Advertisement
E-Paper

পুলিশের উপরেই রাগ, দুষ্কৃতীদের বাড়ি ভাঙচুর

পুলিশের সঙ্গে ওঠাবসা। পুলিশের ছত্রছায়াতেই বেড়ে ওঠা। শান্তিপুরে প্রৌঢ়া খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সমাজবিরোধীদের সঙ্গে পুলিশি ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে সরব হলেন এলাকাবাসী। পুলিশের উপরে অনাস্থা এতটাই যে পরদিন, বুধবার সকালে স্থানীয় সমাজবিরোধীদের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন এলাকার এক দল যুবক।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০০:২০
আবু মণ্ডলের ভাঙা বাড়িতে বৃদ্ধা মা মনা বেওয়া। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

আবু মণ্ডলের ভাঙা বাড়িতে বৃদ্ধা মা মনা বেওয়া। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

পুলিশের সঙ্গে ওঠাবসা। পুলিশের ছত্রছায়াতেই বেড়ে ওঠা। শান্তিপুরে প্রৌঢ়া খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সমাজবিরোধীদের সঙ্গে পুলিশি ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে সরব হলেন এলাকাবাসী। পুলিশের উপরে অনাস্থা এতটাই যে পরদিন, বুধবার সকালে স্থানীয় সমাজবিরোধীদের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন এলাকার এক দল যুবক।

নদিয়ার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘সমাজবিরোধীদের সঙ্গে পুলিশের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখব। প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশ ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না কেন, তার উত্তর যদিও মেলেনি।

মঙ্গলবার রাতে দুষ্কৃতীর ছোড়া গুলিতে মৃত্যু হয় নদিয়ার শান্তিপুরের মানিকনগর বসার বাগান এলাকার বাসিন্দা মোসে বেওয়ার (৫০)। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। পুলিশের গাড়ি লক্ষ করে ইট ছুড়তে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। সেই ক্ষোভ কোনও রকমে সামাল দিয়ে শান্তিপুর থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। বুধবার সকালে নিহতের আত্মীয় গাজি রহমান মণ্ডল পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, ‘আবু ও আমিরুলের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরেই এই খুন বলে তিনি শুনেছেন।’

কে এই আবু আর আমিরুল?

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর ধরে মানিকনগর এলাকায় সমাজবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত এই দু’জন শান্তিপুর থানায় ডোমের কাজ করত আগে। পাশাপাশি চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছে বারবার। যত দিন গিয়েছে, ততই অপরাধের তালিকা বেড়েছে। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে সখ্য কমেনি। বছর তিনেক আগে আবুর মেয়ের বিয়েতে দেখা গিয়েছিল শান্তিপুর থানার একাধিক পুলিশকর্তাকে। আবুর ভাইপোর বিয়েতেও পুলিশের লোকজন ছিল বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। পুলিশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আর প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরতে দেখে এদের ঘাঁটাতে কেউ সাহস পেত না। যখন যে দল ক্ষমতায়, তখন তারই ছায়ায় চলে যেত এরা।

সম্প্রতি আমবাগান আর জমি বিক্রির টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে আবু আর আমিরুলের গণ্ডগোল হয়। দলে ভাঙন ধরে। দু’জনে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে বিবাদ চরম আকার নেয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এদিন আবুকে মারার জন্যই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ছিল তার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর ছেলেরা। রাত প্রায় পৌনে ন’টার সময় আবু সাইকেলে চেপে বাড়ি ফিরছিল। তার উদ্দেশে গুলি ছুড়তে গিয়ে লাগে রাস্তার উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে থাকা মোসে বেওয়ার গায়ে। তিনি ছোট মেয়েকে নিয়ে পাশের এক আত্মীয় বাড়িতে টেলিভিশনে সিরিয়াল দেখতে গিয়েছিলেন। ছোট মেয়ে সরিফা খাতুনের কথায়, “একটা আলোর ফুলকি আর শব্দ। তারপরই আমাকে ছেড়ে মাটিতে পড়ে গেল মা। আর উঠল না। রাস্তার উল্টোদিকে কয়েকটা ছেলে দাঁড়িয়ে জটলা করছিল। সেখান থেকেই গুলিটা আসে।’’

এলাকার লোকজনও সমাজবিরোধীদের ঘোরাঘুরি করতে দেখেছিল। বুধবার সকাল থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে কার্যত অনাস্থা প্রকাশ করে এলাকার প্রায় শ’খানেক যুবক স্থানীয় দুষ্কৃতীদের বাড়ি ভাঙচুর শুরু করেন। ওই সব যুবকদের কথায়, “চোখের সামনে এদের পুলিশের ছত্রছায়ায় বাড়তে দেখেছি। দিনের পর দিন এরা এলাকায় চুরি-ছিনতাই-সহ নানা অপরাধমূলক কাজ করে যাওয়ার পরও পুলিশ নীরব থেকেছে। এদের এই বাড়বাড়ন্তের জন্য প্রশাসন দায়ী। এদের তৈরি করছে পুলিশ।” আর এক যুবক বলেন, “পুলিশ যখন এদের কিছু বলবে না তখন আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে। আর কিছু পারি আর না পারি এই সমাজবিরোধীদের এলাকায় থাকতে দেব না।” পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসতে-ফুঁসতে এদিন আবু-সহ স্থানীয় পাঁচ দুষ্কৃতীর বাড়ি ভেঙে দেন ওই যুবকেরা। জনতার সেই রোষের সামনে কার্যত অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ। এলাকার কাউন্সিলর তৃণমূলের মহম্মদ সাহাজাহান শেখকেও বলতে হয়েছে, ‘‘এদের অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াত এরা। দিনের পর দিন এরা নানান অপরাধমূলক কাজ করে গিয়েছে।” তাহলে আপনারা কেন ব্যবস্থা নেননি এতদিন? শান্তিপুর পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কাউন্সিলরের জবাব, ‘‘কে বলেছে পুলিশকে জানাইনি। একাধিকবার বলেছি। কোনও কাজ হয়নি। এরা যে পুলিশের ঘনিষ্ঠ।”

এ দিন জনরোষের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে যান আবুর বৌমা, নাতি-নাতনিরা। বাড়ির ভগ্নস্তুপের মধ্যে একা বসে থাকা আবুর মা মনা বেওয়া বলেন, “আমার ছেলে নির্দোষ। সে কাউকে খুন করেনি। বিশ্বাস না হয় তো থানার বাবুদের জিজ্ঞাসা করে দেখ। তারা আমার ছেলেকে ভাল করে চেনে। আমার নাতনির বিয়েতে থানার বাবুরা এসেছিল। আমার ছেলে বদমায়েশ হলে কী পুলিশ আসত?”

বৃদ্ধার বক্তব্য বুঝিয়ে দিচ্ছিল ছবিটা ঠিক কেমন।

susmit halder shantipur maniknagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy