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর থেকে তার কোনও খোঁজ মেলেনি। ওই দিনই কিশোরীর মায়ের মোবাইলে প্রশান্তের মোবাইল নম্বর থেকে একটি মেসেজ আসে‘আমরা ভাল আছি। একটু দূরের দিকে যাচ্ছি। বাড়ি ফিরতে দেরি হবে। চিন্তা করবেন না।’ কিন্তু মেয়ে বাড়ি না ফেরায় চিন্তায় পড়ে যান বাড়ির লোকজন। ওই কিশোরীর পরিবারের দাবি, প্রশান্তের মোবাইলে বহুবার ফোন করেও আর যোগাযোগ করা যায়নি। বাড়ির লোকজন দিন চারেক নানা জায়গায় ওই কিশোরীর খোঁজ করে না পেয়ে ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় ধুবুলিয়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। ওই কিশোরীর মায়ের অভিযোগ, “থানায় ডায়েরি করার পরও পুলিশ নড়েচড়ে বসেনি। পরে আমরা একাধিকবার বার এফআইআর করার জন্য থানায় গিয়েছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের মেজাজ দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে।’’ অবশেষে ২৫ তারিখ রাতে পুলিশ থানায় অভিযোগ জমা নেয়। রবিবার নবদ্বীপ স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রশান্তকে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরার সময় প্রশান্ত কবুল করে যে সেই ওই কিশোরীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করে ভাগীরথীতে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু ঠিক কোন জায়গায় সে এমন কাণ্ড করেছে সে ব্যাপারে পুলিশকে প্রশান্ত নানা ভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। ধুবুলিয়া থানার পুলিশ ওই কিশোরীর বিবরণ দিয়ে অন্য থানাতে খবর পাঠায়।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই কিশোরীকে যে ভাবে খুন করা হয়েছে তা কারও একার পক্ষে সম্ভব নয়। একাধিক ব্যক্তি ঠান্ডা মাথায় এমন কাজ করেছে। যদিও প্রশান্ত জেরার মুখে পুলিশকে জানিয়েছে যে, ওই কিশোরী সম্প্রতি অন্য এক যুবকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল। তাই সে একাই ওই কিশোরীকে খুন করেছে। কিন্তু পুলিশ প্রশান্তের কথার মধ্যে তেমন সত্যতা খুঁজে পাচ্ছে না। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, “নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত প্রশান্ত ওই কিশোরীর বাড়িতে ছিল। সেখানে সে গল্পগুজব করেছে। রাতের খাবারও খেয়েছে। অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে এটা কি করে সম্ভব?” তাঁর কথায়, “ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু তথ্যও পাওয়া গিয়েছে। আশা করা যায় খুব শীঘ্রই এই রহস্যের কিনারা করা যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

prashanta mondal dhubulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE